হাওড়ার ঘোড়াঘাটা বান্ধব সমিতির কথা জানেন? একশো পা দিতে চলা এই ক্লাবের দুর্গা মন্ডপ সেজে উঠবে লাল হলুদে

হাওড়ার ঘোড়াঘাটা বান্ধব সমিতির কথা জানেন? একশো পা দিতে চলা এই ক্লাবের দুর্গা মন্ডপ সেজে উঠবে লাল হলুদে
সুলেখা চক্রবর্তী, হাওড়া
ডুরান্ড কাপের রেশ এখনো কাটেনি। সামাজিক মাধ্যমে মোহনবাগান- ইস্টবেঙ্গল এর সমর্থকদের মধ্যে জোর তর্ক চলছে। ইলিশ এবং চিংড়ির লড়াইয়ে চিংড়ি অর্থাৎ মোহনবাগান জিতে গিয়েছে। কিন্তু এক মোহনবাগানী নিজের মাথায় মাটি বহন করে তৈরি করেছিলেন একটি ফুটবল মাঠ। হাওড়ার এক প্রান্তে সেই মাঠে খেলেই একটা সময় মোহনবাগানী রতন সেন কলকাতার ফুটবল মাঠে দাপিয়েছেন। হাওড়ার ফুটবলে বাগনানের ঘোড়াঘাটার বাসিন্দা রতন সেন একটি আবেগের নাম। যিনি নিজের হাতে তৈরি ঘোড়াঘাটা বান্ধব সমিতির ফুটবল মাঠে খেলে পরবর্তী সময়ে কলকাতা মাঠ যেমন দাপিয়েছেন, তেমনি এলাকায় এক ফুটবল আবেগ তৈরি করে গিয়েছেন।
জানা গিয়েছে প্রয়াত ফুটবলার রতন বাবু মহমেডান, মোহনবাগান, আইএফএ শিল্ড, অলিম্পিক সহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ফুটবল পায়ে দিয়ে রীতিমতো দাপট দেখিয়েছিলেন। বলাই বাহুল্য, শুধুমাত্র ফুটবল খেলার জন্যই তৈরি হয়েছিল একটি আস্ত ক্লাব। যার নাম ঘোড়াঘাটা বান্ধব সমিতি। শুধু তাই নয় এই এলাকার জমিদার প্রয়াত রমেন্দ্রনাথ সেন নিজে ফুটবল মাঠ তৈরির জন্য মাথায় করে মাটি বয়ে এনেছেন- এমন কথাও শোনা যায় ঘোড়াঘাটার আনাচে কানাচে। সে প্রায় ১০০ বছর আগেকার কথা। ভারতবর্ষের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল তখন স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় তোলপাড়। সেই সময় জমিদার রমেন্দ্রনাথ সেন অনুভব করলেন এলাকার ছেলেদের আরও শক্তপোক্ত করে তুলতে হবে। মাধ্যম হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছিলেন ফুটবলকে। ভালোবাসতেন ফুটবল খেলতে সঙ্গী সাথীদের নিয়ে এবং কচিকাঁচাদের নিয়ে রীতিমতো ফুটবল খেলতেন। পাশাপাশি পাখি শিকার করে পাখির মাংস খেতেন বলেও এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে। একদিন রমেন্দ্রনাথ সেন বৃদ্ধ বাবার কাছে দাবি করে বসলেন সঙ্গী সাথীদের নিয়ে ফুটবল খেলার জন্য জায়গা দিতে হবে। ছেলের এই দাবিকে মান্যতা দিয়ে এক বিশাল জায়গা দিয়ে দিলেন রমেন্দ্রনাথ সেন এর বাবা। তৎকালীন সময়ে ঘোড়া খাতা এলাকা ছিল বেশ কিছু জঙ্গল আকীর্ণ এবং গুটি কয়েক মানুষের বাস এবং জলা জমিতে পরিপূর্ণ। স্বাভাবিকভাবেই জলা জমি কে মাঠে পরিণত করতে বাছাই করে দল বল নিয়ে মাটি আনতে ছুটলেন জমিদার রমেন্দ্রনাথ সেন। সেন বংশের বেশ কিছু ছেলেপেলের সঙ্গে বাড়তে লাগলো আশপাশের আরও বেশ কিছু ছেলে ছোকরা। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ডাক্তার অমিয় সেন রতন চন্দ্র সেন রমনী মোহন সেন বাদল সেন দাশরতী সেন ফণীভূষণ সেন বিনয় সেন রানা পরিতোষ সেন প্রমূখ। বছরখানেকের চেষ্টায় জলাভূমি বুজে তৈরি হয়ে গেল আস্ত একটা মাঠ আর সবাইকে নিয়ে তৈরি করে ফেললেন বান্ধব সমিতি নামে একটি ক্লাব। যা এ বছর শতবর্ষে পদার্পণ করেছে।
বলাই বাহুল্য, হাওড়া জেলার ফুটবলের গর্ব রতন চন্দ্র সেন এর স্মৃতি বিজড়িত বান্ধব সমিতি কালের নিয়মে একটু একটু করে উন্নতি করেছে। এখন ক্যারাটে ফুটবল ভলিবল জিমন্যাস্টিক সহ বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে যেমন জড়িয়ে গেছে তেমনি বাগনান এলাকায় শিশুদের নিয়ে সার্বিক বিকাশের জন্য শিশু উৎসব নামে একটি অনুষ্ঠান তারা করে যা রীতিমতো প্রশংসনীয় বছরের পর বছর ধরে। ক্লাবের অন্যতম কর্মকর্তা তাপস সেন ,সুপ্রিয় সেন জানান অতীতে সেন পরিবার এই এলাকার জমিদার ছিল স্বাভাবিকভাবেই এই এলাকার পরিমণ্ডল উন্নয়নের জন্য সেন পরিবারের ভূমিকা যেমন রয়েছে তেমনি তাদের সহযোগিতা করার জন্য বহু মানুষের আগমন বিশেষ প্রশংসার দাবি রেখেছে। এর মধ্যেই জানা গিয়েছে এবছর দুর্গাপুজোর জন্য বান্ধব সমিতি থিম হিসেবে বেছে নিয়েছে ফুটবলকেই। এ বছরের বান্ধব সমিতির ফুটবল টিমের দুর্গা মন্ডপ কিন্তু সেজে উঠবে লাল হলুদে। সে যাই হোক এখন ফুটবল আবেগ আজও ধরে রেখেছে হাওড়া ঘোড়াঘাটার বান্ধব সমিতি।


