প্রশ্নোত্তরে ভূগোল: ধান চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ (দশম শ্রেণি)

প্রশ্নোত্তরে ভূগোল: ধান চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ (দশম শ্রেণি)
দীপান্বিতা ঘোষ
ভারতে ধান উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক অবস্থা সমূহ লেখ:
ধান ভারতের প্রধান কৃষিজ ফসল। ধান চাষের অনুকূল পরিবেশকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়—
- অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ
- অনুকূল অর্থনৈতিক পরিবেশ।
A.অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ:
(i)জলবায়ু
ভারতের ক্রান্তীয় মৌসুমি প্রকৃতির জলবায়ু ধান চাষের পক্ষে আদর্শ।
(a) উষ্ণতা:
20 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থেকে 30 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড উষ্ণতা ধান চাষের পক্ষে অনুকূল।
তবে 15 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড উষ্ণতাতেও ভারতে বোরো ধান চাষ করা হয়।
(b)বৃষ্টিপাত:
ভারতের গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত 100 থেকে 200 সেমি যা ধান চাষে অত্যন্ত সহায়ক।
তবে চাষের প্রথম অবস্থায় প্রতি মাসে অন্তত 12 সেমি বৃষ্টিপাত প্রয়োজন।
ধান চাষে প্রচুর জল লাগে বলে একে "তৃষ্ণার্ত ফসল" বলা হয়।
(c)আর্দ্রতা:
চারা গাছ বাড়ার সময় বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকা প্রয়োজন, কিন্তু ধান পাকার সময় ও কাটার সময় শুষ্ক আবহাওয়া জরুরী।
(ii) মাটি
নদী উপত্যকার উর্বর পলিমাটিতে ধানের ফলন ভালো হয়।
দোয়াশ, এঁটেল, পলি মাটিতে ধান চাষ হয়ে থাকে।
(iii) ভূমি
সমতল ভূমি ধান চাষের উপযোগী। তাই ভারতের নদী উপত্যকা, ব-দ্বীপ ও উপকূলীয় সমভূমিতে প্রচুর ধান চাষ হয়। পার্বত্য অঞ্চলে ধাপ কেটে ধান চাষ করা হয়ে থাকে।
B.অনুকূল অর্থনৈতিক পরিবেশ:
(i) উচ্চ ফলনশীল বীজ :
ধানের ফলন বাড়াতে উন্নত মানের বীজ প্রয়োজন যেমন….. IR8, জয়া, রত্না, পঙ্কজ, পাম।
(ii)রাসায়নিক সার:
ধানের ফলন বাড়াতে উন্নত মানের রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়।
(iii)কীটনাশক:
ধানের পোকা দমনে নির্দিষ্ট সময় অন্তর কীটনাশক স্প্রে করতে হয়।
(iv)জলসেচ:
ধানের ফলন সুনিশ্চিত করতে জল সেচের উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। ভারতে বোরো ধানের চাষ জলসেচের মাধ্যমেই করা হয়।
(v)মূলধন:
উন্নত বীজ, সার, কীটনাশক, জলসেচের জন্য পরিমিত মূলধন বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়।
(vi)শ্রমিক;
ধান শ্রমনিবিড় ফসল।
চাষের জন্য জমি তৈরি, বীজ বোনা, আগাছা-পরিষ্কার,ধানকাটা,ঝাড়া প্রভৃতি কাজে সুলভ ও দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়।
(vii)পরিবহন:
উন্নত ও নির্ভরযোগ্য পরিবহন ও বন্টন ব্যবস্থা ধানকে আরো লাভজনক চাষে পরিণত করে।
(viii)উন্নত প্রযুক্তিবিদ্যা:
ভারতে বর্তমানে হারভেস্টার, পাওয়ার টিলার, ট্র্যাক্টর, রিপার প্রভৃতি আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার হচ্ছে।
(ix)গবেষণা :
বিগত শতকের শেষ থেকে ধান চাষ সম্পর্কিত গবেষণার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে ফলে শুধু উৎপাদন হার বেড়েছে এমন নয়, সারা বছর ধরেই ধান চাষ সম্ভব হয়েছে।
সরকারি অনুকূল্য
কৃষির সূচনায় মূলধন বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত ঋণদান বা ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
আবার পরবর্তী সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্য কোন কারণে ফসল নষ্ট হলে সরকারি সাহায্য বা ঋণমকুবের প্রয়োজন হয়।
লেখক: ভূগোলের শিক্ষিকা, নান্দারিয়া, এসএস হাইস্কুল, শালবনি, পশ্চিম মেদিনীপুর


