বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ‘খালেদা জিয়া একজন অশিক্ষিত মহিলা’, কেন এমন বললেন তসলিমা নাসরিন!

বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ‘খালেদা জিয়া একজন অশিক্ষিত মহিলা’, কেন এমন বললেন তসলিমা নাসরিন!
তসলিমা নাসরিন
খালেদা জিয়া একজন অশিক্ষিত মহিলা। গায়ের রঙ ফর্সা বলেই হয়তো জিয়াউর রহমান তাঁকে বিয়ে করেছিলেন। শুনেছি স্বামী দ্বারা তিনি নির্যাতিত ছিলেন। এই স্বামীর মৃত্যুই তাঁর কপাল খুলে দিয়েছে। নিতান্তই গৃহবধু, স্বামীর রাজনৈতিক দলের প্রধান হয়েছেন, শাসন করার যোগ্য নন, কিন্তু অশিক্ষিত জনগণের ভোটে জয়ী হয়ে গদিতে বসেছেন, দেশ শাসন করেছেন। শেষের দিকে তিনি তাঁর দুর্নীতিবাজ পুত্রের অঙ্গুলি হেলনে চলতেন। খালেদা জিয়া লোকের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগবে এই ছুতো দেখিয়ে মানবাধিকারের পক্ষে লেখা আমার বেশ কিছু গ্রন্থ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করেছেন। শুধু তাই নয়, যখন মৌলবাদিরা দেশ জুড়ে আমার ফাঁসির দাবিতে তাণ্ডব চালাচ্ছে, মৌলবাদিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তিনি আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। আমার বিরুদ্ধে অনুভূতির মামলা করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। তিনি বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না। আমাকে তিনি দেশ থেকে বের করেছেন, এবং দেশে ফেরত যেতে সব রকম বাধা দিয়েছেন। আমার নাগরিক অধিকার তিনি লঙ্ঘন করে আইনত অপরাধ করেছেন।
কিন্তু এই খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে যখন শেখ হাসিনা চরম অশিক্ষিতের মত, চরম অবিবেচকের মতো, চরম অসভ্যের মতো, চরম অসহিষ্ণুর মতো অশ্লীল এবং অশালীন মন্তব্য করেন, তখন তাঁকে প্রধানমন্ত্রী বলে মনে হয় না, মনে হয় তিনি পাড়ার কাল্লু গুণ্ডা। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়ার লিভার পচে গেছে, লিভার কী খেলে পচে যায়, সবাই জানে। তিনি বলতে চেয়েছেন লিভার মদ খেলে পচে যায়, খালেদা জিয়া মদ খেয়ে নিজের লিভার নিজে পচিয়েছেন। শেখ হাসিনার কোনও ধারণা নেই আরও নানা কারণে লিভার নষ্ট হয়। এমন বালখিল্য মন্তব্য করার আগে তিনি কোনও লিভারের ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে নিতে পারতেন। থেমে থাকছেন না তিনি, বলছেন, আশির ওপর বয়স হয়ে গেছে, সময় হয়ে গেছে, কান্নাকাটি করে লাভ নেই। তিনি খালেদা জিয়াকে বলতে চাইছেন মরার সময় হয়ে গেছে, ভালয় ভালয় মরে যাও, বিরক্ত করো না। কারও অসুস্থতা নিয়ে এমন ভয়ঙ্কর হিংস্রতা, এমন ভয়াবহ বিদ্বেষ বুঝিয়ে দিয়েছে দীর্ঘকাল ভোটের নাটক করে ক্ষমতায় বসে বসে তিনি ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন। তিনি ভুলে গেছেন দেশের কোনও অসুস্থ নাগরিককে এমন অসম্মান করার অধিকার তাঁর নেই।
(লেখাটি তসলিমা নাসরিনের ফেসবুক পেজ থেকে হুবহু তুলে দেওয়া হল)


