আপনারও কি রয়েছে পিতৃদোষ? দূর করার উপায় জেনে নিন

আপনারও কি রয়েছে পিতৃদোষ? দূর করার উপায় জেনে নিন
আনফোল্ড বাংলা প্রতিবেদন: “পিতৃ” অর্থাৎ পূর্বপুরুষ। এদের আশীর্বাদ যেমন আমাদের জীবনে খুশির জোয়ার নিয়ে আসতে পারে, তেমনি আবার যখন অভিশাপ দেন তখন তার বেড়াজালে আমাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। কষ্ট ও নানান জটিলতা হয় নিত্যসঙ্গী। জ্যোতিষশাস্ত্রে প্রেতবাধা বা পিতৃ দোষ বলা হয়ে থাকে। এই প্রকার দোষ থেকে কিভাবে উদ্ধার পাবেন এবং এই সম্পর্কে বিশদে জেনে নিন -
পিতৃ দোষ কি?
জ্যোতিষ অনুসারে, চন্দ্র ও সূর্য হলেন আমাদের পিতৃকারক গ্রহ বা পিতাতুল্য। যেহেতু চন্দ্র ও সূর্য থেকেই এই সৌরমণ্ডলে প্রাণের বিকাশ ঘটেছে এবং তাদের উষ্মাতেই জগৎ পরিচালিত হয় সেই জন্য এইরকম ব্যাখ্যা করা হয়েছে। জন্মছকে যদি এই দুই গ্রহ সংযোগ কোনো দুষ্ট বা খারাপ গ্রহের সাথে তৈরি হয় তবে জাতকের জীবনে সমূহ বিপদ ঘনিয়ে আসে।
পিতৃ দোষ কিভাবে সৃষ্টি হয়?
কোনো ব্যক্তি নিজের হাতে তার বাবাকে হত্যা করলে, আঘাত করলে বা ভুতপূর্ব গুরুজনদের অপমানজনক কটুকথা শোনালে, পরবর্তী জন্মে সেই ব্যক্তি পিতৃ দোষ এর ফলভোগ করে। কোষ্ঠিতে পিতৃ দোষ নির্দেশ করে যে আগের জন্মে সেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পূর্বপুরুষ কোনো কারণে দুঃখের মধ্যে নিজেদের সময় যাপন করছেন।
মৃত্যুর পর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ঠিকঠাক যথোচিত মর্যাদা বা শাস্ত্রীয় নিয়মকানুন মেনে সম্পন্ন না হলে বা গুরুজনের কোনো ইচ্ছে মৃত্যুর আগে অপূর্ণ থেকে গেলে আত্মা অতৃপ্তিতে ভোগে ও ক্রুদ্ধ হয়। এই অবস্থায় পিতৃ দোষ সৃষ্টি হয়ে থাকে। তারা ইচ্ছে পূরণের জন্য উত্তরসূরিদের চাপ দেয়, স্বপ্ন বা সংকেতের দ্বারা। এর ফলে সেই পরবর্তী পুরুষরা নিদারুণ কষ্ট ও পীড়ার মধ্যে থাকেন। সেটাই জন্মছকে প্রতিফলিত হয়ে থাকে।
দেখে নিন আপনার জন্মছকে গ্রহের রাশিগত অবস্থান আছে কি না!
লগ্ন থেকে পঞ্চম ঘরে সূর্য, মঙ্গল ও শনির যদি একত্রে উপস্থিতি থাকে এবং সেই সাথে রাহু ও বৃহস্পতির যুগ্ম অবস্থান যদি থাকে অষ্টম অথবা দ্বাদশ ঘরে।
রাহু বা কেতু পঞ্চমভাবে বা পঞ্চম্পতির সাথে সংযোগ স্থাপন করে তবে পিতৃ দোষ ও সন্তান পালনে বাধা আসে।
রাহু যদি লগ্নে অবস্থান করে।
রাহুর দ্বিতীয় গৃহে শুভগ্রহ ব্যতীত অবস্থান।
সূর্যের নবম বা পঞ্চম গৃহে থেকে গ্রহণ যোগ সৃষ্টি করা।
চন্দ্র এর নিচস্থ অবস্থান বা রাহু বা পাপ শনির সংস্পর্শ যুক্ত হলে।
রাহু ও শনি যদি একসাথে পঞ্চম বা একাদশতম ঘরে থাকে।
চন্দ্র মাতৃকারক গ্রহ হিসেবে পঞ্চম বা একাদশ গৃহে নিচস্থ হলে বা শনি ও রাহু দ্বারা পীড়িত হলে বা চন্দ্র স্বয়ং কেতু দ্বারা ক্লিষ্ট হলে।
শুক্র, শনি ও রাহুর পঞ্চম গৃহে একসাথে যোগ তৈরি হলে এবং সূর্য যদি অশুভ এনার্জির কবলে আসে।
পিতৃ দোষ থেকে মুক্তি পাবার কিছু উপায়:
পিতৃ দোষ কাটানো বেশ শক্ত ব্যাপার যদিও কিছু টোটকা ও উপায় আছে যেগুলো দিয়ে আপনি সুরাহা পেতে পারেন।
মহালয়ার দিন ভোরে উঠে নদীতে পিতামাতা হীনরা বা যাদের দোষ আছে এবং তাদের পূর্বপুরুষদের স্মরণ করে, তাদের আত্মার শান্তি স্বস্তয়ন করে(চাইলে ব্রাহ্মণ দিয়েও করতে পারেন) তর্পণ করলে দোষ কাটে।
গঙ্গায় হাতে কুশার্ঘ নিয়ে পৃথিবীর সমস্ত পিতৃপুরুষের শান্তি ও আশীর্বাদ কামনা করে অঞ্জলি দান করলে দোষ অনেকাংশে খণ্ডন হয়।
পিতৃ দোষ থেকে পরিত্রাণ পেতে চাইলে পাত্রে কালো তিল ও জল নিয়ে অমাবস্যা তিথিতে ভোরে সূর্যদেবের উদ্দেশ্যে অর্পণ করলে শুধু পিতৃ দোষ নয় শনির সাড়ে সাতির প্রভাব থেকেও ছাড়া মেলে।
শনিবার কাঁচা দুধ ও কিছু তিল একসাথে মেখে অশ্বত্থ গাছের নিচে ভক্তিভরে নিবেদন করুন। ত্রিদেব এতে তুষ্ট হন ও দোষ খণ্ডন করেন।
ভগবান শিবের চেয়ে ক্ষমাশীল আর কে আছেন বলুন? তিনি চাইলে যেকোনো দোষ কর্পূরের মতো উবে যায়। আর ভোলানাথকে তুষ্ট করাও সোজা। শিবলিঙ্গের সামনে স্নান করে শুদ্ধচিত্তে বসে ধুপ ও প্রদীপ জ্বালান। এরপর একমনে ভক্তিভরে মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করুন। মার্কেন্ডেয় পুরান অনুযায়ী এই মন্ত্রের প্রভাবে শুধু পিতৃ দোষ নয় কালসর্প দোষ, বাস্তুদোষ ইত্যাদি থেকেও রেহাই পাওয়া যায়।
এছাড়াও ঘরোয়া পশুপালন, ইষ্টদেবের অর্চনা ও কুকুরদের ভোজন করালেও উল্লেখযোগ্য ফল পাওয়া গেছে।


