ইছাপুরে গঙ্গা পার্শ্বস্ত সুবিশাল ঐতিহ্যশালী বাড়ি এলাকাবাসীদের কাছে এখনও কেন 'পরীবাড়ি' নামেই বিখ্যাত জানেন?

ইছাপুরে গঙ্গা পার্শ্বস্ত সুবিশাল ঐতিহ্যশালী বাড়ি এলাকাবাসীদের কাছে এখনও কেন 'পরীবাড়ি' নামেই বিখ্যাত জানেন?
আনফোল্ড বাংলা প্রতিবেদন: গঙ্গা তীরবর্তী এক সুবিশাল অট্টালিকা। দূর থেকেই দেখা যায় বাড়ির মাথায় রয়েছে তিনজন 'পরী'। দেখলেই বোঝা যায় এই স্থাপত্য অতীতের ইতিহাস বহন করে। আর তাতেই কৌতুহল বারে মানুষের। জেলার সদর শহর বারাসাত থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের অন্তর্গত এলাকা ইছাপুর। আর সেখানেই গঙ্গা তীরবর্তী এই বাড়ি ইতিহাস বুকে নিয়ে, মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এলাকাবাসীদের কাছে যে বাড়ি বিখ্যাত 'পরীবাড়ি' নামেই।
বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালেই বোঝার অপেক্ষায় রাখে না, সু-বিশাল এই অট্টালিকার মাথায় তিন জন পরী থাকায় এরূপ নামকরণ। জানা যায়, মূলত নিম্নবর্গীয় মানুষদের বসবাস ছিল এই এলাকায়। পরবর্তীতে নবাব সৈন্য সামন্ত নিয়ে প্রায় এক মাসের মতো এই এলাকায় আস্তানা গেড়েছিলেন। সেই থেকেই এই এলাকার নাম হয় নবাবগঞ্জ। গঙ্গা তীরবর্তী তখনকার এই প্রত্যন্ত এলাকা ধীরে ধীরে মণ্ডল পরিবারের সদস্যদের উদ্যোগে উন্নতি লাভ করতে থাকে। সে সময়ে, ইচ্ছাপুর নবাবগঞ্জের এই বাড়ির ইতিহাস ঘাঁটলে উঠে আসে বাঞ্ছারাম মণ্ডলের নাম। আর সেই থেকেই এ বাড়ির আরেক নাম 'মণ্ডল ভবন'।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, বাড়িটি তৈরি হয় ১৯০৭ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি। এ বাড়ি তৈরি করিয়েছিলেন গদাধর মণ্ডল। বাড়ির বাইরে তাঁর নামের ফলক আজও শোভা পায়। গঙ্গা পার্শ্বস্ত এই সুবিশাল ঐতিহ্যশালী বাড়ির ছাদ থেকে গঙ্গা দেখলে, এক আলাদা নৈসর্গিক সুখের অনুভূতি হয়। প্রকৃতির এই সুন্দর রূপ দেখে কয়েক ঘণ্টা হামেশাই কাটিয়ে দেওয়া সম্ভব। সুবিশাল এই বাড়ির অন্দরে রয়েছে ঠাকুরদালান। সেখানেই প্রায় ৩০০ বছরেরও অধিক সময় ধরে হয়ে আসছে দুর্গা পুজো।
মহালয়ার পরই প্রতিপদে স্থাপিত হয় দেবীর ঘট। ন'দিন ধরেই চলে পুজো। রীতি মেনে দশমীতেই হয় দেবীর বিসর্জন। পুজোর কয়েকদিন হাজার হাজার লোকের ভিড় হয় এই মন্ডল বাড়িতে। পরিবারের সকল সদস্য এই কয়েকদিন একত্রিত হয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন। পুজোর কয়েকদিন নিয়ম মেনে বিশেষ ভোগেরও ব্যবস্থা করা হয়। জানা যায়, পরীবাড়িতে শ্যুটিং হয়েছে বেশ কিছু জনপ্রিয় সিনেমার দৃশ্যের। বাঞ্ছারাম মণ্ডলের বংশধরেরা বর্তমানে এই বাড়িতে বসবাস করেন।
তাই বসত বাড়ি হওয়ার কারণে, এখনও পর্যটক হিসেবে বাড়ির অন্তরে পুজোর সময় বাদ দিয়ে প্রবেশ করা অনুমতি নেই। তবে বাড়ির সামনে দাঁড়ালেও, প্রকৃতি আর ইতিহাসের মেলবন্ধনে এক অপরূপ সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে।


