লক্ষাধিক হাঁস বলি পুরুলিয়ায়, মনসা পুজোর রীতি মেনে উৎসবে মাতলেন সবাই

লক্ষাধিক হাঁস বলি পুরুলিয়ায়, মনসা পুজোর রীতি মেনে উৎসবে মাতলেন সবাই
18 Aug 2022, 06:57 PM

লক্ষাধিক হাঁস বলি পুরুলিয়ায়, মনসা পুজোর রীতি মেনে উৎসবে মাতলেন সবাই

 

আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, পুরুলিয়া

 

মনসাপুজো জেলার বড় পুজোপার্বনের মধ্যে অন্যতম। মনসা দেবীর পুজো তাই পুরুলিয়ায় সর্বজনীন হয়ে গিয়েছে। এই পুজোর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হাঁস বলি দেওয়া। জেলার প্রায় সকল বাড়িতেই মনসাপুজোয় হাঁস বলি দেওয়ার রীতি আছে। আর সেই হাঁসের যোগান দিতে মাস খানেক ধরে ঝাঁপি বন্দী করে হাঁস এসেছে পুরুলিয়ার পাশ্ববর্তী জেলা বর্ধমান মেদিনীপুর, বীরভূম এমনকি পাশ্ববর্তী রাজ্য ঝাড়খণ্ড থেকে। মঙ্গলবার ছিল এই পুজোর বার।  বুধবার ছিল পুজো। আর আজ বৃহস্পতিবার এই পুজোর পান্না বা শেষ দিন।

জেলায় মাস খানেক আগে থেকেই এই পুজোর জন্য হাঁস বিক্রি শুরু হয়েছিল। তবে বুধবার উপোসের/পুজোর দিন ছিল হাঁস বিক্রির সব থেকে বেশি বাজার। এই দুদিন রাস্তার ধারে,পাড়ায় পাড়ায়,বাজারে বাজারে ঝাঁপি বন্দী করে হাঁস বিক্রি করতে দেখা গিয়েছে। এ বছর এক একটি হাঁস বিক্রি হয়েছে 400থেকে 500টাকা দামে।অনেকের মতে, মনসাপুজোর আগের দিন অর্থাৎ বারের দিনই পুরুলিয়ার শহরের বাজার গুলি থেকেই এক লক্ষ হাঁস বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন প্রান্তেও হাঁস বিক্রি হয়েছে ব্যাপক হারে। তবে বাজারে দেশি পাতিহাঁসের চাহিদাই বেশি ছিল। যার বেশির ভাগই আসে গ্রামাঞ্চল থেকে। বাকিটা আসে বাইরের জেলাগুলির বিভিন্ন খামার থেকে।

পুরুলিয়া শহরের হাঁস বিক্রেতা রেজ্জাক আনসারির কথায়, আগে বর্ধমান মেদিনীপুর ও বীরভূম থেকে নিয়ে আসা হাঁসের বাজার ভালো ছিল না। এখন চালানি (বহিরাগত) হাঁস ভালো বিক্রি হচ্ছে না। দেশি হাঁসের চাহিদা ভালো হলেও তা বাজারে যথেষ্ট পরিমাণে আসছে না, ফলে ক্রেতারা বাধ্য হয়েই চালানি হাঁস কিনছেন মনসা পুজোর জন্য। মনসা পুজোর বারের দিন হাঁসের দাম 400থেকে 500টাকার মধ্যে থাকলেও পুজোর দিন সেই দাম আরো বেড়ে গিয়েছিল বলে ক্রেতাদের দাবি।

শ্রাবণ সংক্রান্তিতে পুরুলিয়ায় মনসাপুজো।এদিন পুরুলিয়ার প্রায় সব বাড়িতেই হাঁস বলি দেওয়া হয়। জঙ্গল-পাহাড় ঘেরা পুরুলিয়ায় সাপের উপদ্রব বরাবরই বেশি। সাপের হাত থেকে বাঁচতে মনসা দেবীর পুজো তাই এখানে সর্বজনীন হয়ে গিয়েছে। মনসা পুজোয় সাধারণত ব্রাহ্মণ পুরোহিত লাগে না। জেলে, বেদিয়া, লোহার, ভুঁইয়া, বাউরি, বাগদি ইত্যাদি জনেরা নিজেরাই পুজো করেন ও বলি দেন। পুরুলিয়া শহরের বাজারগুলি ছাড়াও রঘুনাথপুর, কাশীপুর, বলরামপুর, মানবাজার,

ঝালদা সমস্ত জায়গাতেই হাঁস বিক্রি ছিল চোখে পড়ার মত। বলা যেতে পারে লাইন দিয়ে  ক্রেতারা হাঁস কিনেছে জেলার বেশ কয়েকটি বাজারে।

এদিকে জেলার রঘুনাথপুর 2 ব্লকের কৃষি দফতরের উদ্যেগে ব্লকের উকা গ্রামে গড়ে উঠেছে অন্নপূর্ণা ফার্ম। ঐ ফার্মে ঘরোয়া কায়দায় নিজেদের তৈরি মেশিনের মাধ্যমে হাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে সেই বাচ্চা বড় করে এই মনসা পুজোয় অনেকটাই এবার হাঁসের যোগান দিয়েছে এই ফার্ম।

পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেছেন, মুরগি পালনের মতো হাঁস পালনও উপজীবিকা হতে পারে। গ্রামে গ্রামে স্বনির্ভর দলগুলি হাঁস পালন করলে মনসা পুজোর সময় জেলার বাইরে থেকে হাঁস আনতে হবে না। তিনি বলেন শুধু মাত্র মনসা পুজোয় বলি দেওয়ার জন্য নয়,হাঁস পালন করা যেতে পারে ডিম উৎপাদনের জন্যও।

Mailing List