ছবির মতো সুন্দর সিটংকে কেন একটুকরো ইউরোপ বলা হয়, জানেন?

ছবির মতো সুন্দর সিটংকে কেন একটুকরো ইউরোপ বলা হয়, জানেন?
আনফোল্ড বাংলা প্রতিবেদন: নাগপুরের কমলা যতই বাজারে ভরে থাকুক না কেন, দার্জিলিংয়ের কমলালেবুর টানই আলাদা। দার্জিলিংয়ের কমলালেবু নাম হলেও আসলে দার্জিলিং শহর থেকে অনেকটা দূরে মূলত রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত মংপুরের কাছে অবস্থিত সিটংয়েই দার্জিলিংয়ের কমলালেবুর অধিকাংশ উত্পন্ন হয়। ছবির মতো সুন্দর সিটংকে অনেকে ইউরোপের সুন্দর টুরিস্ট ডেস্টিনেশনের সঙ্গে তুলনা করেন।
দার্জিলিং-এর চা-পাতা, টয়ট্রেনের সঙ্গে একযোগে যে নাম উচ্চারিত হয় তা হলো কমলালেবু। মজার বিষয় হলো, দার্জিলিং-এর কমলালেবুর সিংহভাগই উত্পন্ন হয় সিটং-এই। শীতকাল থেকে মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত ঘুরতে গেলে গাছে গাছে ঝুলে থাকতে দেখবেন কমলালেবু। তারপর কমলালেবু না থাকলেও এখানকার সৌন্দর্য বিন্দুমাত্র কমে না। বরং বর্ষায় এর অন্য রূপ। সিটং যেন এক টুকরো ইউরোপ।
সিটং-এর উচ্চতা চার হাজার ফুটের কাছাকাছি হলেও ঠান্ডা কালিম্পং-মংপুর তুলনায় বেশি। মংপু থেকে সিটং সাড়ে আট কিলোমিটার। পথে পড়বে রিয়াং নদী। স্থানীয়দের প্রিয় পিকনিক স্পট রিয়াং নদীর পার। সঙ্গে সারাক্ষণই হিমেল বাতাস বয় নদীর জলের আশপাশে। নদীর উত্সও কাছেই একটি ঝরণা থেকে। নদীর অল্প জল যদিও গতি ভালই থাকে। পার হয়েই ওপারে যেতে হবে। এরপর আরও কিছুটা চড়াই-উত্রাই পার হয়ে সিটং পৌছতে হবে। পথে যেতে যেতেই দুপাশে নজরে পড়বে কমলালেবুর বাগান। নানা আকারের কমলা ঝুলছে। কোনওটা সবুজ, কোনওটা কমলা, কোনওটা হলুদ।
সিটংয়ের মূল আকর্ষণ কমলালেবু বাগান হলেও বছরের সব সময় এখানে ঠাণ্ডা স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া থাকে।এমনিতেও বেশ নয়নাভিরাম। এছাড়াও এখানে সিঙ্কোনা চাষ হয়। মংপুর মতোই এটিও সিঙ্কোনা চাষের জন্য বিখ্যাত। এর বাইরে হয় বড় এলাচ। আছে সব ধরনের শাকসবজি। ফলের মধ্যে কমলালেবু ছাড়াও হয় কলা, পেঁপে। আর ফুলঝাড়ু যে গাছ থেকে হয়, তারও চাষ হয় সিটং-এ।
এখানে রয়েছে শতাব্দী প্রাচীন একটি গুম্ফা, বাঁশ ও মাটি দিয়ে তৈরি। গুম্ফাটি আপার সিটং-এ। ট্রেক করে উঠতে হয়। এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দারুণ ভিউ পাওয়া যায়। একটি অতি প্রাচীন গির্জাও রয়েছে। গির্জাটি একেবারে হোম স্টে লাগোয়া। এটিও বাঁশ আর মাটির তৈরি ছিল আগে, সম্প্রতি সংস্কার হয়ে পাকা করা হয়েছে। তবে স্থাপত্যে পুরোনো ঐতিহ্য বজায় থাকছে।
সিটং হলো পাখির স্বর্গ। মহানন্দা স্যাংচুয়ারি কাছেই। কাছেই লাটপাঞ্চার এখানকার এক আকর্ষণীয় টুরিস্ট স্পট। লাটপাঞ্চার ছাড়াও কাছাকাছির মধ্যে আছে বাগোড়া, চটকপুর। কার্শিয়ং, মিরিক হয়েও আসা যায় সিটং। অর্থাত্ এই অঞ্চলকে ঘিরেই অনেকগুলি স্পট দেখে নেওয়া যায়। ছোট ছোট ট্রেকিং রুটও আছে সিটং-এ।
কীভাবে যাবেন: এনজেপি স্টেশন থেকে শিলিগুড়ি তেনজিং নোরগে বাসস্ট্যান্ড থেকে কিংবা বাগডোগরা এয়ারপোর্ট থেকে গাড়িতে সরাসরি সিটং যেতে পারেন। গাড়িভাড়া গড়ে ৩০০০ টাকা। তবে সময় ও সিজন ভেদে কমবেশি হতে পারে। অনেকে শিলিগুড়ি থেকে বাইক ভাড়া নিয়ে চলে যান। নিজেরাই যেখানে ইচ্ছে ঘুরে ফিরে যান। তাতে গাড়িভাড়ার চেয়ে অনেক কম খরচ হয়। প্রচুর হোম স্টে আছে। টুরিজম দফতরের সাইটেই খোঁজ পাবেন। থাকা-খাওয়া প্রতিদিন জনপ্রতি ১,২০০ থেকে ১৫০০ টাকা।


