মানুষের মা তো সকলের জানা, জীবজন্তুর মায়েরা ঠিক কেমন হয় জানেন?

মানুষের মা তো সকলের জানা, জীবজন্তুর মায়েরা ঠিক কেমন হয় জানেন?
তৃণা মণ্ডল
মা। 'মা' শব্দটিতে আমাদের মনে একটি অন্যরকম অনুভূতির সঞ্চার হয়। মা মানে দয়া, মায়া, মমতা ও ত্যাগের প্রতীক। এই মা বলতে কি শুধু মানবী মা নাকি অন্যান্য প্রাণীদের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একইরকম! সেটাই জানা দরকার।
হাতি
প্রথমেই, পৃথিবীর বিশাল প্রাণী হাতির কথা ধরা যাক। হাতির বাচ্চা একা মা হাতি পালন করে না। আমাদের আগেকার দিনে যৌথপরিবারে বাচ্চারা যেরকম মা, মাসি, কাকিমা, জেঠিমা ও ঠাকুমার কাছে মানুষ হতো, তেমনই হাতির বাচ্চারাও মা এবং দলে থাকা অন্যান্য স্ত্রী হাতিদের কাছে মানুষ হয়। এতে মা-হাতি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। ভাবতে গেলে অবাক হতে হয় একটা মা-হাতি ৩০০ পাউণ্ড ওজনের একটা বাচ্চা কে ২২ মাস গর্ভে ধারণ করে।
বাদামী মাথাওয়ালা কাউবার্ড
এই পাখিদের মায়েদের আবার সন্তান প্রতিপালনের ক্ষেত্রে অদ্ভুত এক রীতি। আমরা বর্তমানে এতো সারোগেটেড মাদার নিয়ে আলোচনা করি অথচ পাখিদের মধ্যে এই পদ্ধতি বহু পুরনো। কাউবার্ড, তাদের ডিম অন্য পাখির বাসায় দেয় ঠিক কাকের বাসায় কোকিলের ডিম দেওয়ার মতো। তা বলে ডিম দিয়ে সব দায়িত্ব থেকে মুক্ত হয় তা নয়। কাছাকাছি থেকে লক্ষ করে যে তার ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো ও তাদের যথাযথ পালন সারোগেটেড মাদার করছে কি না। যদি না করে তখন আসল মা পালক মাকে আক্রমণ করে।
ক্যাঙারু
অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় পশু ক্যাঙারু তাদের সন্তানকে জন্ম দেয় অপরিণত অবস্থায়। তবে তাকে নিজের পেটের থলিতে রেখে দেয়। ধীরে ধীরে জন্মগত ত্রুটি কাটিয়ে ওঠে ও সন্তান পরিনত হলে মাটিতে নামিয়ে দেয়। কলকাতা মেডিকেল কলেজে বর্তমানে এই পদ্ধতি অবলম্বন করে অপরিণত শিশুকে তাদের মায়ের বুকের সাথে বেঁধে দিয়ে এক নতুন পদ্ধতি চালু করেছে,যাতে শিশু মায়ের বুকের ওম পেয়ে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে।
ওরাং ওটাং
বাচ্চা পালন করার দৌড়ে ওরাংওটাং মায়েরাও পিছিয়ে নেই। মা তার বাচ্চাকে প্রায় চার মাস বুকে করে নিয়ে থাকে, এরপর পাঁচ বছর পর্যন্ত নিজের দুধ দেয়।
অক্টোপাস
বাচ্চাকে পালন করার দৌড়তে সবাইকে পিছনে ফেলে দিয়েছে অক্টোপাস। ডিম পাড়ার পর তাদের বিভিন্ন দলে ভাগ করে ও তাদের অন্য খাদকদের হাত থেকে বাঁচতে দু’মাস পর্যন্ত কোনো খাবার খায় না ও অবশেষে মারা যায়।
পৃথিবীতে এমন বহু মা প্রাণীজগতে আছে যারা নিজের সমস্ত কিছু দিয়ে সন্তানকে বড় করে তোলেন। আসলে, মা যে রূপেই থাকুক না কেন মা কিন্তু মা-ই হন। সন্তানের প্রতি তার ভালোবাসার কোনও তুলনা হয় না।
-------------
লেখক: শিক্ষিকা। উদ্ভিদ বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা। শখ- জীব ও উদ্ভিদ জগতের অপার রহস্য অনুসন্ধান।


