বিলুপ্তির পথে কৃষ্ণগঞ্জের হোলবোল গান! সে গানের মেঠো সুর কী আবার ফিরে পাবেন মানুষ

বিলুপ্তির পথে কৃষ্ণগঞ্জের হোলবোল গান! সে গানের মেঠো সুর কী আবার ফিরে পাবেন মানুষ
কুহেলি দেবনাথ, কৃষ্ণগঞ্জ
‘যে দেবে কাটা কাটা তার হবে সাত বেটা’
‘যে দেবে ফালি ফালি তার হবে হাত খালি’
এগুলো গানের লাইন। যাকে বলা হয় হলুই গান বা হোলবোল গান। বাংলার লোক সমাজে হোলবোল একটি প্রাচীন লোক গান নামে পরিচিত। এই গান প্রথম শুরু করেন নদীয়ার কৃষ্ণগঞ্জের কৃষ্ণপুরের অজিত ঘোষ। আগেকার দিনে রাখাল বালকেরা মাঠে গরু চরাতে যেত। গরু চরানোর পাশাপাশি তারা বিভিন্ন রকমের গান বানাতো। সন্ধ্যায় গরু নিয়ে বাড়ি ফিরে তাদের গোয়ালে উঠিয়ে দিয়ে সেইসব বালকেরা ও আশেপাশের লোকজন খোল করতাল ও খঞ্জনী নিয়ে বেরিয়ে পড়তো। বাড়ি-বাড়ি গান শুনিয়ে বেড়াত।
আর গান শুনে মুগ্ধ হয়ে গ্রামের মানুষজন দিতেন উপহার। সে উপহারের মধ্যে ছিল থেকে চাল, ডাল, আলু, তরিতরকারি, তেল, লবণ, ইত্যাদি। অর্থাৎ রান্না করার যাবতীয় উপাদান। এটি সাধারণত পৌষ মাসের ভোরে করতো তারা। এবং এই চাল ডাল নিয়ে মাঘ মাসের প্রথম দিকে গ্রামের মাঠের মধ্যে বটগাছের নিচে গিয়ে তারা সবাই বনভোজন করত। এবং গ্রামের সমস্ত লোক সেখানে খাওয়া-দাওয়া করতো। কিন্তু যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে আজ যেন এই লোকসংস্কৃতিতে টান পড়েছে। এখন আর নতুন প্রজন্ম এই সব গানের দিকে আগ্রহ দেখায় না। ফলে অবুলপ্তির পথে হোলবোল গান। যদিও কৃষ্ণগঞ্জের কৃষ্ণপুরের গ্রামের কিছু যুবক এখনও এই লোকসংস্কৃতিকে বজায় রেখে চলেছেন অবশ্য৷ প্রথা মেনে আজও অজিত বাবুর বাড়িতে গিয়ে প্রথম গান গেয়ে সূচনা করেন এই হোল বোল গানের।
কালের নিয়মে অবশ্য এখন গানের বদলও ঘটেছে। আগে গানের ধরণ ছিল তৎকালীন সময়ের গ্রামের পরিবেশের নিরিখে। যেমন, ‘যে দেবে কাটা কাটা তার হবে সাত বেটা’,। আসলে মানুষ তখন পুত্রসন্তান বেশি কামনা করতেন। ফলে আশীর্বাদ পেয়ে পুত্রসন্তানের আশায় দান করতেন বেশি। আর ছিল, "যে দেবে মুঠো মুঠো তার হবে হাত ঠুটো", "যে দেবে ফালি ফালি তার হবে হাত খালি"। অর্থাৎ দানী হওয়ার কথা বলা হতয় আর এখন তা বদলে গিয়েছে অনেকটাই। এসে গিয়েছে কৃষ্ণকথা, রাধার কথা। সমাজ সচেতনতার কথা। তারসাথে কখনও সখনও ঢুকে পড়ছে বঙ্গ রাজনীতির কথাও। কারণ, এখন যে কাঁচাবাদমও বঙ্গ রাজনীতির প্রচারের অঙ্গ।
আবার এখন গানে ঢুকেছে করোনার কথা। করোনা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নিয়েছে রাখল বালকেরা। পাশাপাশি যেহেতু তারা করোনা বিধি মেনে লোকসংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার লক্ষ্যে কয়েকজন মিলে বনভোজনও করবেন বলে জানালেন শিল্পী নিত্য গোপাল ঘোষ। পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ও লোকসংস্কৃতির দিকে নজর দিয়ে তাকে রক্ষা করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা৷ বিশিষ্ট সাহিত্যিক তাপস কুমার মিএ তাঁদের এহেন প্রয়াসকে আমরা কুর্নিশ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, লোকসংস্কৃতিকে ভালোবাসে তার অতীত ইতিহাস চিনিয়ে দেওয়ার মতো চেষ্টা অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ।



