কর্পোরেটের শীর্ষ পদ থেকে বিরোধী দলনেতা, মন্ত্রী থেকে জেল – পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মসৃণ পথে কিভাবে কাঁটা এলো?

কর্পোরেটের শীর্ষ পদ থেকে বিরোধী দলনেতা, মন্ত্রী থেকে জেল – পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মসৃণ পথে কিভাবে কাঁটা এলো?
আনফোল্ড বাংলা বিশেষ প্রতিবেদন: দল ঝেড়ে ফেলেছে বললে খুব একটা ভুল বলা হবে না। কারণ, পার্থ চট্টোপাধ্যায় সম্বন্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দূর অস্ত, দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ ছাড়া অন্য কেউ কিছু বলেনি। প্রকাশ্যে রাস্তায় নামা তো অনেক পরের কথা।
কুণাল ঘোষ আবার যা বলেছেন তা যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ। যা থেকে পরিষ্কার, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের দায় দল নেবে না।কুণাল ঘোষের সাফ কথা, তৃণমূল কাউকে অন্যায় করতে বলেনি। দল নজর রাখছে। আদালতে ইডি-র তথ্যপ্রমাণ মান্যতা পেলে দল যা জানানোর জানাবে।
এখানেই শেষ নয়, ইডি-র তল্লাশির সময় কেন তিনি বারবার মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করেছিলেন তা নিয়েও দলের শীর্ষ নেতারা ক্ষুব্ধ। এমনকী, অ্যারেস্ট মেমোতেও রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর নাম ও একটি ফোন নম্বর। তাতে যারপরনায় বিরক্ত দলীয় নেতৃত্ব। ফলে বোঝাই যাচ্ছে পরিস্থিতিটা কোথায়?
কিন্তু কেন এবং কিভাবে এমন পরিস্থিতির সূত্রপাত হল? একবার দেখে নেওয়া যাক পার্থ চট্টোপাধ্যায় পথ চলাটা।
১৯৫২ সালে ৬ অক্টোবর কলকাতাতেই জন্ম পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয়ে পড়াশোনা। তারপর আশুতোষ কলেজ থেকে অর্থনীতি নিয়ে পড়া। এরপর এমবিএ করেন ISWBM থেকে। জীবন শুরু বেসরকারি সংস্থায় চাকরি দিয়ে। এইচআর বিভাগে। ছিলেন শীর্ষ পদে। স্ত্রীর নাম বাবলি (জয়শ্রী) চ্যাটার্জী।
কর্পোরেটের শীর্ষ পদ থেকে রাজনীতিতে। বেহালা পশ্চিম বিধানসভা থেকে ২০০১ সালে প্রথম বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০০৬ সালেও ওই বিধানসভা থেকে নির্বাচিত হয়ে বিরোধী দলনেতা হন বিধানসভায়। সেবার বামফ্রন্ট সরকার গড়েছিল ২৩৫টি আসন পেয়ে। তারপর এলো ২০১১ সাল। বামফ্রন্টের অবসান। তৃণমূল রাজ্যের ক্ষমতায়। একটানা জয়ী হয়ে এসেছেন তিনি। কখনও শিল্পমন্ত্রী তো কখনও শিল্পমন্ত্রী হয়েছেন। তথ্যপ্রযুক্তি ও পরিষদীয় মন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন। হয়েছেন দলের মহাসচিবও।
উত্থানের সঙ্গে সঙ্গেই বেড়েছে পরিধি। বান্ধবীর সংখ্যাও। এসএসসি দুর্নীতি নিয়োগ নিয়ে শুরু হয় তদন্ত। তখনই তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই থেকে ইডি – সকলের নজরে আসেন। তার তদন্তে নেমে শুধুমাত্র একজন বান্ধবীর ফ্ল্যাট থেকেই ২১ কোটি ২০ লক্ষ নগদ উদ্ধার। সঙ্গে বিদেশী মুদ্রা, অলঙ্কার। শান্তিনিকেতনে পাঁচটি ঝাঁ চকচকে বাড়ি। আবার উঠে আসছে একটি বৃহৎ জমির কথাও। পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা আন্তর্জাতিক মানের বিরাট স্কুলভবন।
তৃণমূল সূত্রে খবর, দলের মহাসচিব হওয়ার কারণে শুধু নিজের দফতর নয়, একাধিক দফতরে কর্মী নিয়োগেও প্রভাব খাটাতেন তিনি। সকলেই তা মেনে নিতেন। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘সেচ, কৃষি থেকে বিভিন্ন দফতরে প্রচুর অস্থায়ী পদে নিয়োগ করেছেন তিনি। সেই সব নিয়োগ হয়েছে জেলায় জেলায়। জেলা নেতারা কিছু বলার সাহস পাননি, কারণ তিনি দলের মহাসচিব। কিছু বলতে গেলে নেতা-কর্মীদেরই বিপদে পড়ার সম্ভাবনা ছিল।’’ ধীরে ধীরে সব খবরই নিশ্চয় পৌঁছেছে দলের কাছে। সূত্রের খবর, যে কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই দল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করছিল। তাই মহা সচিবের এ হেন পরিস্থিতিতেও দল রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করা দূরে থাক, ঝেড়ে ফেলার পথেই হাঁটছে। এমনকী, বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক অফিসও তালাবন্ধ!
এখন অবশ্য আদালতের নির্দেশে এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে ভূবনেশ্বরের এইমসে তিনি। তাঁর শরীরটা এখন সুস্থ নেই। ইডি-র একটানা ২৭ ঘন্টা জেরার ধকল, সঙ্গে মানসিক চাপ। এক কথায় বিধ্বস্ত তিনি। এখন দেখার ইডি আদালতে কোন কোন তথ্য পেশ করে। তারপর তৃণমূলই বা কী সিদ্ধান্ত নেয়। সেদিকেই তাকিয়ে গোটা রাজ্য।


