প্রেমময় যীশুখৃষ্ট, 'মসিহ' ঈশা / অষ্টম পর্ব

প্রেমময় যীশুখৃষ্ট, 'মসিহ' ঈশা / অষ্টম পর্ব
(এক তথ্যসমৃদ্ধ ধারাবাহিক ধর্মীয় কাহিনী)
সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রভু যীশুর জন্ম-দিনের কথা :---
-----------------------------------------------
"বিবেচনা কর,
কুমারী মায়ের
সন্তান রয়েছে, এবং
রয়েছে একটি পুত্র,
এবং তারা তাঁকে
ইম্যানুয়েল বলে
ভাকবে,' যা কিনা
অনুবাদ করা
হয়েছে, ' ঈশ্বর
আমাদের সাথে
রয়েছেন।' "
ম্যাট্--- 1:23
রোমানের রাজার আদেশমত, লোকগণণার কাজের জন্য সব রোমানিয়ারা তাদের পূর্বপুরুষের এলাকায় জমায়েত হয়েছিল। ধীরে ধীরে যোষেফ-ও তার স্ত্রী মেরি, (ইসলাম মতে মরিয়ম) বেথলেহেম শহরে এসে উপস্থিত হলো।
এটা খুবই স্বাভাবিক যে, সব মানুষ যখন একটি স্থানে এসে উপস্থিত হবে, তখন স্থানাভাব দেখা দেওয়াটাই সম্ভব।
এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হলো না। যোষেফ কিছুতেই তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী-র জন্য কোনো উত্তম স্থানের যোগাড় করে উঠতে পারলো না।
কোথায় থাকবে এই অবস্থায় সারাটা রাত, এই চিন্তায় যখন যে কাতর, স্থান খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত, তখন হঠাৎ চোখে পড়ল এক আস্তাবল, যেখানে গবাদি পশুরা বিশ্রাম নিচ্ছে।
স্ত্রী মেরিকে সাথে নিয়ে খুবই কাতর স্বরে ওই আস্তাবলের মালিককে অনুনয়-বিনয় করে, সেদিনকার রাতের মতো আশ্রয় দান করার কথা জানাল জোসেফ।
আগুন্তুককে দেখে নয়, অন্তঃসত্ত্বা মেরিকে দেখে প্রাণে দয়া হলো , জোসেফকে বললে সেই আস্তাবলের মালিক : " আমার আস্তাবলে জায়গা নেই মোটে; খালি পশুদের খাবার খেতে দেওয়ার জায়গায় তোমরা যদি কষ্ট করে থাকতে পারো, তবে তোমরা ভেতরে এসো। "
ওদিকে মেরির শরীরের অবস্থাও তেমন সুবিধার ছিল না, প্রসব-যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছিল খুব। যে কোনো স্থানে ওই রাতটুকুর জন্য আশ্রয় পাওয়াটা খুব জরুরি ছিল। অবশেষে, ওই আস্তাবলের মধ্যে প্রবেশ করে, পশুদের খেতে দেবার জায়গার পাশে খড় বিছিয়ে মেরিকে শোবার জন্য ব্যবস্থা করে দিল।
ওই রাতেই, কিছুক্ষণের মধ্যেই মেরি এক শিশুর জন্ম দিল।
দিব্য-শিশু যীশু, ঈশ্বর-পুত্র যীশু --- ভাবীকালের ইমানুয়েল --- ইসলামের ঈশা , মরিয়ম-পুত্র ---- পৃথিবীর মাটিতে আবির্ভূত হলেন।
জন্মের পর, মেরি পশুদের খেতে দেবার জন্য যে পাত্র ছিল, সেখানেই শুইয়ে দিলেন নবজাতক-কে, জগতের ত্রাণকর্তাকে।
নিরুপায় জননী, তাঁর কাছে না ছিল কোনো বিছানা, না উন্নত বাসস্থানের আচ্ছাদন; মাটির পৃথিবীর জগদীশ্বরের আঁতুড়ঘর হলো আস্তাবল, শিশু-শয়নের স্থান হলো --- পশুর খাবারের পাত্র।
তার নাম রাখলেন: " যীশু" --- ঈশ্বরের দূত যেভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
* * *
অপরদিকে, সেইরাতেই, ময়দানে কিছু মেশ-পালক তাদের মেষেদের চড়াচ্ছিল; হঠাৎ-ই এক স্বর্গীয় দূত উজ্জ্বলবর্ণের আলোকচ্ছটায় উজ্জ্বল করে, তাদের সামনে উপস্থিত হলেন।
এই অভাবনীয় ও অলৌকিক ঘটনায় তারা ভীত -সন্ত্রস্ত হয়ে গেল। তাদেরকে তখন সেই স্বর্গের দূত বললেন, "তোমরা আমাকে দেখে ভীত হোয়ো না, কেনা, আমার কাছে, তোমাদের জন্য সুসংবাদ রয়েছে। সেই খ্রিষ্ট, প্রভুর জন্ম বৈথলেহেমে হয়েছে।
যাও, তোমরা শিশুটির অনুসন্ধান করো, আর তোমরা তাকে একটি কাপড়ে পেঁচানো আর পশুদের খাওয়ার পাত্রে শায়িত অবস্থায় দেখতে পাবে। "
অবাক হয়ে, মেষপালকেরা এই ঘটনার তাৎপর্য বিচার করতে লাগল; হঠাৎ-ই আকাশ ঈশ্বরের স্তুতিগানে মুখরিত হয়ে উঠল। আকাশে ঈশ্বরের স্বর্গ দূতের দ্বারা পরিপূর্ণ হল, আর তারা একক স্বরে বলে উঠলো : "ঈশ্বরের মহিমা স্বর্গলোকে হোক, তার অনুগ্রহ-প্রাপ্ত লোকেদের উপর পৃথিবীতে শান্তি হোক। "
ক্রমে, মেষপালকেরা অতি শীঘ্রই যীশু যেখানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সেখানে পৌছালো, আর ঈশ্বরের দূত যেভাবে বলেছিলেন, ঠিক সেই ভাবেই তাদের মহান প্রভুকে দেখতে পেল।
তারা ঈশ্বরের কাছে নতজানু হয়ে প্রণাম করে, তাঁর স্তুতি করতে আরম্ভ করল।
(ক্রমশঃ)



