বলি হয় ছাগল, ভেড়া, পুরুলিয়ার মৌতড়ের মা বড়কালীর পুজোয় পুরুলিয়া-ঝাড়খন্ড একাকার হয়, প্রস্তুতি খতিয়ে দেখলেন পুলিশ সুপার

বলি হয় ছাগল, ভেড়া, পুরুলিয়ার মৌতড়ের মা বড়কালীর পুজোয় পুরুলিয়া-ঝাড়খন্ড একাকার হয়, প্রস্তুতি খতিয়ে দেখলেন পুলিশ সুপার
আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, পুরুলিয়া
রাজ্যের অন্যতম তথা পুরুলিয়ার সেরা মৌতড়ের মা বড় কালীর পুজোর প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। মৌতড়ের মা বড় কালীর পুজোর দিকে নজর জেলার এমনকি পড়শী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের বহু ভক্তের। ইতিমধ্যে সারা মৌতড় ঘিরে সাজো সাজো উল্লাস। উচ্ছ্বসিত দর্শনার্থীরা। এই পুজো রাজ্যের অন্যতম তথা জেলার সব থেকে বড় প্রাচীন ও বড় পুজো।
আসন্ন কালীপূজো উপলক্ষে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা খতিয়ে দেখতে বুধবার বিকেলে মৌতড়ের কালীমন্দির চত্বর পরিদর্শন করলেন পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস সিলভামুরুগেশন। এদিন তিনি মন্দির চত্বর এবং সংলগ্ন মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন। এই কালীপুজোর বড় আকর্ষণ হল বলিদান। এখানে পুজোর রাত থেকে শুরু হয় বলি। চলে পরের দিন দুপুর পর্যন্ত। পাশাপাশি সারা বছর ধরে মায়ের নিমিত্তে ছাগল, ভেড়া বলিদান করা হয়ে থাকে এই মৌতড়ের কালী মন্দিরে। কালীঘাট মন্দিরের আদলে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর 2 নম্বর ব্লকের শতাব্দী প্রাচীন মৌতড় কালীমন্দির সাজিয়ে তোলা হয়েছে ইতিমধ্যে। মহামারী করোনা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়ার পর এবার মেলায় উপচে পড়বে ভিড় এমনটাই আশা করছেন পুজো উদ্যোক্তা থেকে প্রশাসনের কর্তারা সকলেই। ইতিমধ্যে সারা মৌতড় ঘিরে সাজো সাজো উল্লাস। জনশ্রুতি রয়েছে, সাধক শোভারাম বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে এখানকার পুজোর শুরু হয়। নতুনভাবে কালীঘাট মন্দিরের আদলে কয়েক বছর আগে মন্দির তৈরি হওয়ায় মৌতড় গ্রামের এই পুজো।
এবার অন্য মাত্রা পেতে চলেছে। মৌতড় ষোলআনা, উৎসব কমিটি ও গ্রামের তরুণ সংঘের মিলিত উদ্যোগে এই মন্দির সংস্কার হয়েছে। বিভিন্ন জনশ্রুতিতে ভরা এই পুজোয় শুধু জেলারই নয়, আশেপাশের জেলা থেকে পড়শি রাজ্য ঝাড়খন্ড থেকে বহু ভক্ত এখানে পুজো দিতে আসেন। ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকর্মীদের। তবে ঠিক কত বছর আগে এই পুজোর শুরু হয় তার সঠিক হিসাব নেই উদ্যোক্তাদের কাছে। তবে এলাকার জনশ্রুতি ও মৌতড় গ্রামের পুজো নিয়ে লেখা কিছু বইতে উল্লেখ করা তথ্য অনুযায়ী, কয়েক শতাব্দি আগে গ্রামের বাসিন্দা বিশ্বনাথ ভট্টাচার্যের জামাই সাধক শোভারাম বন্দ্যোপাধ্যায় মৌতড় গ্রামে কালীপুজো শুরু করেছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দা তথা লোকগবেষক সুভাষ রায় বলেন মৌতড় গ্রামের কালীপুজো ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছিল সে বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্যের অভাব রয়েছে। তবে জানা যায় বর্ধমানের বাসিন্দা, শোভারাম বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন মৌতড় গ্রামের বিশ্বনাথ ভট্টাচার্যর। শোভারাম মৌতড় গ্রামেই থেকে গিয়েছিলেন। সাধক প্রকৃতির শোভারাম দিনে-রাতে এলাকার শ্মশানে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতেন।পঞ্চমুন্ডির আসন প্রতিষ্ঠা করে তিনি পুজোপাঠ শুরু করেন ।পরে ওই জায়গাতেই মন্দির গড়ে উঠে। তন্ত্রমতে সিদ্ধ এই পঞ্চমুন্ভির আসনটি বর্তমানে মন্দিরের নীচে রয়েছে বলে দাবি পুজো উদ্যোক্তাদের।
বহু চর্চিত পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর 2 ব্লকের মৌতড়ের মা বড় কালীপুজো। এই পুজো নিয়ে এলাকায় কম জনশ্রুতি নেই ।এই পুজো হয় কার্তিক মাসের অমাবস্যায়। দূর্গা পূজার বিজয়া দশমীর পরদিন থেকে সাধারণত শুরু হয়ে যায এই পূজার প্রস্তুতি ।সেই রেশ চলে ভাতৃদ্বিতীয়ার দিন পর্যন্ত। তবে এই পুজোর প্রধান আকর্ষণ পশু বলি। এখানে পুজোর রাত থেকে শুরু হয় বলি। চলে পরের দিন দুপুর পর্যন্ত। যার আকর্ষনে হাজার হাজার কৌতুহলী দর্শনার্থী ভিড় জমায় মেলা প্রাঙ্গণে। বংশানুক্রমে এ মন্দিরের পৌরহিত্য করে আসছেনসনৎ বন্দ্যোপাধ্যায়রা। সনৎ বাবুর কথায়, মানুষ বিশ্বাস করে পূজা দেন। মানত পুরনো হয়। মন্দিরে এখনো রয়েছে শতাধিক বছরের পুরনো পুঁথি। সেই পুথি অনুযায়ী পুজো হয়। পুজোর সময়ে সেই পুঁথি পাঠ করা হয়। সনৎ বাবু শোনাচ্ছিলেন পুজোর অতীত দিনের কথা। বিশ্বাস আর ভক্তি যেখানে মিশে গিয়েছে সেখানে যুক্তি-তর্ক দিয়ে বিচার হয় না। বস্তুত এই ধরনের হাজারো অলৌকিক ঘটনার উদাহরণ নিয়েই কয়েক শতাব্দী ধরে নিজস্ব মহিমায় চলে আসছে মৌতড়ের" মা বড় কালী" পুজো।
এদিকে বুধবার বিকেলে আসন্ন কালীপূজো উপলক্ষে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা খতিয়ে দেখতে রঘুনাথপুর ২ ব্লকের মৌতড় গ্রামের কালীমন্দির চত্বর পরিদর্শন করলেন পুরুলিয়া জেলার পুলিশ সুপার এস সিলভামুরুগেশন। এদিন তিনি মন্দির চত্বর এবং সংলগ্ন মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন।


