ঘুগনিইই খাবেন ঘুগনি… 

ঘুগনিইই খাবেন ঘুগনি… 
23 Jan 2023, 02:30 PM

ঘুগনিইই খাবেন ঘুগনি… 

আনফোল্ড বাংলা প্রতিবেদন: “ঘুগনি চাই-ই-ই-ই... ঘুগনিইই’ এই ডাক, আজ আর শুনতে পান দাদা? হারিয়ে গিয়েছে না?’ বিষণ্ণ-হাসি হেসে, বললেন বাউল দাস। বছর বাহান্নর বাউল দাস। কলেজ স্ট্রিট এলাকার ‘ঘুগনিওয়ালা’। এখন ডালহৌসি এলাকায় টোস্ট-জেলি-মাখন-মরিচ-চিনির ছোট্ট পসার সাজিয়ে, দিন গুজরান। 

একমনে কথা বলছিলেন বাউল। ‘তখন তো আর ঘরে ঘরে এমন রঙিন টিভি, কেবল, কম্পিউটার ছিল না। তখন সাদা-কালো টিভি। তা-ও গলিতে দু’-একজনের বাড়িতে ছিল। টিভিতে তখন দেখানো হত ‘চিত্রহার’, শনি-রবিবার সাদা-কালো বাংলা ছবি। মাঝে বিরতি। সেই সময় গিয়ে হাঁক পাড়লে, দুটো গলির খদ্দেরেই আমার ঘুগনি শেষ! ‘ও ঘুগনিওয়ালা-ঘুগনিওয়ালা’ ডাক দিয়ে, কলকল করে ছুটে আসত সব। তারপর আমায় ঘিরে কত আবদার-অভিযোগ! কার শালপাতায় ঘুগনি কম, কার ঘুগনিতে আলুর দমের ঝোল পড়েনি, কার নারকেল কম…উফ।

কী সুন্দর সেই সব দিন ছিল! তারপর তো ঘরে ঘরে এসে গেল রঙিন টিভি, কেবল লাইন। পাড়ায় পাড়ায় রোল-চাউমিন...ঘুগনির বিক্রিতে ভাটা পড়ল। ওরা চলে গেলে, কলকাতা থেকেই হারিয়ে যাবে এই শুকনো ঘুগনি। যার অস্তিত্ব আজও বাঁচিয়ে রেখেছে একটিই বাড়ি…‘ঘুগনি-বাড়ি’।’ 

বউবাজার ‘সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যার পার্ক’ এলাকায়, ১০ নম্বর শশীভূষণ দে স্ট্রিট। জোড়া শীতলা মন্দির-লাগোয়া এই বাড়িটিকে এলাকার মানুষজন একডাকে চেনেন ‘ঘুগনি-বাড়ি’ নামে। বাড়ির জনা সাত-আটেক মানুষ, বছরভর এখানে বানিয়ে চলেছেন এই শুকনো ঘুগনি। অন্ধকার, স্যাঁতস্যাঁতে এক চালা বাড়ির ভিতর, ঘুপচি ঘুপচি সাত-আটেক ঘর। যেখানে দিনযাপনে নিত্য চড়ে গোটা কয়েক হাঁড়ি। ভোর ছ’টাতেই প্রতি দোরের দোরগোড়ায় জ্বলছে মাটির উনুন। তাতে লোহার কড়ায় তেলে ফুটছে সেদ্ধ ঘুগনি-মটর, কোনওটায় আলুর দম, কোনওটায় সেদ্ধ বিট। ইতিউতি থালা-বাটিতে রাখা আলু সেদ্ধ মাখা। ধনে-জিরে-জয়িত্রী-জায়ফল-গোলমরিচ-গরম মশলার মিশেলে, ঘুগনির মিশ্রণ। কোনওটায় ঘুগনির উপকরণ হিসেবে ছোট ছোট সরু নারকেল ভাজা। 

খালি গায়ে, গেঞ্জি গায়ে গা-লাগালাগি করে সাতসকালে ঘুগনি তৈরিতে ব্যস্ত, কলকাতার শেষ শুকনো ঘুগনির কারিগররা। সকলেরই আদি বাড়ি দীঘার রামনগর থানা এলাকার, দেউলিহাট বা মোসারিয়া গ্রামে। সকাল ৬টা থেকে ৯টা। প্রায় ৩ ঘণ্টার রান্না শেষে, সকলের উনুন থেকেই ক্রমে বিশাল-বিশাল অ্যালুমিনিয়ামের ডেকচিতে নেমে আসে তৈরি ঘুগনি। তার উপর এক কোণে সাজিয়ে রাখা হয় আলুর দম, অন্য কোণে বিট। এরপর স্নান-খাওয়া সেরে, সকলে ১০টার মধ্যে ‘ঘুগনি-বাড়ি’ ছেড়ে বেড়িয়ে পরে, কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে।

 

Mailing List