ফিরে দেখা মাতলা নদীর ধারে ব্রিটিশ আমলের ক্যানিং হাউস

12 Sep 2022, 05:32 AM

ফিরে দেখা মাতলা নদীর ধারে ব্রিটিশ আমলের ক্যানিং হাউস

 

ড. কাঞ্চনকুমার ভৌমিক

 

ক্যানিংয়ের ঐতিহ্যে বড়লাট লর্ড ক্যানিং সাহেবের বাংলো। এ ঘরেই তিনি থাকতেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নদীপথে গোসাবা যাওয়ার পূর্বে ক্যানিং সাহেবের এই বাংলোয় রাত্রিবাসও করেন।

মাতলা নদীর তীরে অবস্থিত এই জায়গাটির আগে নাম ছিল মাতলাগঞ্জ। তৎকালীন ব্রিটিশরা নদী তীরবর্তী এই জায়গাটিকেই তাদের ব্যবসা বাণিজ্যর অন্যতম ক্ষেত্র হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন। পরে নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় ধীরে ধীরে এই জায়গা তার ব্যবসায়িক গুরুত্ব হারায়।

 

প্রসঙ্গত, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় লর্ড ক্যানিং ১৮৫৬ থেকে ১৮৬২ সাল পর্যন্ত ভারতের শেষ গভর্নর জেনারেল এবং ১৮৫৮ সালের ১ নভেম্বর থেকে ভারতে প্রথম ভাইসরয় হিসেবে কাজ শুরু করেন। বানিজ্যের কারণে এখানেই তৈরি হয় ‘পোর্ট ক্যানিং কোম্পানি’। তারা মাতলা নদীর ধারে তৈরি করা হয় অনেক কিছু। কিন্তু ১৮৬৭ সাল নাগাদ নদীর পথ পরিবর্তনে সে সব ভেঙে যায়। ক্যানিং সাহেবের প্রশাসনের সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের সূত্রপাত। লর্ড ক্যানিং বিদ্রোহটি দমন করেন এবং এই ঘটনার পর ১৮৫৮ সালে পার্লামেন্টারি আইন পাশ হয়। রানি ভিক্টোরিয়া প্রকাশ্য ঘোষণার মাধ্যমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারতের শাসনভার নিজের হাতে তুলে নেন।

 

সংরক্ষণের অভাবে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে উঠেছে এই স্থান। ক্যানিংয়ের এই বাসভবন ক্যানিং স্টেশন থেকে মিনিট পনেরো হাঁটাপথ। প্রাচীন ভবনটির অবস্থা খুবই জীর্ণ। দেওয়ালের বিভিন্ন অংশে ফাটল। বাড়ির তিনদিকে বিভিন্ন জায়গায় বটবৃক্ষ বাড়িয়ে চলেছে এই ফাটলের মাত্রা। উঁচু স্তম্ভগুলোর ইট খসে পড়ছে। বাড়ির দু’টি তল মিলিয়ে অন্তত পনেরোটি ঘর। কড়িকাঠের ছাদের উচ্চতা অন্তত ১৫ ফুট। ভূগর্ভেও একটি তল আছে। এক সময় সেটি ব্যবহৃত হত। তবে বহুকাল অব্যবহৃত  অবস্থাতেই পড়ে রয়েছে। বন্ধ করে রাখা হয়েছে একতলার বেশিরভাগ অংশই।

 

অধুনা এই বাংলোটি সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধীরে ধীরে প্রায় ধংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ভুতুড়ে বাড়ি হিসাবে পরিচিত এখন। শীতকালে মাঝে মাঝে স্থানীয়রা পিকনিক স্পট হিসাবেই ব্যবহার করেন এই স্থান। তবে দেখা মেলে না পর্যটকদের। এক সময় এই ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য দাবি উঠেছিল। প্রশাসনিক তৎপরতাও শুরু হয়েছিল। তবে এখনও তা বাস্তবায়িত হয়নি। তা হলে হয়তো রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করবে। কারণ, প্রায় ২০০ বছরের কাছাকাছি পুরনো ইতিহাসের ছোঁয়া পেতে নিশ্চয় পর্যটকরাও ভিড় জমাবেন।

তথ্যঋণ: ইন্টারনেট ও বিভিন্ন সমাজমাধ্যম

লেখক: কৃষি বিজ্ঞানী

Mailing List