দক্ষিণ ২৪ পরগনার বহড়ুর ৫০০ বছরের পুরোনো মন্দিরের জাগ্রত দেবী ময়দাকালীর মাহাত্ম্য সম্পর্কে জানুন!

দক্ষিণ ২৪ পরগনার বহড়ুর ৫০০ বছরের পুরোনো মন্দিরের জাগ্রত দেবী ময়দাকালীর মাহাত্ম্য সম্পর্কে জানুন!
আনফোল্ড বাংলা প্রতিবেদন: দক্ষিণ ২৪ পরগনার বহড়ুর ৫০০ বছরের পুরোনো মন্দিরের দেবী ময়দাকালী অত্যন্ত জাগ্রত। যাঁর কৃপায় মেলে দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি, পূরণ হয় দীর্ঘদিনের মনস্কামনা। পাশাপাশি, সন্তান না-থাকার দুঃখও ঘুচে যায় দেবীর কৃপায়। আর, এই সব কারণেই দূর-দূরান্ত থেকে দেবী ময়দাকালীর কৃপালাভের জন্য ভক্ত ও তাঁদের পরিবারের লোকজন ভিড় করেন এই মন্দিরে। শিয়ালদহ দক্ষিণের লক্ষ্মীকান্তপুর শাখার অন্যতম স্টেশন এই বহড়ু। স্টেশনে নেমে তিন কিলোমিটার গেলেই দেবী ময়দা কালীর মন্দির।
গ্রামের নাম ময়দা। সেই থেকে দেবীর নাম ময়দাকালী। তবে, অনেকে একে পাতালভেদী দক্ষিণকালীও বলে থাকেন। স্থানীয় বাসিন্দারা ছাড়াও দূর দূরান্ত থেকে এখানে ভক্তরা মায়ের কাছে আসেন। আর, সেই কারণেই প্রতি শনি ও মঙ্গলবার বহড়ুর পাতালকালী মন্দিরে ব্যাপক ভিড় হয়। এই বিপুল জনসমাগম বছরের বিভিন্ন সময় রূপ নেয় মেলার। বিশেষ করে ভাদ্রের তালনবমী, শ্রাবণের অম্বুবাচী, বৈশাখ ও মাঘের প্রথম দিনে মন্দিরে উত্সব হয়। পাশাপাশি জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমা ও শারদনবমীতেও বিশেষ পূজা আয়োজন হয়ে থাকে এই মন্দিরের প্রাঙ্গণে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, একটা সময় এই অঞ্চলে বাস করত ময় দানব। রামায়ণের রাক্ষসরাজ রাবণ। তাঁর শ্বশুর ছিলেন ময় দানব। তিনি ছিলেন ব্রহ্মার বরপ্রাপ্ত স্থপতিও। তাঁর থেকে এই গ্রামের নাম ময়দা। ৫০০ বছর আগে এই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যেত ভাগীরথী। তার পাড়ে এই ময়দা গ্রাম। যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্যর জমানায় ময়দা গ্রাম ছিল সমৃদ্ধ বন্দর। যেখানকার মন্দিরে চারকোণা গহ্বরে বেদীর ওপর দেবীর প্রতীক হিসেবে রয়েছে এক সিঁদুরে রাঙানো শিলা। যার ওপর ত্রিনয়ন বসিয়ে দক্ষিণাকালী রূপে নিত্যপূজা হয়। ভক্তদের দাবি, এই শিলা পাতাল থেকে উঠেছে, স্বয়ম্ভূ। তাই দেবীর নাম 'পাতালকালী'ও।
দেবীর শিলারূপী অঙ্গে রয়েছে অশোক চক্র। মন্দিরের পূর্বদিকে রয়েছে প্রাচীন দিঘি কালীকুণ্ড। যেখানে স্নান করলে মৃতবত্সা মহিলারও সন্তান রক্ষা পায় বলেই দাবি ভক্তদের। দেবীর জাগ্রত মহিমা দেখে বড়িষার সাবর্ণ রায়চৌধুরীরা ১১৭৬ বঙ্গাব্দে এখানে মন্দির বানিয়ে দেন। রাঢ়বঙ্গের বন্দ্যোপাধ্যায়দের মন্দিরের পুরোহিত ও সেবায়েত নিযুক্ত করেন। আজও বংশপরম্পরায় বন্দ্যোপাধ্যায়রাই মন্দিরের দায়িত্বে আছেন।


