কিভাবে এগোবে যাত্রা শিল্প? পথ খুঁজতে যাত্রী শিল্পীদের সম্মেলন

কিভাবে এগোবে যাত্রা শিল্প? পথ খুঁজতে যাত্রী শিল্পীদের সম্মেলন
সুলেখা চক্রবর্তী, হাওড়া
গ্রামীণ মানুষের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল যাত্রা শিল্প। সেই কবে থেকে জমিদার এবং সম্পন্ন মানুষ অকেশনাল এন্টারটেনমেন্ট হিসেবে যাত্রা শিল্পকে বেছে নিয়েছিল। পারিবারিক অনুষ্ঠানে আশা আত্মীয়-স্বজনদের মনোরঞ্জনের জন্য সম্পন্ন মানুষ যাত্রার দল ভাড়া করে নিয়ে আসতো। যা, বিভিন্ন সময়ে সাহিত্যের ভাষায় উঠে এসেছে। এরপর যত দিন গিয়েছিল ধীরে ধীরে যাত্রা শিল্পের মান বেড়েছিল। কুড়ি পঁচিশ বছর আগেও জামিন এলাকায় শিশির পড়লেই যাত্রার রমরমা দেখা যেত। সে তো পেশাদার যাত্রা শিল্পের কথা। কিন্তু এর পাশাপাশি অপেশাদার যাত্রা শিল্প তৈরি হয়েছিল আর সহযোগী হিসেবে মেকআপ লাইট আবহাওয়া সঙ্গীত শিল্পীদের কদর বেড়েছিল।
পরবর্তী সময়ে গ্রামের ক্লাব সংগঠনগুলি নিজেদের বাৎসরিক উৎসবেও নিজেরাই অভিনয় করতেন যাত্রায। এমনকি অভিনয় করার জন্য সারা বছর ধরে অর্থ জমাতেন। এ বিষয়ে বেশ কিছু মজার কথাও গ্রামীন এলাকায় আজও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে- যা বর্ষিয়ান মানুষের মুখে মুখে ফেরে। যেমন ক্লাবের যাত্রায় যে বেশি চাঁদা দেবে সে নায়কের পাক পাবে আবার যাত্রাপালা যাত্রা চলাকালীন ভালো অভিনয়ের দৌলতে দর্শক আসন থেকে জুতো উড়ে আসার পুরস্কারও পেয়েছেন অনেক ভিলেন। বলাই বাহুল্য টিভির যুগ আসার পর ধীরে ধীরে মানুষের। এন্টারটেইনমেন্ট থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে যাত্রা শিল্প। অপেশাদার যাত্রার অবস্থা আরো সঙ্গীন। এখন গ্রামের ক্লাব সংগঠনগুলি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অপেশাদার যাত্রা মঞ্চস্থ করেন না, বলা ভালো নিজেরা আর অভিনয় আগ্রহী নয়। কারণ হিসেবে অনেক ক্ষেত্রেই সময়ের অভাব এবং নতুন প্রজন্মের অনীহা উঠে এসেছে। ফলে অপেশাদার যাত্রা শিল্প এবং এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত বেশ কিছু মানুষের রুটি রুচি আজ বন্ধের মুখে। লুপ্তপ্রায় অপেশাদার যাত্রা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াই এবার শুরু হল বাগনানের ঘোড়াঘাটা থেকে। রবিবার সম্মেলনে মিলিত হলেন শতাধিক অপেশাদার যাত্রা শিল্পী।
জানা গিয়েছে, এখনো যে সমস্ত শিল্পী অপেশাদার ভাবে যাত্রাকে ভালোবেসে অভিনয় করে চলেছেন তাদের এবার লোকশিল্পী হিসাবে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং পরিচয় পত্র প্রদান করতে হবে -এমন দাবি তোলেন সম্মেলনে সমস্ত শিল্পী। যাত্রা শিল্পীদের অভিমত গ্রামীণ যাত্রা শিল্পীদের বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজরে এলেই কাজের কাজ হবে। এবং তারা এ ব্যাপারে আশাবাদী বলেও জানিয়েছেন। এদিন সম্মেলনে যাত্রা শিল্পীদের সংগঠন অপেশাদার যাত্রা শিল্পী সমন্বয় সমিতির পাশে দাঁড়িয়েছেন বাগনান এক পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি পঞ্চানন দাস। প্রসঙ্গত এই মুহূর্তে হাওড়া জেলায় প্রায় দেড় হাজার যাত্রা শিল্পী রয়েছেন অপেশাদার মঞ্চে। এদিন উপস্থিত ছিলেন বেশ কয়েকজন পালাকার ও নির্দেশক। অপেশাদার যাত্রা শিল্পী সমন্বয় সমিতির সম্পাদিকা শর্মিষ্ঠা মুখার্জি জানান যাত্রা কে ভালবেসে যারা এখনো অভিনয় করে চলেছেন তাদের উপযুক্ত পরিচয়পত্রের পাশাপাশি ভাতা প্রদানের দাবি তোলা হচ্ছে সরকারের কাছে। এছাড়া এদিন পঞ্চানন বাবু জানান,' যাত্রা একটা আবেগ। বহু মানুষ এখনো সেই আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন। যদিও বর্তমানে যাত্রার সংখ্যা অনেকটাই কমে গিয়েছে। অর্থনৈতিক কারণে তাই এই শিল্পীদের পাশে থাকা জরুরি।'


