আবেগ না বাস্তব -দাদার অনুগামীদের ঢেউ দিঘাতেই আছড়ে পড়বে নাকি ঘুরপথে কলকাতায় পৌঁছবে, প্রশ্নটা কিন্তু উঠছে

আবেগ না বাস্তব -দাদার অনুগামীদের ঢেউ দিঘাতেই আছড়ে পড়বে নাকি ঘুরপথে কলকাতায় পৌঁছবে, প্রশ্নটা কিন্তু উঠছে
সুমন ঘোষ
আজ এক অদ্ভূত দিন। অদ্ভূত সময়।
এবার প্রশ্ন অনেক। ভাবনারও বদল ঘটছে। সে ভাবনার মধ্যে আবেগ নেই। সে ভাবনার মধ্যে বাস্তবতা বেশি।
দায়িত্ব কাকে বলে? মানুষ যাকে নিয়ে আবেগে ভাসে, যিনি সেই আবেগকে নিয়ে এগোতে চান, এবং এগিয়েছেন, তিনি এখন কোথায়?
তিনি হলেন শুভেন্দু অধিকারী। যিনি বেশ কিছুদিন ধরে খবরের শিরোনামে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো লড়াকু নেত্রীকে ঘিরে, যিনি জগদ্দল পাথরের মতো বসে থাকা বামফ্রন্ট সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে রাজ্যে নতুন সরকারের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তাঁকে নিয়েও বোধ হয়, এত শব্দ খরচ হয়নি। বিগত কয়েকদিনে শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে যত শব্দ খরচ করেছে দেশেন তাবড় মিডিয়া। কারণ, তিনি কয়েকমাস ধরে দলের নাম নেননি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম নেননি। প্রশান্ত কিশোরের মতো ব্যক্তিকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। এই নয় যে তিনি জনসংযোগ করেননি। তিনি জনসংযোগ করেছেন। সবই অন্যভাবে। কোথাও সেবক, কোথাও দাদার অনুগামী, আবার কোথাও সমবায় নিয়ে। কোথাও দুর্গাপুজো, তো কোথাও কালীপুজো উদ্বোধন করেছেন। বক্তব্য রেখেছেন। অবশ্যই শুভেন্দু সুলভ দীর্ঘ নয়। তঁর নিরিখে নাতিদীর্ঘ। তার মধ্যে দু’চার লাইন বলেছেন। যা খোঁচা বা বিস্ফোরণ বললেও ভুল নয়। তিনি বারবার বোঝাতে চেয়েছেন, তাঁর স্তর অনেক ওপরে। তিনি প্যারাসুটে নামেননি, লিফটেও ওঠেননি। সিঁড়ির পর সিঁড়ি ভেঙেছেন। আর অনুগামীরা তাকিয়ে, সেই সিঁড়ি দিয়ে ‘দাদা’ আর কত ওপরে উঠবেন। তার জন্য রাত জেগে, না খেয়ে, রাতে শোবার চিন্তা না করে নন্দীগ্রাম গিয়েছেন। শুভেন্দু নিজেও নন্দীগ্রামের মঞ্চ থেকে বলেছিলেন, ‘আমরা জল ছাড়া কিছু দিতে পারিনি।’ তবু কিন্তু হাজার, হাজার তরতাজা যুবক ছুটে গিয়েছিলেন।
শুনে নিন শুভেন্দু কী বললেন
কেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় – কাউকেই আক্রমণ করতে ছাড়েননি। সোশ্যাল মিডিয়াতে সরাসরি আক্রমণের পথ নিয়েছিলেন অনুগামীরা। কারণ, দাদা যেখানে, সেখানে তাঁরাও। কিন্তু দাদা কী, কেন এবং কোথায়? এ প্রশ্নের উত্তর তাঁদেরও অজানা। যে কথাটা দাদা এতদিন বলেননি, আজ বলে ফেললেন।
এবার দাদার কথাতেই আসা যাক। আজ নন্দীগ্রামের সভায় মিডিয়ার দোহাই দিয়ে দাদা বললেন, ‘‘ভাবছে আমি দল পরিবর্তন করছি। আমি এখনও একটা দলের প্রাইমারি মেম্বার, সক্রিয় মেম্বার, সদস্য। মন্ত্রী সভারও সদস্য। মুখ্যমন্ত্রী আমাকে মন্ত্রী রেখেছেন। উনিও তাড়াননি, আমিও ছাড়িনি।’’
আবার এটাও বললেন, ‘‘ রাজনৈতিক কথাবার্তা দলের ভেতরে থেকে, মন্ত্রীসভায় থেকে বলা যায় না। বহুদলীয় গণতন্ত্র, সভায় সভায় মতান্তর বিভেদ হয়। বিবেক থেকে বিচ্ছেদও হয়। কিন্তু যতক্ষণ ওই দলে আছেন, মন্ত্রী সভায় আছেন, যতক্ষণ আছি, তাড়ায় না, ততক্ষণ বলা যায় না।’’ প্রশ্ন তো থাকেই। রাজনৈতিক কথা কোথায় বলা যায়? দলে নয়??? আরও যোগ করেছেন, ‘‘সমবায়ের ব্যানারে এত মানুষের জমায়েত কোনও রাজ্যও পারবে না। একদিন দু’দিনের লোক নই তো। বসন্তের কোকিল নই তো আমি। তাই সবার সঙ্গে আত্মিক পরিচয় আছে। আর শুধু ভোট চাই ভোট দাও, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও, এসব বলি না। লকডাউনে থাকি, কোভিডে থাকি। আমফান ঝড়ে থাকি। সেই সময় আমি দিঘাতে ছিলাম। ওই বাতাস, মনে হচ্ছিল উড়িয়ে ফেলে। তারপর ভাবি নন্দীগ্রাম করা লোক তো, ভারী হয়ে গেছি, অত সহজে ওড়ানো যাবে না। আমি যে পদগুলিতে আছি সবগুলোই নির্বাচিত। কোনও পদ মনোনীত নয়। অনেক ছোট থেকেই এসব করি। পেশাতে নয়, নেশাতে করেছি।’’
এখানেও প্রশ্ন থেকে যায়। না হয়, তিনি নিজের ক্ষমতায় অনেক কিছুই করেছেন। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াইকে তো ছোট করার মতো জায়গা নেই। কারণ, এই লড়াইয়ের কথা ধরলে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু একটি প্রতিষ্ঠান। এটা কিন্তু অস্বীকার করার কিছু নেই। তাছাড়াও দল বা সরকার এখনও সরাসরি শুভেন্দুর বিরুদ্ধে কেউ নামেনি। জেলার নেতা অখিল গিরি বা এক মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম কিছু সমালোচনা করেছেন। ধরে নেওয়া যেতেই পারে, তা দলের নির্দেশেই। কিন্তু সরাসরি দল বিরুদ্ধে নামলে কেমন অবস্থা হতে পারে। আজই তো অখিল গিরি বলে দিয়েছেন, শুভেন্দু সভা ভরাতে টাকা দিয়ে লোক এনেছে। শুধু এটাই কেন? শুভেন্দুর সভাতে সাংসদ ভাই দিব্যেন্দুকে দেখা গেলেও কোথাও সাংসদ তথা প্রবীণ তৃণমূল কংগ্রেস নেতা, সবার ওপর শুভেন্দুবাবুর বাবা, শিশির অধিকারীর দেখা মেলেনি। তাই প্রশ্ন তো উঠতেই পারে। এবং উঠছেও। প্রকাশ্যে না হলেও আড়ালে-আবডালে।
অনুগামীদের কাছে যে প্রশ্নের শেষ নেই। তিনি সত্যি কোথায়, কেন এবং কী করতে চান, এসব কিছুই যে তাঁদের অজানা। এমন একটাসময়ে কী এভাবেও চলা যায়? কারণ, কয়েক মাস যে হয়ে গেল।। সেটা বড় কথা নয়। তার মধ্যে নন্দীগ্রামের সভাথেকে রামনগরের সভা- দু’টি বড় সভাও হল। কিন্তু দিশা????
এই প্রশ্ন থেকে পরিষ্কার, এবার কী আবেগ হারিয়ে অনুগামীরাও বাস্তবতার পথে হাঁটবেন। যে আবেগকে সম্বল করে রাজ্য জুড়ে দাদার অনুগামী পোস্টার ছেয়ে গিয়েছিল, সেই আবেগ থেকেই কিন্তু প্রশ্নটা উঠতে শুরু করেছে। তাহলে কী এবার আবেগ ধাক্কা খেতে চলেছে। এ প্রশ্নের উত্তর পেতে অবশ্যই আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।


