বিশ্ববাজারে পর্নোগ্রাফিতে আয় কত জানেন! নারী পাচার যুগে যুগে: পর্ব – ১৩, লিখছেন সুখেন্দু হীরা

বিশ্ববাজারে পর্নোগ্রাফিতে আয় কত জানেন! নারী পাচার যুগে যুগে: পর্ব – ১৩, লিখছেন সুখেন্দু হীরা
সুখেন্দু হীরা
জীবজগতে যৌনতাকে বিনোদন হিসেবে ব্যবহার করে মানুষ ও ডলফিন। বাকি জীবজন্তুরা যৌনকর্ম করে কেবলমাত্র বংশবিস্তারের জন্য। মানুষের যৌন বিনোদন জগত এতটাই বিস্তৃত এবং এতটাই প্রভাবশালী যে, জনসাধারণের জনজীবনকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করে। বিনোদন জগতের সেরা আবিষ্কার চলচ্চিত্র। চলচিত্র আজ সবচেয়ে শক্তিশালী গণমাধ্যম, তা যেভাবেই প্রদর্শিত হোক না কেন। আজ সমাজমাধ্যমের টিকটক, ইউটিউব, দূরদর্শন সবই চলচ্চিত্রের বিস্তারিত অংশ।
এই চলচ্চিত্রের হাত ধরে এলো পর্নোগ্রাফি। এই পর্নোগ্রাফির বাজার যে কত বড়, তা সাধারণের কল্পনার বাইরে। ২০০৬ সালে এই ব্যবসার বিশ্বব্যাপী আয় ছিল ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তার মধ্যে চীনের আয় ছিল ২৭. ৪০ বিলিয়ন ডলার, দক্ষিণ কোরিয়ার ২৫.৭৩ বিলিয়ন ডলার, জাপানের ১৯.৯৮ বিলিয়ন ডলার, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৩.৩৩ বিলিয়ন ডলার। পর্নোগ্রাফি দেখে প্রতি সেকেন্ডে বিশ্ব ৩০০০ ডলারের বেশি খরচ করে। শুধু তাই নয় যারা এতে অভিনয় করে তারাও প্রভূত উপার্জন করে। তাই অনেকে এই পর্নোগ্রাফিতে স্বেচ্ছায় অভিনয় করে।
কিন্তু সবটাই এতটা উজ্জ্বল নয়। পর্নোগ্রাফিতে নারীদের সাথে সাথে শিশুদের ব্যবহার করা হয়। তাই এই পর্নোগ্রাফিতে শিশুরা স্বেচ্ছায় অভিনয় করে সেটা বলা যাবে না। যেসব নারীরা এতে অভিনয় করে তাঁরাও স্বেচ্ছায় অভিনয় করতে বাধ্য হচ্ছে কিনা তার অনুসন্ধান করার কোনও পরিকাঠামো আমাদের সমাজব্যবস্থায় নেই। অনেক মেয়ে চলচ্চিত্রে রুপালি পর্দায় সোনালী নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে চলচ্চিত্রে শিল্পের পীঠস্থানে ছুটে আসে। সবার তো আর রূপালী পর্দার নায়িকা হওয়া সম্ভব হয়না। তাদের মধ্যে অনেকে পর্নোগ্রাফি চলচ্চিত্রের নায়িকা হতে বাধ্য হয়।
পর্নোগ্রাফির ইতিহাস প্রায় চলচ্চিত্রের সমসাময়িক। ১৮৯৬ সালে ফরাসী দেশে ৭ মিনিটে একটি উত্তেজক চলচ্চিত্র চিত্রায়িত হয়েছিল। তার শিরোনাম ছিল le couchcr de la Marice "। পরিচালক ছিলেন আলবার্ট কারচেনা। নির্বাক চলচ্চিত্রের যুগে এইসব ছবিগুলি গণিকালয় গুলিতে প্রদর্শিত হয়। ভিডিওগ্রাফি এসে পর্নোগ্রাফি নির্মাণ সহজ করে দেয়। ভিডিও এসে তাকে জনসাধারণের মধ্যে সুলভ করে দেয়। আজকাল তো মোবাইলের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি সবার মুঠোর মধ্যে।
এর আগে মহিলাদের নগ্ন ছবি তোলা হত এবং সেই ছবি বিক্রি হত। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের আগে বাংলায় নগ্ন ছবি ও অশ্লীল ছায়াচিত্রের অনুপ্রবেশ ঘটে গিয়েছিল। এই অশ্লীল ছায়াছবিকে অনেকে ব্লুফিল্ম বা নীল ছবি বলে। আর বটতলার বই বা ফুটপাতে বিক্রি হওয়া হলুদ মলাটের বই প্রায় সবার দেখা।
আগে নগ্নছবি তোলার জন্য এবং অশ্লীল ছায়াছবিতে অভিনয় করার জন্য বারাঙ্গনাদের ব্যবহার করা হত। এখন আর বারাঙ্গনাদের প্রয়োজন হয়না। এসবের জন্য অভিনেত্রীর অভাব হয়না। বরঞ্চ এই সব অভিনেত্রীদের পসার কমলে রূপের হাটে বিকিকিনিতে নামতে হয়। তবে গোপনে ছবি তোলা, আবেগের মুহূর্তে ভিডিও করে পরে ব্লাকমেল করা এসবেরও অভিযোগ পাওয়া যায়।
অনেকে বলেন হলুদ বই, নীল ছবি যৌন জীবনে প্রয়োজন আছে। যৌনতা মানুষের স্বাভাবিক এবং মূল প্রবৃত্তি। পর্নোগ্রাফি এই প্রবৃত্তির উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। আবার এটাও ঠিক, পর্নোগ্রাফি মানুষের মন কিছুটা হলেও বিক্ষিপ্ত করে। সোনারপুর থানা এলাকার একটি ঘটনা পেয়েছিলাম সেখানে একটি কিশোর ছেলে ভিডিওতে ব্লুফিল্ম দেখে তাড়িত হয়ে একটি প্রতিবেশী শিশু কন্যাকে ধর্ষণ করে। যার সঙ্গে সে নিয়মিত খেলা করত।
এইসব দেখে শুনে বলা যেতে পারে পর্নোগ্রাফির বাজার পক্ষান্তরে উৎসাহ দেয় নারীপাচারের।
তথ্য ঋন:
১) গণিকা সংবাদ - অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (লিইবার ফিয়েরা)
২) ব্লু ফোটো ও ব্লু ফিল্ম: নন্দ গোপাল সেনগুপ্ত ও পতিতা সংস্কৃতি - বিজলীরাজ পাত্র [গণিকা সংবাদ ইতিহাস ও বহমানতা - সম্পাদনা: অর্কদেব (বৈভাষিক)]
৩) বিভিন্ন থানার তথ্য


