ভাঙনের চোটে নদী গর্ভে যেতে বসেছে শ্মশান, কালী মন্দির, সমস্ত অবৈধ ইটভাট বন্ধ করে ভাঙন রোদে নতুন ব্লু-প্রিন্ট বসিরহাটে

ভাঙনের চোটে নদী গর্ভে যেতে বসেছে শ্মশান, কালী মন্দির, সমস্ত অবৈধ ইটভাট বন্ধ করে ভাঙন রোদে নতুন ব্লু-প্রিন্ট বসিরহাটে
12 Sep 2022, 02:15 PM

ভাঙনের চোটে নদী গর্ভে যেতে বসেছে শ্মশান, কালী মন্দির, সমস্ত অবৈধ ইটভাট বন্ধ করে ভাঙন রোদে নতুন ব্লু-প্রিন্ট বসিরহাটে

 

আনফোল্ড বাংলা প্রতিবেদন, বারাসাতঃ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর নির্দেশে কংক্রিটের বাঁধ তৈরিতে জমি সমস্যার সমাধান ও প্রাচীন ঐতিহ্যের শহর বসিরহাটকে নদী ভাঙনের হাত থেকে বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসকের দপ্তরে। সোমবার এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক, বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বন ও ভূমির কর্মাধ্যক্ষ একেএম ফারহাদ, পূর্ত ও পরিবহনের কর্মাধ্যক্ষ তথা বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী, বিধায়ক দেবেশ মন্ডল, সুকুমার মাহাতো, সেচ দপ্তরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি প্রভাত মিশ্র, উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক শরদ কুমার দ্বিবেদী, বসিরহাট পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার জোবি থমাস, বসিরহাটের মহকুমা শাসক, বিডিও'রা সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিক, ইঞ্জিনিয়ার ও বসিরহাটের বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিরা। এদিন টানা প্রায় ঘন্টা দুয়েক রুদ্ধদ্বার বৈঠক চলে।

 

ইছামতী নদীর গতিপথ বিভিন্ন কারনে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় নদীর ভাঙন হচ্ছে। ফলে বহু প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বসিরহাট শহর নদী ভাঙনের কবলে। বসিরহাট শ্মশান, কালী মন্দির সহ একাধিক জায়গা নদীগর্ভে যেতে বসেছে। এই রীতি চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বসিরহাট শহরের একটা বড় অংশ নদীগর্ভে চলে যাবে বলেই দাবি নদীবিশেষজ্ঞদের। পাশাপাশি সুন্দরবন এলাকার নদীবাঁধ ভাঙনের স্থানীয় সমাধানের জন্য কংক্রিটের বাঁধ তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্র অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করারায় ও জমি জটের কারনে সেই কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফলে মাঝেমধ্যেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে ঝড়-বৃষ্টিতে নদীবাঁধ ভেঙে জল ঢুকে যাওয়াতে চাষের ও সাধারণ মানুষ, গবাদি পশু'র ক্ষতি হচ্ছিল। এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন সমস্যা সমাধানের দিক খুজে বের করতে। এবং তার নির্দেশেই রাজ্যের দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী এদিন বৈঠকে বসেন। সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক জানান, মুখ্যমন্ত্রী দুটি বিষয় নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন। তিনিই নির্দেশ দিয়েছে সমস্যার আশু সমাধানের। সেই লক্ষ্যেই এদিনের বৈঠক। আলোচনা, পর্যালোচনার মধ্যে দিয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ও একটি ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করতে বলা হয়েছে। সেইমত এক মাসের মধ্যে জেলাশাসকে একটি রিপোর্ট বানিয়ে জমা দিতে বলা হয়েছে।

মন্ত্রী আরও বলেন, সুন্দরবনের মানুষের বৃহত্তর স্বার্থে জমির দাতাদের সঙ্গে কথাবলে জমিজট কাটিয়ে আয়লা বাঁধের কাজ শুরু করা হবে। পাশাপাশি বসিরহাট শহরের ইছামতী নদীর গতীপথ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে বাম জামানায় নেওয়া কিছু ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়াতে। নদীর চরায় পাট্টা দেওয়াতে সেই সমস্যা বেড়েছে। সেগুলি সমাধান করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার কথা প্রশাসনকে বলা হয়েছে। তাদের একটা ব্লু-প্রিন্ট করতে বলা হয়েছে। সেটা দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয় হবে। বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন কেন্দ্র কংক্রিটের বাঁধের জন্য অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করে উলঙ্গ রাজা হয়ে গেছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ জমি সমস্যা মিটিয়ে মানুষের সার্থেই রাজ্যের অর্থেই সন্দেশখালি ২ নম্বর ব্লকে বাঁধ করা হবে। পরবর্তীতে আস্তে আস্তে সর্বত্রই বাঁধ করা হবে। পাশাপাশি ইছামতী প্রসঙ্গে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন নদীর স্বাভাবিক গতীকে বাঁধা দেওয়া যাবেন। গতীপথ আটকে যাওয়ার জন্যই বসিরহাট শহর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটা করা যাবে না। মমতা সরকার কোন মানুষের পেটের ভাত কেড়ে নেয় না। তাই বলে কোন অন্যায়কেও প্রশ্রয় দেয় না। ইটভাটার মালিকদের বলা হয়েছে নির্দেশ নিয়ম মেনে ব্যবসা করো। মানুষ না বাঁচলে ইট কারা কিনবে? ৮০০ বৈধ ইটভাটা আছে, কোন অবৈধ ভাটা রাখা যাবে না। ব্যক্তিগত ভাবে নদীর বালি কাটা যাবে না। নির্দিষ্ট আইন ও পদ্ধতি মেনে সরকারি অনুমোদিত সংস্থাই বালি কাটতে পারে। পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অবৈধ কাজ করলেই কোন রাজনৈতিক রং না দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে। জেলাশাসক শরদ কুমার দ্বিবেদী বলেন, আজকের আলোচনা বসিরহাটের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। খুব ভালো মিটিং হয়েছে। আগে কিছু জমি পাট্টা দেওয়া হয়েছিল সেগুলির বৈধতা ক্ষতিয়ে দেখতে হবে। পাশাপাশি বাঁধের জন্য জমি নেওয়া হয়েছিল সবাই ক্ষতিপূরণ ঠিকমতো পেয়েছে কিনা বা কোন সমস্যা আছে কিনা সেটাও ক্ষতিয়ে দেখে রিপোর্ট বানিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান জেলাশাসক।।

Mailing List