প্রশ্নোত্তরে ভূগোল: কার্পাস বা তুলা চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ (দশম শ্রেণি)

প্রশ্নোত্তরে ভূগোল: কার্পাস বা তুলা চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ (দশম শ্রেণি)
03 Sep 2023, 11:30 AM

প্রশ্নোত্তরে ভূগোল: কার্পাস বা তুলা চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ (দশম শ্রেণি)

 

দীপান্বিতা ঘোষ

 

তুলা বস্ত্র উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল। ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলের প্রধান তন্তু ফসল হল কার্পাস বা তুলা।

কার্পাস উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়—-

 A.অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ

B.অনুকূল অর্থনৈতিক পরিবেশ।

 

A.অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ :

(i) জলবায়ু:

(a)উষ্ণতা:

       রোদ ঝলমলে উষ্ণ আবহাওয়া তুলা চাষের পক্ষে আদর্শ। তুলা চাষের জন্য গড়ে 20 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড থেকে 27 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড উষ্ণতার প্রয়োজন হয়।

(b) বৃষ্টিপাত:

     হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে তুলা চাষ ভালো হয়। তুলা চাষে গড়ে 50 থেকে 100 সেমি বৃষ্টিপাত প্রয়োজন।

(c)তুহিন মুক্ত অবস্থা:

      অত্যধিক শীত ও তুহিন তুলা চাষের পক্ষে ক্ষতিকারক।

 তুলা চাষের জন্য বছরে অন্তত 200 টি তুহিন মুক্ত দিবস থাকা প্রয়োজন।

(d)আর্দ্রতা ও সূর্যকিরণ:

     তুলাগাছ বৃদ্ধির সময় বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকা প্রয়োজন, কিন্তু তুলার গুটি পাকার সময় শুষ্ক ও রৌদ্রকরোজ্জ্বল আবহাওয়া দরকার।

(ii) মাটি :

উর্বর লবণাক্ত, হালকা চুন মিশ্রিত দোআঁশ মাটি তুলা চাষের পক্ষে আদর্শ।

ভারতের রেগুর মাটি ও পলি মাটিতে তুলা চাষ হয়।

(iIi)ভূপ্রকৃতি:

     জলনিকাশি ব্যবস্থাযুক্ত, মৃদু ঢালু সমতলভূমি তুলা চাষের পক্ষে আদর্শ। কারণ গাছের গোড়ায় জল জমে থাকা তুলা চাষের পক্ষে ক্ষতিকর।

 

B.অনুকূল অর্থনৈতিক পরিবেশ:

(i)জমি:

     যে কোন ফসল চাষের মত কার্পাস চাষের জন্য উপযুক্ত জমির প্রয়োজন হয়।

(ii) উন্নত বীজ:

 দীর্ঘ আঁশযুক্ত তোলার অধিক উৎপাদনের জন্য সুজাতা, MCU 4,MCU 5 প্রভৃতি উন্নত জাতের বীজের সহজলভ্যতার প্রয়োজন হয়।

(iii) সার:

 তুলা গাছ জমির উর্বরতা শক্তি দ্রুত নষ্ট করে দেয়,তাই নাইট্রোজেন ঘটিত সার প্রয়োগ করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে তুলা বীজ গুঁড়ো করে সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

(iv)কীটনাশক:

তুলা গাছে পোকামাকড়ের উপদ্রব খুব বেশি,বিশেষ করে বলউইভিল নামক এক প্রকার পোকা তুলোর গুটি নষ্ট করে দেয়। তাই প্রতি মাসেই কীটনাশক স্প্রে করতে হয়।

(v)জলসেচ:

 বৃষ্টিপাত কম হলে তুলা উৎপাদন সুনিশ্চিত করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকা দরকার।

  পাঞ্জাব ও হরিয়ানা অঞ্চলে জলসেচের সাহায্যে তুলা চাষ হয়।

(vi) মূলধন;

তুলা চাষের প্রাথমিক খরচ খুব বেশি। বীজ,সার, কীটনাশক, জলসেচ প্রভৃতির জন্য প্রচুর মূলধন প্রয়োজন হয়।

(vii) পরিবহন:

     তুলা রপ্তানি ও কারখানায় তুলা আনার জন্য উপযুক্ত ও সুলভ পরিবহন ব্যবস্থা থাকা দরকার।

(viii)শ্রমিক:

 তুলা চাষের জমি তৈরি থেকে তুলার আঁশ ছাড়ানো পর্যন্ত নানান কাজের জন্য প্রচুর সুলভ ও দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়।

(ix)চাহিদা:

      চাহিদা না থাকলে উৎপাদন অর্থহীন হয়ে পড়ে, তাই কার্পাসজাত দ্রব্যের চাহিদা থাকা প্রয়োজন।

(x)সরকারি আনুকূল্য:

কৃষি সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন, স্বল্প সুদে এবং সহজ শর্তে ঋণদান, কৃষি বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও কৃষি গবেষণাগার বা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষিকাজকে অন্তর্গত করার জন্য সরকারি সহযোগিতা থাকা প্রয়োজন।

লেখক: ভূগোলের শিক্ষিকা, নান্দারিয়া এসএস হাইস্কুল, শালবনি, পশ্চিম মেদিনীপুর

Mailing List