স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে বাগনান হাইস্কুলের নাম কিভাবে জড়িয়েছিল জানেন? হাওড়ার স্বাধীনতা সংগ্রামী হরেকৃষ্ণ দাসকে মনে আছে

স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে বাগনান হাইস্কুলের নাম কিভাবে জড়িয়েছিল জানেন? হাওড়ার স্বাধীনতা সংগ্রামী হরেকৃষ্ণ দাসকে মনে আছে
13 Aug 2023, 08:45 PM

স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে বাগনান হাইস্কুলের নাম কিভাবে জড়িয়েছিল জানেন? হাওড়ার স্বাধীনতা সংগ্রামী হরেকৃষ্ণ দাসকে মনে আছে

 

সুলেখা চক্রবর্তী, হাওড়া

 

৭৬ তম স্বাধীনতা দিবস পালিত হবে সাড়ম্বড়ে। এই স্বাধীনতা দিবস দিনটি দেখতে আমাদের দেশের হাজারো বিপ্লবী জীবন দিয়েছেন। তাদের কেউ কেউ যেমন প্রচারের আলোয় এসেছেন অনেকে আবার প্রচার পাননি। কিন্তু স্বাধীনতা আনার জন্য তাঁদের অবদানও কম ছিল না। এমনই এক বিপ্লবীর নাম বাগনানের হরে কৃষ্ণ দাস। বাগনানের হিজলক গ্রামের হরেকৃষ্ণ মাস্টার বলেই পরিচিতি পান স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে। কিন্তু কেন হরে কৃষ্ণ দাস বিপ্লবী? জানা গিয়েছে বাঘা যতীনের সহভাগী ছিলেন তিনি। বরযাত্রীর ছদ্মবেশে বাঘাযতীনকে মেদনীপুর ক্যানেল ধরে বুড়িবালামের তীরে যাওয়ার সময় সঙ্গী ছিলেন। পরে ফিরে আসেন। তাই বাঘাযতীন কে বুড়িবালামের তীরে যাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন হরেকৃষ্ণ দাস।

সালটা ছিল ১৯২৬। বাংলার যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ওরফে বিপ্লবী বাঘাযতীন আত্মগোপন করে থাকবেন বাগনান হাইস্কুলে। বলা ভালো বুড়িবালামের তীরে যাওয়ার আগে বাগনান হাই স্কুল হয়ে উঠেছিল তাঁর অস্থায়ী ঠিকানা। কিন্তু দিনের বেলায় ছদ্মবেশে থাকলেও রাত্রি বেলা খাবার যোগাবে কে?-এই প্রশ্ন বাঘাযতীনের অনুগামীদের মাথায় ঘোরাফেরা করছিল। তখন হিজলক ও পাতিনান গ্রাম ছিল জঙ্গলে পরিপূর্ণ। গুটি কয়েক মানুষের বসবাস। আর মাটির রাস্তায় কাদা ভেঙে পড়াশোনা করতে যেতেন হরে কৃষ্ণ দাস। অবশ্যই বাগনান হাই স্কুলে। গভীর রাত হলে হরে কৃষ্ণ দাস গামছাতে পুঁটুলি বেঁধে  খাবার পৌঁছে দিতেন বাগনান হাইস্কুলে। তারপর সেখান থেকে দিন কয়েক পরে বিপ্লবী বাঘাযতীন চলে যান  বুড়ি বালামের তীরে। বাকিটা সকলে জানা। এক অসম লড়াই য়ে প্রাণ দেন বাঘাযতীন। তবু ব্রিটিশ শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করেন নি। এরপর বাঘা যতীনের দলবলকে খুঁজতে ব্রিটিশ সরকার হানা দিয়েছিল বাগনান পর্যন্ত।  উল্লেখ্য আত্মগোপন করতে হয়েছিল হরে কৃষ্ণ দাস কেও। তিনি ও তার সহযোগী সতীশ সিংহ,ফেলুরাম চক্রবর্তী,ভূধর বিশ্বাস,লক্ষন রায় শিলাইদহে আশ্রয় নিয়েছিলেন  কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের আশ্রমিক পরিবেশে। শোনা যায় এই বিপ্লবীদের আশ্রমিক পরিবেশের ধ্যান ধারণা, কর্মকাণ্ড ভালো লেগেছিল কবিগুরুর। প্রশংসাও করেছিলেন তিনি। কিন্তু বাগনানে ফিরে আসতেই গ্রেফতার হতে হয়েছিল হরে কৃষ্ণ দাস সহ চারজনকে। ছয় মাস জেল খাটার পর প্রমাণ অভাবে বেকসুর খালাস পান হরে কৃষ্ণ দাস ও আরও চার জন। পরে দেশ স্বাধীন হয়। এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে ঝাঁপিয়ে পড়েন হরে কৃষ্ণ দাস। চাকরি পান পাতিনান প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। শিক্ষাকে জনমুখী করতে কাজে নামেন তিনি। বিপ্লবী হরে কৃষ্ণ দাস এলাকায় হয়ে উঠলেন হরে কৃষ্ণ মাস্টার। কালের নিয়মে ইহলোক ত্যাগ করেছেন হরে কৃষ্ণ দাস। প্রসঙ্গত হরে কৃষ্ণ দাসের বৈপ্লবিক চিন্তাভাবনাকে স্বীকৃতি দিতে ভারত সরকার তার স্ত্রী অমিয়বালা কে সাম্মানিক দেওয়ার কথা জানিয়েছিল। কিন্তু সবিনয়ে সেই সাম্মানিক নিতে অস্বীকার করেন হরে কৃষ্ণ বাবুর যোগ্য স্ত্রী। সরাসরি জানিয়ে দিয়েছিলেন, " আমার স্বামী সাম্মানিকের জন্য ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন নি'।

পরবর্তী সময়ে হরে কৃষ্ণ বাবুর নাতি কল্যাণ দাস, সুরজিৎ দাস, কাশীনাথ কর, মৃদুলা দাসদের চেষ্টায় স্মরণ করা হচ্ছে হরে কৃষ্ণ দাস কে। স্বাধীনতা দিবসের দিন হরে কৃষ্ণ দাসের স্মৃতিকে এবং তার লড়াইকে তার বৈপ্লবিক চেতনাকে তুলে ধরতে তার উত্তরসুরিরা উদ্যোগ নিয়েছেন। জাতীয়তাবাদী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই দিনটি যেমন পালন করা হবে তেমনি বিপ্লবী হরে কৃষ্ণ দাস কেউ স্মরণ করা হবে জানালেন হরে কৃষ্ণ বাবুর নাতি সুরজিৎ দাস। এখন স্মৃতি ফলক, পোস্টার, ব্যানার- এই সমস্ত কিছুতেই সেজে উঠছে বিপ্লবী হরে কৃষ্ণ দাসের বসত ভিটে। বলাই বাহুল্য রীতিমতো উৎসাহ তৈরী হয়েছে বাগনান জুড়ে।

Mailing List