মমি তৈরির কাহিনী ও পদ্ধতি জানেন, মমি থেকেও জানা যায় একজন কতটা সুন্দরী ছিলেন বা মেধাবী কিম্বা তাঁকে খুন করা হয়েছিল কিনা

মমি তৈরির কাহিনী ও পদ্ধতি জানেন, মমি থেকেও জানা যায় একজন কতটা সুন্দরী ছিলেন বা মেধাবী কিম্বা তাঁকে খুন করা হয়েছিল কিনা
31 Oct 2022, 11:10 AM

মমি তৈরির কাহিনী ও পদ্ধতি জানেন, মমি থেকেও জানা যায় একজন কতটা সুন্দরী ছিলেন বা মেধাবী কিম্বা তাঁকে খুন করা হয়েছিল কিনা

দীপান্বিতা ঘোষ

 

 

মমি কি?

মমি হল কয়েক হাজার বছরের পুরানো মৃতদেহ। মমি হোলো এমন মৃতদেহ যা মানুষ তার মানবিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ঐ মৃতদেহটিকে পচে যাওয়া, ধ্বংস হওয়া বা ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা দ্বারা মৃতদেহ থেকে সমস্ত আর্দ্রতা বের করে দিয়ে মৃতদেহটিকে শুকিয়ে সংরক্ষণের উপযোগী করে তোলা হয়। এক কথায় মমি হল অপচনশীল মৃতদেহ।

       

মমি শব্দের উৎপত্তি:

মমি শব্দের উৎপত্তি ঘটেছে ল্যাটিন "মুমিয়া" থেকে এবং পারসিয়ান শব্দ "মুম" থেকে। যার অর্থ "যত্ন সহকারে সংরক্ষিত শবদেহ"।

 

মমির ধরণ:

মমি সাধারণত দুই ধরনের হয়। এনথ্রোপজেনিক এবং স্পন্টেনিয়াস মমি। এনথ্রোপজেনিক মমি বলতে সেই মমি গুলোকে বোঝায় যেগুলো সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হতো, সাধারণত ধর্মীয় কারণে এগুলো বানানো হতো । আর স্পন্টেনিয়াস মমি তৈরি হত প্রাকৃতিকভাবে প্রচণ্ড গরম বা তীব্র ঠান্ডা বা বদ্ধ জলাভূমিতে।

 

উৎসস্থল:

অধিকাংশ গবেষক এর মতে মমির উৎপত্তিস্থল হল প্রাচীন মিশর। তবে প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতারও এক হাজার বছর পূর্বে উত্তর চিলি এবং দক্ষিণ পেরুর চিনচেরাতে মমি তৈরী হয়েছে। ইনকা, অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসী প্রাচীন ইউরোপীয়ান সভ্যতা সহ আরো অনেক সভ্যতায় মৃতদেহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং দেহকে সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে হাজার হাজার বছর ধরে মমিকরণ প্রথা প্রচলিত ছিল।

 

আফ্রিকা–

মিশর ছাড়া লিবিয়াতেও মমির সন্ধান পাওয়া যায়। দক্ষিণ আফ্রিকাতে বাভিয়ান্সক্লুফ বনাঞ্চলে 1999 সালে ডক্টর জোহান বিনিম্যান একটি মমির সন্ধান পান। যার বয়স প্রায় 2000 বছর।

এশিয়া –

এশিয়াতে যে সকল মমি পাওয়া গেছে তার বেশিরভাগই দুর্ঘটনাবশত তৈরী। মমিগুলো পাওয়া গেছে মূলত তারিম উপত্যকা ও ইরানের মত মরু এলাকায়। যদিও এই মমিগুলো কবর থেকে তোলার পর খুব দ্রুত ক্ষয় হয়ে গেছে। এছাড়া চীনেও মমির উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। চীনের শিনঝুই এবং লেডি ডাই এর দেহ মমিতে পরিণত হয়েছে ।

উত্তর আমেরিকা –

উত্তর আমেরিকার মমিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরানো এবং ভালোভাবে সংরক্ষিত মমি হিসেবে বিবেচনা করা হয় Kwaday Dan Ts'inchi বা "অনেক কাল আগে খুঁজে পাওয়া মানুষ"। 1972 সালে গ্রিনল্যান্ডে আটটি মমি পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ছিল ছমাসের শিশু, চার বছর বয়সী ছেলে ও বিভিন্ন বয়সের 6 জন মহিলা। যাদের বয়স প্রায় 500 বছর । মেক্সিকোতে আবিষ্কৃত মমি গুলির মধ্যে গুয়ানাজুয়াতো মমি গুলি বিখ্যাত।

দক্ষিণ আমেরিকা –

দক্ষিণ আমেরিকায় পৃথিবীর সবচেয়ে পুরানো মমির সন্ধান পাওয়া গেছে। সবচেয়ে পুরানো চিনচোরা মমি গুলি তৈরি হয় খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম বর্ষে। ইনকা সভ্যতার মমিগুলো পাওয়া যায় দক্ষিণ আমেরিকার অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা অঞ্চলে। এই মমি গুলোকে বলা হয় "আইস মমি"। মমি জুয়ানিতা আবিষ্কৃত হয় আন্দিজ পর্বতমালার আম্পাটো চূড়া থেকে। এই মমির দেহ এমনভাবে হিমায়িত ছিল যে মমিটির চামড়া, মাংসপেশি এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মূল কাঠামো পর্যন্ত অবিকৃত অবস্থায় ছিল। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইতালি সহ আরো অনেক দেশে মমির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

 

 

মমি তৈরীর পদ্ধতি:

মমি তৈরি হয় দীর্ঘ এক আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এবং এই প্রক্রিয়া চলে কয়েকটি ধাপে। এই কাজগুলো করা হয় অত্যন্ত গোপনে। কারণ প্রক্রিয়াটি যেমন ভয়ঙ্কর তেমনই অস্বাস্থ্যকর। মমি তৈরির কাজ শুরু হয় কোনও ব্যক্তি মারা যাওয়ার চতুর্থ দিন থেকে এবং চলে প্রায় 70 দিন ধরে।

 

১। প্রথমে মৃত দেহটিকে ধুয়ে নেওয়া হতো এবং এই ধুয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে মিশরীয়রা নীলনদের জল ব্যবহার করত।

২। পরে মৃত ব্যক্তির নাকের মাঝে ছিদ্র করে মাথার মধ্যেকার ঘিলু এবং মগজ বের করে ফেলে দেওয়া হতো।

৩। তারপরে মৃতদেহের পেটের বাম পাশে কেটে পেটের ভেতরে নাড়িভুড়ি এবং শরীরের বিভিন্ন পচনশীল অঙ্গ যেমন  ফুসফুস, বৃক্ক, পাকস্থলী ইত্যাদি বের করা হতো। ওই কাটা অংশকে তাল দিয়ে তৈরী মদ বা তাড়ির সাহায্যে পরিষ্কার করে বিভিন্ন গাছ গাছড়া এবং মশলা দেহের ভেতরে ঢোকানো হতো।

হৃদপিণ্ড কিন্তু শরীরের ভেতরেই রেখে দেয়া হতো। কারণ তারা মনে করত হৃদপিণ্ড হচ্ছে ব্যক্তির সমস্ত জ্ঞানের কেন্দ্র। কোনও ব্যক্তি হৃৎপিণ্ড ছাড়া কবরে বা স্বর্গে যেতে পারবে না। এই হৃদপিণ্ড পরিমাপ করেই ব্যক্তির সফলতা ও ব্যর্থতা নির্ধারণ করা হতো।  

৪। অঙ্গগুলো বের করে নেওয়ার পর খুব সাবধানে আবার পেট সেলাই করে দিতে হয়। পেটের ভেতরে যদি বাতাস থেকে যায় তাহলে মৃতদেহ পচে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই পেট সেলাই করার ক্ষেত্রে অনেক সাবধানতা অবলম্বন করতে হতো।

৫। এরপর অঙ্গ গুলোকে লবণ মাখিয়ে শুকানো করা হতো। সব ভালোভাবে শুকিয়ে গেলে গামলা গাইন গাছের পদার্থ ও বিভিন্ন প্রকার মসলা মাখিয়ে রেখে দেওয়া হতো। ৪০ দিন পর শুকনো অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলো লিলেনের কাপড় দ্বারা পেঁচিয়ে কেনোপিক বয়ামে ভরে রাখা হতো। প্রতিটি বয়ামের ঢাকনা দেবতা হোরাসের চার পুত্র ইমসেটি, হেপি, কেবেসেনাফ, দুয়ামাটেফ এর আদলে তৈরী ছিলো।

৬। শরীর থেকে লবন পরিষ্কার করে শুষ্ক চামড়ায় তেলের প্রলেপ দেওয়া হতো এবং কাটা জায়গাটিতে মোমের প্রলেপ দেওয়া হতো।

৭। এরপর লিনেন কাপড়ের ব্যান্ডেজ দিয়ে 15/20 দিন ধরে প্রায় 20 টি ধাপে মৃতদেহটিকে পেঁচিয়ে রাখা হতো।

৮।পরে ব্যান্ডেজের উপর ডেথ মাস্ক বা মৃত্যু মুখোশ পরিয়ে দেওয়া হতো।

৯। ব্যান্ডেজে মোড়া মৃতদেহকে লিনেন কাপড়ে শক্ত করে বেঁধে নকশা করা মমি- বাক্স বা কফিনে স্থাপন করা হতো।

 

মমিকরনের কারণ:

 

বিভিন্ন সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে মমিকরনের প্রক্রিয়া এবং  উদ্দেশ্য আলাদা আলাদা।তবে মৃতদেহকে সম্মান প্রদর্শন এবং মৃতদেহ সংরক্ষণই ছিলো আসল উদ্দেশ্য।

  মিশরীয়রা আবার মৃত্যু পরবর্তী জীবনের দিকে বেশ গুরুত্ব দিত। তারা মনে করত মৃত্যুর পর তাদের দেহ যতদিন সংরক্ষিত থাকবে ততদিন তারা স্বর্গে বাস করবে। সেজন্য নশ্বর দেহকে স্থায়িত্ব দেয়ার জন্য তারা মমি তৈরি করা শুরু করে। তাদের মতে কোন লাশকে মমি করার উদ্দেশ্য হলো মৃত ব্যক্তির আত্মা ও শরীরকে পরজন্মে প্রবেশ করতে সহায়তা করা। প্রথমদিকে শুধু রাজাদের মমিকরণ করা হতো কারণ মিশরীয়রা মনে করত রাজারা মারা যাওয়ার পর মৃতদের রাজা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। তবে পরবর্তীকালে প্রাচীন মিশরের অভিজাত ব্যক্তিবর্গ এবং বিত্তশালী লোকেদেরও মমি করা হয়েছে।

     আবার কিছু কিছু মমি সৃষ্টি হয়েছিল দুর্ঘটনাবশত। যেমন গুয়ানাজুয়াতো, মেক্সিকোতে 100 এর বেশি মমির সন্ধান পাওয়া গেছে যাদের মমিকরণ করা হয়নি। সেই এলাকার প্রচণ্ড তাপমাত্রা অথবা সেই এলাকার মাটির নিচে বিপুল পরিমাণে সালফার এবং অন্যান্য খনিজপদার্থের কারণে সেই মৃতদেহগুলো মমিতে পরিণত হয়েছে।

 

বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের মমিকরণ:

 

  বৌদ্ধসন্ন্যাসীরা নিজেরাই নিজেদেরকে মমিতে রূপান্তরিত করার জন্য অত্যাশ্চর্য পদ্ধতি অবলম্বন করতেন। বছরের পর বছর অনশন করে সেই সব খাবার খেতেন যা খেলে মানবদেহের ক্ষয় হয় এবং দেহ চর্বিমুক্ত হয়। এইরকম অবস্থার পর তারা এমন কিছু বিষাক্ত সেবন করতেন যা খেলে তাদের বমি হতে থাকেএবং বমির সাথে দেহের জলীয় অংশগুলো বের হয়ে যায়।বিষাক্ত এই পানীয় দেহকে মৃত্যুর পর পোকামাকড়ের হাত থেকেও রক্ষা করে। প্রক্রিয়ার শেষ ধাপে সন্ন্যাসীরা নিজেদের মৃত্যু এবং মমিতে পরিণত হওয়ার অপেক্ষা করতেন। তাদের মৃত্যু হতো ঠিকই কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় সবারই লাশ মমিতে পরিণত হতো না।

  ২০০ বছরের পুরানো এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর মমির খোঁজ মিলেছে মঙ্গোলিয়ায়। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার এই বৌদ্ধ সন্ন্যাসী এখনো পদ্মাসনে ধ্যান অবস্থায় রয়েছেন।

    

প্রত্নতাত্বিক উপাদান হিসেবে মমি:

 

বর্তমানে প্রত্নতত্ত্বের অন্যতম মূল্যবান সম্পদ হিসাবে ধরা হয় মমিকৃত মানবদেহ।

 ১। সুন্দরী তাকাবুতির মমি:

2600 বছর আগের এক মমি উদ্ধার হয় 2020 সালে। 1934 সালে মিশরে পাওয়া গিয়েছিল এক সুন্দরী মহিলার মমি, যেটিকে চড়া দাম দিয়ে কিনেছিলেন উত্তর আয়ারল্যান্ডের হলিউড শহরের শিল্প সংগ্রাহক থমাস গ্রেগ।

মমির কফিনের উপরে হায়ারোগ্লিফিক লিপিতে লেখা ছিলো মহিলার নাম তাকাবুতি। মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল ২০ থেকে ৩০ বছর। তাকাবুতি সম্ভ্রান্ত বংশের মেয়ে। তাকাবুতির বাবার নাম ছিল নেসপার। যিনি আমুন দেবতার পুরোহিত ছিলেন।

সম্প্রতি প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় জানা গেছে, তাকাবুতিকে খুন করা হয়েছিল। ডিএনএ পরীক্ষা, সিটিস্ক্যান ইত্যাদিতেও দেখা গেছে তার বাঁদিকে পিঠে গভীর ক্ষত রয়েছে। সম্ভবত কোনও ধারালো ছুরি দিয়ে খুন করা হয়েছিল এই সুন্দরীকে। অস্বাভাবিক কালো রঙের মুখ ও সোনালী চুল নিয়ে বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিলেন তাকাবুতি। তাকে নিয়ে সেই সময় মিশরে লেখা হয়েছিল প্রচুর কবিতা ও গান।

 

 ২। মমিতে কৃত্রিম ভোকাল কর্ড বসিয়ে কণ্ঠে স্বর তৈরী:

খ্রীস্টপূর্ব 1099 থেকে 1069 সময়ের মধ্যে মিশরের থিবসের (বর্তমানে লুক্সর) একজন পুরোহিত ছিলেন নেছায়মুন। তাঁকে ধর্মীয় কাজ পরিচালনার জন্য উচ্চস্বরে কথা বলতে ও গান গাইতে হতো। মৃত্যুর পর তার কন্ঠ থেমে গেলেও 3000 বছর পর গবেষকরা কণ্ঠনালীর ভেতর কৃত্রিম বাগযন্ত্র ব্যবহার করে নেছায়মুনের কন্ঠের অনুকরণে একটি স্বরধ্বনি তৈরি করতে সক্ষম হন। নেছায়মুনের কন্ঠনালী থেকে বের হওয়া শব্দের অনুরূপ শব্দ বের করার জন্য থ্রিডি প্রিন্টিং ব্যবহার করে সঠিক মাত্রা অনুযায়ী সেটার একটা অনুলিপি তৈরী করা হয়।

বিজ্ঞানীরা আরো আশা করেছেন ভবিষ্যতে কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে তাঁরা নেছায়মুনের কন্ঠে পুরো একটি বাক্য তৈরি করতে পারবেন।

 

৩। কয়েকটি পৃথিবী বিখ্যাত মমি:

i)জিঞ্জার

  উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে মিশরীয় মরুভূমি থেকে খনন করা ছয়টি মমির মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হল এটি। এই ছয়টি মমি প্রাকৃতিকভাবেই সংরক্ষিত হয়েছিলো, কোনো কৃত্রিম প্রক্রিয়া প্রয়োগ করা হয়নি। মরুভূমির উত্তপ্ত ও শুষ্ক আবহাওয়ায় মমিতে রূপান্তরিত হয় এরা। এর চুলের রং লালচে হওয়ার কারণে এর নাম দেওয়া হয় জিঞ্জার।

ii) হাতশেপসুট

  হাতশেপসুট ছিলেন এক প্রভাবশালী নারী ফারাও। তিনি দুই দশক মিশরে শাসন করেন। ১৯০২ সালে তার সমাধিক্ষেত্র পাওয়া গেলেও সার্কোফ্যাগাস ছিল শূন্য। পরে তার দাই মায়ের মমির সাথে তাকে পাওয়া যায় অন্য একটি সমাধি থেকে।

iii) ফারাও তুতেনখামেন:

  মাত্র ৯ বছর বয়সে মিশর শাসন শুরু করেন এই ফারাও। তার মমি প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই মমি আবিষ্কারের সাথে জড়িয়ে আছে বেশকিছু মৃত্যু এবং অভিশাপের গল্প। অনেকবার তার সমাধিতে লুটপাট চালানো হয়েছিলো। কারণ এটি ছিল ধনরত্নে ভরপুর।

iv) দ্বিতীয় রামাসেস:

অনেক ইতিহাসবিদ তাকে মিশরের সবচেয়ে শক্তিশালী ফারাও বলে আখ্যা দেন। তিনি 6 দশক ধরে মিশর শাসন করেন। বলা হয় তিনি 90 বছর বেঁচে ছিলেন এবং তিনি 100 সন্তানের পিতা হন। 1881 সালে তার মমি পাওয়া যায় নীলনদের তীরে দের-এল-বাহরি এলাকায়।

v)লেডি ডাই (শিন ঝুই)

 হান সাম্রাজ্যের এক ধনী ব্যক্তির স্ত্রী ছিলেন শিনঝুই। তিনি মারা যান 50 বছর বয়সে। সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব 178 থেকে 145 সালের দিকে। তার মমি এত ভালোভাবে সংরক্ষিত ছিল যে একেবারে তাজা মরদেহের মত। তার ময়না তদন্ত হয়। তার ত্বক ছিল নমনীয়, বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অক্ষত, হাত পা নাড়ানো যেত। মৃত্যুর আগে খাওয়া খাদ্য তার পাকস্থলীতে পাওয়া যায়। এবং তার ধমনীতে পাওয়া যায় লাল A পজেটিভ গ্রুপের রক্ত। তাকে 22 টি সিল্ক এবং শনের কাপড় পরানো ছিল এবং 9টি সিল্ক ফিতে দিয়ে বাঁধা ছিলো। এই কারণেই এটি চমৎকারভাবে সংরক্ষিত হয়েছে।

     

ফলে বোঝাই যাচ্ছে খ্রীস্টপূর্ব সময়কার মমির ত্বক, চুল, রক্ত সম্পর্কে যখন নিখুঁত তথ্য জানা যাচ্ছে। এগুলি ভীষণই উপযোগী প্রত্নতাত্বিক উপাদান!!

 

মমি থেকে মামিয়া নামের প্রোডাক্ট/ওষুধ তৈরী: 

 

ইউরোপীয় কিছু লোকের ধারণা ছিলো যে, মমি থেকে তৈরি হওয়া ওষুধ মানুষের নানা রোগ সারাতে পারে। এই জন্য তারা মিশর থেকে মমি আনা শুরু করেছিলেন। মমি থেকে মামিয়া নামের প্রোডাক্ট তৈরি করা হয়। যেগুলি ওষুধ বিক্রেতারা তৈরি করতেন। গরিব বা ধনী সবাই এই ওষুধ কয়েকশো বছর ধরে ব্যবহার করেছেন।

 দ্বাদশ শতকে ওষুধ বিক্রেতারা ঔষধি গুণের জন্য মমি ব্যবহার করতেন। পরবর্তী 500 বছর ধরে মমিকে ওষুধ বলে মনে করা হয়েছিল। যখন অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ তৈরি হয়নি তখন মাথাব্যথা, পেটব্যথা বা অন্যান্য রোগের জন্য মমি থেকে তৈরী মামিয়া ব্যবহার করা হতো। ম্যালেরিয়া, প্লেগ ইত্যাদি মহামারীতে চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকেরা মমির খুলি, হাড় এবং মাংসের উপরেই ভরসা করতেন। যদিও চিকিৎসকরা এটি মানতে নারাজ যে, শুকনো মমির দেহ থেকে ওষুধ তৈরি হতে পারে?

      

কিন্তু এই ওষুধ দ্বারা আবার বড় বড় লোকেরাও প্রভাবিত হয়েছিলেন। যেমন, ইংল্যান্ডের রাজা চার্লস দ্বিতীয়র হার্ট অ্যাটাক হলে তিনি মানুষের মাথার খুলি দিয়ে তৈরি ওষুধ খেয়েছিলেন। উনিশ শতক পর্যন্ত ডাক্তাররা নিউরো থেকে যেকোন রোগের চিকিৎসা করতেন মানুষের মাথার খুলি ব্যবহার করে।

ধর্মের প্রতীক হিসেবে বিবেচ্য হওয়া ছাড়াও মমি হয়ে উঠেছে সাহিত্যের অংশ। মমির ধারণার ভিত্তিতে রচিত হয়েছে বিভিন্ন গল্প-উপন্যাস নির্মিত হয়েছে চলচিত্র।

এছাড়াও বিভিন্ন দেশের প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে হাজার হাজার বছর পূর্বেকার ঐ অঞ্চলের সমাজ-সংস্কৃতি-শিল্প-অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ দিশা দেখায় মমিগুলি। তাই মমি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে প্রত্যেক দেশের প্রশাসন ও নাগরিকদের অতি সচেতনতার প্রয়োজন।

লেখক: শিক্ষিকা, নান্দারিয়া হাইস্কুল, শালবনি, পশ্চিম মেদিনীপুর।

Mailing List