ভূগোল শিক্ষা: মাটির পরিলেখ (Soil Profile) ও মাটির স্তর (Soil Horizon)-দ্বাদশ শ্রেণি

ভূগোল শিক্ষা: মাটির পরিলেখ (Soil Profile) ও মাটির স্তর (Soil Horizon)-দ্বাদশ শ্রেণি
দীপান্বিতা ঘোষ
মৃত্তিকা পরিলেখ (Soil Profile):
ভূপৃষ্ঠ থেকে নিচের দিকে আদি শিলা পর্যন্ত পরপর সুবিন্যস্ত মাটির স্তরসমূহের উল্লম্ব প্রস্থচ্ছেদকে মৃত্তিকা পরিলেখ বা প্রোফাইল(Soil profile)বলে।
মৃত্তিকা পরিলেখের সর্বপ্রথম ধারণা দেন V. V.ডকুচেভ।
মৃত্তিকা স্তর (Soil Horizon):
মৃত্তিকা পরিলেখের মধ্যে যে স্তর দেখা যায় তাকেই মৃত্তিকারস্তর বা মৃত্তিকা হরাইজন(Soil Horizon) বলা হয়।
মৃত্তিকার স্তর আবার কতগুলি উপস্তরের বিভক্ত। মৃত্তিকার ভৌত, রাসায়নিক ও জৈব বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে মৃত্তিকার স্তরকে ও O,A, B, C এই চারটি ভাগে ভাগ করা হয়।
এই স্তরগুলি আবার উপস্তরে বিভক্ত।
- O হরাইজন বা জৈব স্তর:
ভূপৃষ্ঠের ঠিক উপরে গাছপালা ও জীবজন্তু দেহাবশেষ থেকে এই স্তরটির সৃষ্টি হয়।
এই স্তরের উপরের অংশটিতে অবিয়োজিত জৈব পদার্থ থাকে এবং নিচের অংশ আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে বিয়োজিত জৈব পদার্থ দ্বারা গঠিত।
এই স্তরের দুটি উপবিভাগ—--
(i)O 1 স্তর
এই স্তরটিতে অবিশ্লেষিত পাতা,ফুল,ডালপালা ও জীবজন্তুর দেহাবশেষ দেখা যায়।
(ii)O 2 স্তর
এই অংশে জৈব পদার্থ সম্পূর্ণ বিয়োজিত হয়ে অবস্থান করে।ফলে জৈব পদার্থের মূল প্রকৃতি পাল্টে যায়।
2 . A হরাইজন বা ক্ষরণের স্তর:
জৈব স্তরের ঠিক নিচের স্তরটি A হরাইজন নামে পরিচিত।
এই স্তরে খনিজ পদার্থের পরিমাণ বেশি,জৈব পদার্থের পরিমাণ কম।
এলুভিয়েশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই স্তর থেকে সূক্ষ্ম কাদাকনা ও বিভিন্ন খনিজ পদার্থ ক্ষরিত বা অপসারিত হয় বলে এই স্তরকে ক্ষরণের স্তর বা এলুভিয়াল স্তর বলে।
অত্যধিক ক্ষরণের ফলে এই স্তর খনিজশূন্য হয় এবং হালকা বর্ণ যুক্ত হয়।
এই স্তরের তিনটি উপস্তর দেখা যায়—
(i) A 1 স্তর
জৈব পদার্থ ও ধাতব পদার্থের সংমিশ্রণে এই স্তর গঠিত এবং এর রং কালো।
(ii) A 2 স্তর
এই স্তরটি সম্পূর্ণ খনিজ পদার্থের স্তর।
এলুভিয়েশন প্রক্রিয়ায় খনিজ অপসৃত হয় বলে রং ধূসর বা হালকা।
(iii) A 3 স্তর
Aও B স্তরের মধ্যবর্তী এই স্তরটি সকল মৃত্তিকা প্রস্থচ্ছেদে দেখা যায় না।
- B হরাইজন বা সঞ্চয়ের স্তর:
A হরাইজনের ঠিক নিচের স্তরটি B হরাইজন নামে পরিচিত ।
A স্তর থেকে বিভিন্ন খনিজ পদার্থ, কাদাকনা ক্ষরিত হয়ে এসে এই স্তরে সঞ্চিত হয়। তাই এই স্তরকে সঞ্চয়ের স্তর বা ইলুভিয়াল স্তর বলে।
এই স্তরে বিভিন্ন পুষ্টিমৌল জমা হয় বলে এই স্তরকে পুষ্টির ভান্ডার বলে।
এই স্তরের রং তুলনামূলক গাঢ় হয়।
এই স্তর তিনটি উপস্তরের বিভক্ত—-
(i) B 1 স্তর
A ও B এর মধ্যবর্তী এই স্তরটি B স্তরের কাছাকাছি কিন্তু A স্তরের থেকে পৃথক।
(ii) B 2 স্তর
কাদাকণা, লৌহ,অ্যালুমিনিয়াম,ক্যালসিয়াম দ্বারা গঠিত এই স্তরটি প্রকৃত ইলুভিয়াল স্তর।
এর রং গাঢ়।
(iii) B 3 স্তর
B 2 স্তরের নিচে এই স্তরটি B ও C স্তরের মিলিত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হয়।
- C হরাইজন বা শিলাচূর্ণের স্তর
B হরাইজনের নিচে বা আদি শিলার উপরে আংশিক বিয়োজিত শিলাচূর্ণ দ্বারা এই স্তরটি গঠিত।
এটি প্রকৃতপক্ষে মৃত্তিকা ও আদি শিলার মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী স্তর।
- 5. D বা R হরাইজন বা আদি শিলাস্তর বা শিলামাতৃকা বা Bed Rock :
C হরাইজনের নিচে অবস্থান করে মাটির আদিশিলা বা জনকশিলা বা মূল উপকরণের স্তর।
একে D বা R হরাইজন বলে।
এই আদিশিলার ভৌত-রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্যকে প্রভাবিত করে।
লেখক: শিক্ষিকা, নান্দারিয়া হাইস্কুল, শালবনি, পশ্চিম মেদিনীপুর।


