বাংলাদেশের রিক্সার সোনালী অতীতের খোঁজে ডঃ সুবীর মণ্ডল

বাংলাদেশের রিক্সার সোনালী অতীতের খোঁজে ডঃ সুবীর মণ্ডল
ডঃ সুবীর মণ্ডল
রিকশা বা রিক্সা বাইসাইকেল রিক্সা একপ্রকার মানবচালিত মনুষ্যবাহী ত্রিচক্রযান, যা এশিয়ার, বিশেষ করে দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে বিশেষ ভাবে প্রচলিত একটি ঐতিহ্যবাহী বাহন। যদিও দেশ ভেদে এর গঠন ও আকারে বিভিন্ন ধরনের পার্থক্য রয়েছে। জাপানি রিক্সা গুলো তিনচাকার নয়, সেগুলো দু চাকায় ভর করেই চলত। আর এক জন মানুষ ঠেলা গাড়ির মতো করে টেনে নিয়ে যেতেন। এই ধরনের রিক্সাকে' হাতে টানা রিক্সা 'বলা হয়। সাইকেল রিক্সা তিন চাকার। ২০১১ সালে সাইকেল রিক্সায় বৈদ্যুতিক মোটর সংযোজন করার মাধ্যমে যন্ত্রচালিত করার উদ্যোগ দুই দেশ গ্রহণ করে। কলকাতা ও বাংলাদেশের ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে এ- জাতীয় রিক্সার ব্যবহার কম--বেশি লক্ষ্য করা যায়। লোকসংস্কৃতির আলোকে বিচার-বিশ্লেষণ করে আমরা বলতে পারি রিক্সা এক ধরনের দূষণমুক্ত লোকযান।
রিক্সা! ত্রিচক্রের এক রঙ বেরঙের যান। ব্যস্ত নাগরিক জীবনের এক অপরিহার্য বাহন। রিক্সা ছাড়া নাগরিক জীবনের কথা যেন বাংলাদেশে ও কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের শহরতলি গুলিতে একসময় কল্পনাও করা যেত না। নিম্নবিত্ত বহু মানুষের ঘামে ভেজা ভরসার স্থল রিক্সা। হয়তবা আয়ের একমাত্র উৎস। মধ্যবিত্তদের সাধ ও সাধ্যের এক অপূর্ব সমন্বয়।
রিক্সা পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের এক জনপ্রিয় বাহন। শহুরে জীবনের রাস্তা-ঘাটের অধিকাংশই এর দখলে থাকে। কলকাতার হাতে টানা রিক্সা সমগ্র বিশ্বে সুপরিচিত। একটা সময়ে কলকাতার হাতে টানা রিক্সার একটা গরিমা ছিল। সময়ের হাত ধরে তার পরিবর্তন ঘটেছে। হাতে টানা রিক্সা অবলুপ্তির পথে। পায়ে টানা রিক্সা পরিবর্তে ব্যাটারি চালিত রিক্সার আধিক্য দেখা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে অটোরিক্সার ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা কিন্তু “রিক্সার রাজধানী” হিসেবেও বেশ পরিচিত! রিক্সার ইতিহাস অনেক পুরোনো এক বর্ণিল ইতিহাস। বাংলাদেশ ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এর ক্লান্ত চলাচল একটা সময়ে চোখে পড়ত। চীন, জাপান, ভারত, পাকিস্তান, মালোয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফ্রান্স সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশেই এর মন্থর চাকা অবিরাম ঘুরতে দেখা যেত।
বাংলা রিক্সা শব্দটি এসেছে জাপানী জিনরিকশা শব্দটি থেকে। চীনা ভাষায় জিন শব্দের অর্থ করলে দাঁড়ায় মানুষ, রিকি শব্দটির অর্থ হল শক্তি আর শা শব্দটির মানে বাহন। শব্দগুলোকে যদি আমরা একে একে যোগ করি তাহলে পাই মানুষের শক্তিতে চলা বাহন।
দেশ ভেদে রিক্সার আকার, গঠন প্রকৃতি বিভিন্ন হয়। আবার বিভিন্ন দেশে একে বিভিন্ন নামেও ডাকা হয়ে থাকে। চীনে সানলুঞ্চে, কম্বোডিয়ায় সীক্লো, মালোয়েশিয়ায় বেকা, ফ্রান্সে স্লাইকো নামে রিক্সা পরিচিত। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এটি পেডিক্যাব নামেও পরিচিত। সুপ্রাচীনকাল থেকে জাপানেই রিক্সার অস্তিত্ব জানা যায়। সেই রিক্সাগুলো অবশ্য তিন চাকার ছিল না। দুই দিকে ছিল দুই চাকা আর সামনের চাকার বদলে একজন মানুষ রিক্সাটি ঠেলে নিয়ে যেত।
রিক্সার উদ্ভব হয় ১৮৬৫ থেকে ১৮৬৯ সালের মাঝে। পালকির বিকল্প হিসেবে এর উত্থান। প্রথম কে এই বাহনের প্রচলন করেছিলেন, তা নিয়ে নানা জনের নানা মত রয়েছে। সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতটি হলো জোনাথন স্কোবি নামের একজন মার্কিন নাগরিক যিনি মিশনারি হিসেবে কাজ করতেন, তিনিই ১৮৬৯ সালে রিক্সা উদ্ভাবন করেন। তিনি থাকতেন জাপানের সিমলায়।
১৯০০ সাল থেকে কলকাতায়ও এর ব্যবহার শুরু হয়। প্রথমদিকে এতে শুধু মালপত্রই আনা- নেয়া করা হত। ১৯১৪ সাল থেকে কলকাতা পৌরসভা এতে যাত্রী পরিবহনেরও অনুমতি দেয়। এরই মাঝে বার্মা বা, বর্তমান মায়ানমারের রেঙ্গুনেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে রিক্সা। ধারণা করা হয় যে, বাংলাদেশের চট্টগ্রামে ১৯১৯ বা, ১৯২০ সালের দিকে মায়ানমার হয়েই রিক্সার আগমন ঘটে। তবে ঢাকায় রিক্সা কিন্তু রেঙ্গুন থেকে আসেনি। এসেছিল কলকাতা থেকে,নারায়নগঞ্জ এবং ময়মনসিংহের পাট ব্যবসায়ীদের কল্যাণে। তারা তাদের নিজস্ব ব্যবহারের জন্য কলকাতা থেকে ঢাকায় রিক্সা নিয়ে আসেন। কোন কোন সূত্রমতে ঢাকাতে প্রথম রিক্সার লাইসেন্স দেওয়া হয় ১৯৪৪ সালের দিকে। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় জ্বালানি সংকটের কারণে জাপানে রিক্সার প্রচলন ব্যাপক বেড়ে যায়। যদিও এখন আর জাপানে রিক্সা দেখা যায় না, জাদুঘর ছাড়া।
আগেকার মানুষের টানা রিক্সার প্রচলন এখন আর তেমন নেই বললেই চলে। সেই রিক্সাগুলোর দুই পাশে দুইটি লম্বা রড থাকত যা টেনে রিক্সাচালকরা রিক্সাকে টেনে নিয়ে যেতেন। রিক্সাতে মূলত দুইজনের জন্য বসার সিট থাকে। তবে মাঝে মাঝে ৩-৪ জনকেও কায়দা করে উঠতে দেখ যায়। এ প্রবণতা তরুণদের মাঝেই বেশি। বর্তমানের রিক্সাগুলো প্যাডেল চালিত। ফলে রিক্সাচালকদের কষ্ট অনেকটাই লাঘব হয়েছে। বর্তমানে বৈদ্যুতিক যন্ত্রচালিত রিক্সার প্রচলনও অতি দ্রুততার সাথে বাড়ছে। ২০০৫ সালের দিকে ভারতের পচিমবঙ্গ সরকার হাতে টানা রিক্সাকে অমানবিক বলে তা নিষিদ্ধের প্রস্তাব আনেন। বিলটি পাশ হলেও বিলটির বিরুদ্ধে পিটিশন হওয়াই তা এখনও কার্যকর হয়নি। বর্তমানে এই বিলটি সংশোধনের কাজ চলছে। ভারতের অন্যান্য কিছু শহরেও যানজটের কারণ হিসেবে উল্লেখ করে রিক্সাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে রিক্সার জনপ্রিয়তার কারণে রাপা প্লাজার কাছে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কের শুরুতেই স্থাপিত হয়েছে সম্পূর্ণ শিকল দিয়ে তৈরি একটি রিক্সা, এর চালক এবং এর যাত্রীদের নিয়ে সুন্দর এক ভাস্কর্য। ভাস্কর্যটি মৃণাল হকের তৈরি। ভাস্কর্যটির নাম ইস্পাতের কান্না।
১৯৮০ সালে সারা বিশ্ব প্রায় ৪০ লাখের মত রিক্সা ছিল। ১৯৪১ সালেও ঢাকায় রিক্সার সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৭ টি। ১৯৪৭ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮১ টিতে। বর্তমানে ঢাকাতেই শুধু ৩ থেকে ৭ লাখ রিক্সা রয়েছে। সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে কলকাতা সহ সমস্ত জেলায় আনুমানিক লক্ষাধিকের বেশি। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের তথ্য অনুসারে, ঢাকায় কমপক্ষে ৫ লক্ষাধিক রিক্সা চলাচল করে এবং ঢাকার ৪০ শতাংশ মানুষই রিক্সায় চলাচল করে। ২০১৫ সালে এটিকে বিশ্ব রেকর্ড হিসেবে তাদের বইয়ে স্থান
ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশের রিক্সার গঠন বৈচিত্র্য অনন্য। যা পৃথিবীর কোন দেশে পরিলিক্ষত হয় না বলে মনে হয়। অনেক রিক্সার পেছনেই এক ধরণের পেইন্টিং বা, চিত্র আঁকানো থাকে। এটি বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে একটি বিশেষ জায়গা দখল করে আছে। এই রিক্সা চিত্রগুলো আমাদের গর্বের বিষয়। এটিকে বাংলাদেশের চিত্রকলার সম্পূর্ণ আলাদা একটি ধারাও বলা চলে। রিক্সাচিত্র বলতে উজ্জ্বল রঙে আঁকা কিছু চিত্রকে বোঝানো হয়। সাধারণত বাংলাদেশ এবং ভারতেই রিক্সার পেছনে এ ধরণের চিত্রকলা লক্ষ্য করা যায়। বিশেষজ্ঞরা একে ফোক আর্ট, পপ আর্ট বা, ক্র্যাফটের মর্যাদাও দিয়ে থাকেন।
১৯৫০ এর দশকে বাংলাদেশে রিক্সাচিত্রের প্রচলন শুরু হয়। রিক্সাচিত্রে ফুল-ফল, পশু-পাখি, নদী-নালা, প্রকৃতি এমনকি জনপ্রিয় নায়ক-নায়িকাদের ছবিও আঁকানো হয়ে থাকে। কখনও কখনও রিক্সাচিত্রে রিক্সাচালকের ধর্মীয় বিশ্বাস বা, সামাজিক কোন বক্তব্য প্রতিফলিত হত। তবে বর্তমানে কম্পিউটারের সাহায্যে ছবি তৈরি করে, টিনের ধাতব প্লেটে ছাপ দিয়ে খুব সহজেই রিক্সাচিত্র তৈরি করা হয়। ফলে দেশের ঐতিহ্য বা, প্রকৃতি আর সেভাবে সেখানে ফুটে ওঠেনা। ফলে রিক্সা চিত্রশিল্পীরা তাদের কর্মক্ষেত্র হারাচ্ছেন, পাশাপাশি এই শিল্পও তাঁর অতীত গৌরব হারাতে বসেছে।
২০১১ সালে বাংলাদেশে ক্রিকেট বিশ্বকাপের উদ্বোধনের সময়ে বাংলাদেশের রিক্সার ঐতিহ্য বেশ ভালভাবে পৃথিবীবাসীর সামনে তুলে ধরা হয়। সেখানে প্রতিটি দলের অধিনায়করা রিক্সায় করে মাঠে উপস্থিত হন। বিষয়টি বেশ প্রশংসিত হয়।
রিক্সা একটি পরিবেশ বান্ধব বাহন। কোন রকম বায়ু দূষণ ঘটায় না রিক্সা। এছাড়াও বহু মানুষ রিক্সা চালিয়ে বা, তৈরি ও মেরামত করে তাদের জীবন-- জীবিকা চালিয়ে থাকেন। এ -প্রাচীন বাহনটি বর্তমানে বাংলাদেশের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। এর আবেদন কমার বদলে দিনকে দিন মানুষের মাঝে বেড়েই চলেছে। যানবাহনগুলোর মাঝে রিক্সাকে বেশ নিরাপদ হিসেবেই বিবেচনা করা যায়। সবাই সচেতন হলে হয়ত একদিন রিক্সা চিত্রশিল্পেরও সুদিন ফিরিয়ে আনা সম্ভব। বাহনে ওঠার জন্যে মানুষকে কীভাবে আকৃষ্ট করা যাবে? রিকশা-চালকরা এবং মালিক সম্প্রদায় তখন পড়লেন ভারী বিপাকে। কী করা যায় ভাবতে ভাবতে, মানুষকে রিকশার প্রতি আকৃষ্ট করার পদক্ষেপের অংশ হিসেবে রিক্সায় আঁকাআঁকির চিন্তা শুরু হয়। যেহেতু আলপনা, সিনেমার পোস্টার, নকশা এসবের পেছনে বাঙ্গালীর একটা আগ্রহ আদিকাল থেকেই আছে। তাই এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে রিকশা-আর্ট নামক একটি বিষয় শুরু হয়। ‘রিক্সা আর্টিস্ট’ নামে একদল মানুষও আত্মপ্রকাশ করে রাতারাতি।
পঞ্চাশের দশকে যখন রিক্স এসেছে এ দেশে, প্রথম প্রথম শুধু ফুল-পাখি, জীববৈচিত্র্য, নানারকম নকশার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো রিকশা-আর্ট এর কাজ। কিন্তু আস্তে আস্তে রিকশা-আর্টের বিষয়বস্তু হিসেবে যুক্ত হতে থাকে সমসাময়িক সবকিছু।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের পরে যুদ্ধের বিভিন্ন টুকরো টুকরো দৃশ্য আঁকা হতো রিকশার গায়ে। স্মৃতিসৌধ, শহিদ মিনার, কল্পিত স্বাধীন দেশের টুকরো ছবি যুক্ত হওয়া শুরু করে রিকশা-দেহে। এছাড়া সিনেমার দৃশ্য তো আছেই। সিনেমা, জীব-বৈচিত্র্য, মুক্তিযুদ্ধ, জীবনযাপন…সবকিছু তুলির ডগায় ফুটে উঠতো রিকশায়। মিথোলজির নানা উপাদান– দুর্গাপূজা, কালীপূজা, রামায়ণ, মহাভারতের বিভিন্ন দৃশ্য, আরব্য রজনী-পারস্য রজনীর গল্প,বিখ্যাত মসজিদ, তাজমহল, আলিফ লায়লা- সবই ছিলো রিকশা-আর্টের টপিক।
শেষকথা: বর্তমান যুগ গতির যুগ। প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত মূল্যবান। সময় নষ্ট করতে কেউ চায় না। মানুষের কাছে সময়ের মূল্য খুবই বেশি। তাই যুগোপযোগী যানের প্রতি আগ্রহ স্বাভাবিক। আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর অটোরিকশা ও টোটোর সঙ্গে পায়ে টানা রিক্সা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না। ফলে এই ঐতিহ্যবাহী লোকযান, আজ অনেক খানি অবলুপ্তির পথে এগিয়ে চলেছে। জন ঘনত্ব বাড়ায় অনেক বড় বড় শহরে যানজট সৃষ্টি করছে রিক্সা। এইসব সমস্যা নিরসনে রিক্সার চাহিদা কমছে। গতির দিক থেকে পিছিয়ে পড়ছে রিক্সা টোটোর সঙ্গে। দুঃখের বিষয় শুধু বেঁচে থাকার জন্য, এই পেশার সাথে জড়িত বহু মানুষ আজ অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। সময়ের হাত ধরে পরিবর্তন আসবেই, তাকে মান্যতা দিতে বাধ্য। বর্তমান গতির যুগ,সুতরাং মানুষের হাতে সময়ের দাম অনেক। তাই বাস্তব প্রয়োজনে রিক্সার পরিবর্তে টোটোয় চড়ার আগ্রহ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে স্বাভাবিকভাবেই। হয়তো আর কয়েক বছর পর সমগ্র বিশ্ব থেকে রিক্সার অবলুপ্তির ঘটবে। হয়তো স্মৃতি হয়ে পড়ে থাকবে ইতিহাসের হলুদ রঙের পাতায়। রিকশার সোনালি অতীত বাঙালির আত্মার সঙ্গে গভীর ভাবে সম্পৃক্ত। বাঙালির হৃদয়ের মানচিত্রে চিরজীবী হয়ে থাকবে লোকযান রিকশা।
লেখক: শিক্ষক, লোকগবেষক, প্রাবন্ধিক, রম্যরচনা, অণুগল্প ও ছোটগল্প এবং ভ্রমণকাহিনীর লেখক।


