পান্তা ভাত, কচু শাক খেয়ে ২৬ জন বেয়ারার কাঁধে চড়ে ইছামতীতে মায়ের নিরঞ্জন, প্রাচীন ঐতিহ্য মেনেই পুজো হয় টাকি রাজবাড়িতে

পান্তা ভাত, কচু শাক খেয়ে ২৬ জন বেয়ারার কাঁধে চড়ে ইছামতীতে মায়ের নিরঞ্জন, প্রাচীন ঐতিহ্য মেনেই পুজো হয় টাকি রাজবাড়িতে
28 Sep 2022, 07:00 PM

পান্তা ভাত, কচু শাক খেয়ে ২৬ জন বেয়ারার কাঁধে চড়ে ইছামতীতে মায়ের নিরঞ্জন, প্রাচীন ঐতিহ্য মেনেই পুজো হয় টাকি রাজবাড়িতে

 

আনফোল্ড বাংলা প্রতিবেদন, টাকি: পুরনো ইতিহাস, ঐতিহ্যকে বিষয় করে সাজছে ৩০০ বছরে পা দেওয়া বসিরহাটের ইছামতী পাড়ের টাকি রাজবাড়ির দুর্গাপূজা। পুরনো সব রীতি মেনেই মা-দূর্গার আরাধনা ও নিরঞ্জন আজও বহমান। মহিষ সহ অন্যান্য প্রানীর বলিতে ছেদ পড়লেও আজও চলে আখ, কুমড়ো বলি। চলে পান্তা ভাত, কচু শাক খেয়ে ২৬ জন বেয়ারার কাঁধে চড়ে ইছামতীতে মায়ের নিরঞ্জন। সীমান্তে কাঁটা তারের ছেদ পড়লেও অবিভক্ত বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য নিয়ে আজ পুজিত হয়ে চলেছে টাকী রাজবাড়ীর দুর্গাপূজা।

বসিরহাটের টাকির পুবের রাজবাড়ী দুই বাংলার এখনও সংস্কৃতির মেলবন্ধন। এই পুজোকে ঘিরে প্রাচীন ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। ইংরেজ আমলে সতীদাহ প্রথা রদ করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন রাজা রামমোহন রায়। রামমোহন রায় সেই বিলে প্রথম সই করেছিলেন, দ্বিতীয় সইটি করেছিলেন এই জমিদার বাড়ির কালিনাথ মুন্সী। ইংরেজরা তাদের রায় চৌধুরী উপাধি দেন। ভারতবর্ষের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে তাদের সামিল করেন। যেমন আজও ইতিহাসের সাক্ষী কলকাতা থেকে টাকি পর্যন্ত টাকি রোড, টাকি গভর্ণমেন্ট কলেজ।  ভারতবর্ষের উন্নয়ন প্রকল্পে তাদের অবদান ইতিহাসের পাতায়। এক সময় এই বাড়িতে বন্দুকের টোটা ফাটিয়ে মহিষ বলি হত, এই বাড়ির প্রাঙ্গণে নবমীর দিন। কালের নিয়মে আজ সেটা বন্ধ। অবিভক্ত বাংলা অর্থাৎ ওপার বাংলা থেকে বহু দর্শনার্থীরা ইছামতি নদী পেরিয়ে এই রাজবাড়ীতে ভিড় জমাতেন। জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সবাই মিলেমিশে একাকার হয়ে যেত পুজোর কটা দিন। এখানে সমস্ত ধর্মের মানুষ রাজবাড়ীর পূজোর দালান কোঠায় এসে পুজোর কটা দিন ভুরিভোজের সামিল হত। আজও সেই পরমপরা মেনে চলেছেন পরিবারের সদস্যরা। রাজবাড়ির পুজো ৩০০ বছরে পা দিয়েছে, তার জন্য এবারের রাজবাড়ী সাজানো হচ্ছে পুরনো দিনের গোলা ভরা ধান, গরুর গাড়ি, সতীদাহ প্রথা রোধে বিলে সাক্ষর সহ এই বাড়ির প্রাচীন সংস্কৃতি তারা আলোকবাতির মধ্য দিয়ে তুলে ধরবেন। এখানকার বিসর্জন এক ইতিহাস সংস্কৃতি জড়িয়ে রয়েছে, মা পান্তা ভাত কচু শাক খেয়ে ২৬ বেয়ারার কাঁধে চড়ে ইছামতির রাজবাড়ীর ঘাটে নিয়ম তিথি মেনে প্রথমে এই প্রতিমা বিসর্জন হবে। তারপর একে একে অন্য বাড়ির প্রতিমা  বিসর্জন হবে। তাই সব মিলিয়ে এবারের টাকির রাজবাড়ির পুজো একেবারে অন্য মাত্রা নিয়েছে।

পুজোর দায়িত্বপ্রাপ্ত মিলন দাস বলেন, এবছরের পুজোটা একটু অন্যরকম, আর পাঁচটা বছরের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। প্রাচীন ইতিহাস সংস্কৃতি নিয়ম তিথি উপচার মেনে এখানে যেমন পুজো হবে। পাশাপাশি এ বছরে  এই রাজবাড়ীর বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ইতিহাসের পাতায় যেসব লিপিবদ্ধ করা আছে সেগুলো আলোকপাতির মধ্য দিয়ে তারা তুলে ধরা হবে।

Mailing List