সরোজ মজুমদারের চারটি কবিতা

সরোজ মজুমদারের চারটি কবিতা
চিত্রাঙ্গদা মা আমার
তোমাকে দিলাম
পবিত্র গঙ্গাজল,
একমুঠো বেলকুঁড়ি আর
চন্দনের বাটি।
সঙ্গে রইলো ঢাকাই জামদানি।
বেলকুঁড়ি খোঁপায় দিও
কপালে চন্দন।
আর ও ভালো দেখাবে তোমায়।
তোমার দিকে চোখাচোখি হ'লে
দেবতাও পথ ভুলে যায়।
তোমার সম্ভ্রম
আমি বাঁচাতে পারিনি,
তোমার লজ্জা
আমি ঢাকতে পারিনি।
গঙ্গাজলে স্নান ক'রো
বেলকুঁড়ি খোপায়,
কপালে চন্দন টিপ।
কোমর বন্ধনী ক'রে জামদানি প'রো,
আর--
তুলে নাও মারণ আয়ূধ।
তোমার তো লজ্জা নয়!
লজ্জা, সে তো আমাদের।
তোমার যে ক্ষয় নেই চিত্রাঙ্গদা--
মা আমার।
......
দাঁড়াতে চাই
হাত দুটো শক্ত ক'রে ধরো
উঠে দাঁড়াবো
ইচ্ছে থাকলেও
উঠে দাঁড়াতে পারিনি এখন।
বয়সের ভার--
কোমরে হাড়ের ক্ষয়,
ট'লে যাই, পড়ে যাই।
শরীরের ভারসাম্য রাখাই দুষ্কর।
ষোলো আনা ইচ্ছে--
ছুটে যাই,-
তোমাদের মাঝে দাঁড়াই,
চীৎকার করি তোমাদের সাথে--
আগুন দিই আবর্জনায়।
পার হ'য়ে যাচ্ছে সময়--,
হাতের মুঠো থেকে
বেরিয়ে যাচ্ছে সব।
এই বেলা ঘুরে না দাঁড়ালে
আর কবে দাঁড়াবো?
অভিশাপ ছুঁড়ে দেবে তো সন্তানেরা!
এই বেলা--
আমাকে একটু ধরো
উঠে দাঁড়াই -রাস্তার উপরে।
********
আলোর জন্যে
এক মুঠো আলোর জন্যে
গাঙুড়ের তীরে
আমরণ প্রার্থনায় রাজি।
যেখানে একা একা রাত জাগে
চাঁদ সদাগর।
সপ্তডিঙা মধুকর
বেহুলা মা, লখীন্দর
ফেরেনি এখন ও।
একে একে ছেড়ে গেছে
সঙ্গী সাথীরা সব।
নানা অজুহাতে ফিরে গেছে
নিরাপদ স্থানে।
চন্দ্রধর বণিক সম্রাট --
হেতালের লাঠি হাতে
একা একা ভয়কে তাড়ায়।
দু হাত দিয়ে আঁধার সরায়।
এসো আমরা সেখানে দাঁড়াই
এসো আজ আমরা আবার
আলোর জন্যে সারারাত জাগি।
গাঙুড়ের তীরে......।
......
সাধের পৃথিবী
আমাকে একটা ফুল দিয়ো
আমি দেব সমগ্র পৃথিবী।
মনে করে সে ফুলের নাম দিয়ো একটা
আমি দেব স-সাগরা ধরিত্রি সবুজ।
এর গায়ে দাগ নেই, নেই সীমারেখা।
পাহাড় সাগর আর বালিয়াড়ি মিলে
ছুটে বেড়ায় নিজের মতন ক'রে ,
নিষ্পাপ শিশুর মতোই।
হাত বাড়ালেই হাত এখানে, বুক বড়ালে বুক
প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত সবান্ধব মুখ
স্বজন সুজন সুখ, পথে ও প্রান্তরে।
ভাগ বাটোয়ারা কিংবা দখলদারী নেই,
যুদ্ধ নেই ক্ষনে ক্ষনে -।
যুদ্ধবাজেরা গেছে কালের গহ্বরে।
আমার সাধের পৃথিবী
উপহার দেব ব'লে সাজিয়ে রেখেছি।
আমাকে একটা ফুল দিয়ো শুধু।
.......


