কতটা রবীন্দ্রনাথ পড়লে বাঙালী হওয়া যায়

কতটা রবীন্দ্রনাথ পড়লে বাঙালী হওয়া যায়
তণুমন
আজ ছুটি। আজ পঁচিশে বৈশাখ। শুধু ছুটি বলেই কি পঁচিশে বৈশাখ বাঙালি মনে রাখে! না বাঙালির হৃদয় পুরুষকে স্মরণে রাখার জন্য অবসর যাপন বাধ্যতামূলক।
রবীন্দ্রনাথ নিজের ছাব্বিশতম জন্মদিনে শশীভূষণ কে চিঠি লিখে জানালেন, আজ পঁচিশে বৈশাখ, আমার জন্মদিন। আজ থেকে পঁচিশ বৈশাখ আগে আমি পৃথিবীকে বাধিত করতে এসেছিলাম। বছর ছাব্বিশের এক যুবক কোথা থেকে পান এত আত্মগরিমা, কোথা থেকে পান এত বিশ্বাস। যা ভর করে অবলীলায় বাধিত করেন। রবীন্দ্রনাথ কি জানতেন তিনি কবিগুরু হতে চলেছেন!
এই প্রশ্নের উত্তরগুলো খোঁজার রসদ রয়েছে অনেক। আর রয়েছে ততোধিক সম্ভাবনাময় ব্যাখ্যাও। বৈশাখ মাস এলেই রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন এবং কিছু রবীন্দ্রসঙ্গীত মুখস্ত বাচ্চাকে একটি নির্দিষ্ট কবিতার লাইন স্মরণ করিয়ে দেওয়া আর নির্দিষ্ট দিনে যাবতীয় কাজ কর্মের ফাঁকে রবীন্দ্র সংগীত শোনা এবং পত্রিকার সম্পাদকীয়তে রবীন্দ্র ভাবনার আগুন জ্বালিয়ে নেওয়া। আমরা কি নিয়ত রবীন্দ্র যাপন করি? হঠাৎ করে কোনও রবীন্দ্র সংগীত পুরো গাইতে পারি নাকি সবটাই রবীন্দ্রপ্রীতি দেখানোর প্রচেষ্টা। বাঙালির বিকেল থেকে সন্ধে নামা সিরিয়াল নির্ভর। অমুক সিরিয়াল চলছে, তার অর্থ বাজেনি এখনো সাতটা। বৈশাখ আর শ্রাবণ বাদে কোথায় থাকেন রবীন্দ্রনাথ!
রবীন্দ্রনাথ বাঙালি। রবীন্দ্রনাথ নোবেল আর গীতাঞ্জলি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাড়ি। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতীয়. আর রবীন্দ্রনাথ জানা নেই বাঙালির। বুক সেলফে বেশ খানিকটা জায়গায় বাধ্যতামূলকভাবে রবীন্দ্র রচনাবলীর আসা চায়। কিন্তু ক’জনের বুক সেলফ তৈরি হয় রবীন্দ্ররচনাবলী রাখার জন্য। শুধুই আমি রবীন্দ্র চেতনায় জারিত প্রমাণ হবে, প্রতিষ্ঠা পাবে আমি বাঙালি বলার অধিকার।
ঝিলিক কি মাকে খুঁজে পেলো তা অনেক ইম্পর্ট্যান্ট, হ্যাঁ বাঙালির গুরুত্বপূর্ণ এখন ইম্পর্ট্যান্ট। সন্ধ্যেয় বাঙালির "মন ফাগুন"। ফুলঝুরি লড়ছে চড়ুইয়ের চক্রান্তে। রবীন্দ্রনাথ লিখলেন, "আমার মনের কোণের বাইরে" মনের কোনও বাঙালি বুঝতে তো পারছে না। জয়ার আশ্চর্য কীর্তিকলাপে মোহিত বঙ্গ "বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান" অচেনা। রবীন্দ্র নৃত্য পরিবেশন হলো রবীন্দ্রনাথ জানা হলো না, রবীন্দ্র সঙ্গীত সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ।তবে গানের জন্ম বৃত্তান্ত অজানা, কবির মনোবস্থা অচেনা। আমাদের রবীন্দ্র চেতনার উন্মেষ না ঘটতেই পারে, রবীন্দ্র স্পর্ধার অভাব নেই।
রবীন্দ্রনাথ যা লিখে গেছেন সাধারণ বাঙালির শুধু পড়ে উঠতেই হাঁসফাঁস। এমন উত্তুঙ্গ প্রতিভার সম্ভার বাঙালি আগে দেখেনি। রবীন্দ্রনাথ কবিতা, গান, নাটক, প্রবন্ধ চিন্তা মনন দিয়ে সহজেই জয় করলেন অপূর্ণ হৃদয়। তবে আপামর বাঙালির মন জুড়ে দুলাইন রবীন্দ্র সঙ্গীত। তার বেশি এগোলেই শব্দ নেই। শুধুই গুনগুন।
আমি রবীন্দ্রনাথ পড়িনি, অর্থাৎ আমার সোশ্যাল স্ট্যাটাস নেই, ফেসবুক কবি প্রণাম নেই, সহজ অর্থ বাংলা ভুলেছি। রবীন্দ্রনাথ বুঝতে পড়তে তো হবে, গান তো এখন দেখা। রবীন্দ্র সংগীত রক্তে না গুল্লে রস আসবে কি করে! সে সময় তো নেই। সিরিয়াল বিদ্ধ বাঙালির সময় কই, ফেসবুক আক্রান্ত বাঙালির মননের মান নির্ধারণ করেছেন মার্ক জুকেরবার্গ। আমরা সবই শো কেসে রাখতে চাই, ভাঁড়ারের দৈন্যতার খবর রাখা হয় না। সময় বলছে রবীন্দ্রনাথ শুধু কোটেশনে বন্দি, ২৫ শে বৈশাখে, ২২ শে শ্রাবনে আবদ্ধ। কবি গান দিয়ে দ্বার উন্মোচন করেন। বোধের বন্ধ দ্বার খুলে যাক কবির গানেই।
........


