মাদুর কাঠির গাছ থেকে নতুন প্রাকৃতিক ফাইবার আবিস্কার, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় ও কলকাতার লেডি ব্রেবর্ণ কলেজের মুকুটে নয়া পালক

মাদুর কাঠির গাছ থেকে নতুন প্রাকৃতিক ফাইবার আবিস্কার, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় ও কলকাতার লেডি ব্রেবর্ণ কলেজের মুকুটে নয়া পালক
আনফোল্ড বাংলা প্রতিবেদন: পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের মাদুরের কথা কে জানে? যে নাম এখন পৃথিবী জোড়া বললেও অত্যুক্তি হয় না। সেই মাদুর কাঠি মেলে যে উদ্ভিদ থেকে (বিজ্ঞান সম্মত নাম সাইপেরাস পানগৌরী) তা নিয়ে গত ১০ বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (vidyasagar university) উদ্ভিদ ও বনবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক গবেষক অধ্যাপক ডঃ অমল কুমার মণ্ডল। তাঁর সঙ্গে গবেষনায় যুক্ত আরও কয়েকজন গবেষক। তঁরা হলেন অনুপ কুমার ভুঁইয়া, ধীমান মণ্ডল, অয়ন কুমার নস্কর এবং কলকাতা লেডি ব্রেবর্ণ কলেজের (Lady Brabourne College) অধ্যাপিকা তথা বিভাগীয় প্রধান ডঃ সংযুক্তা মণ্ডল পারুই। জৈব-গবেষণাগার আর সমগ্র গবেষনাটির সঙ্গে সহযোগিতার হাতটি বাড়িয়ে দিয়েছেন ভারত সরকারের স্বনাম ধন্য প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি খড়্গপুরও।
অমলবাবু জানান, আমরা জানতাম আগে এই মাদুর কাঠির উৎপত্তি হয় সাইপেরাস পানগৌরী (Cyperus pangouri) নামক সাইপেরাস গোত্রের অন্তর্ভুক্ত একটা উদ্ভিদ থেকে। কিন্তু আমাদের গবেষণায় উঠে এলো আর এক নতুন উদ্ভিদ নাম সাইপেরাস প্ল্যাল্টিটায়ালিস (Cyperus platystylis)। যা একই গোত্রের অন্তর্ভুক্ত একটা উদ্ভিদ। সাম্প্রতিক সেই গবেষনা পত্র বিশ্বের প্রথম শ্রেণীর গবেষণা পত্রিকা “নেচার” এ স্থান পেয়েছে। অধ্যাপক অমল কুমার মণ্ডল ও অধ্যাপিকা সংযুক্তা মণ্ডল পারুই সকল গবেষকদের অভিনন্দন ও অভিবাদন জানিয়েছেন। সঙ্গে আই আই টি খড়গপুর ইন্সট্রুমেন্টেশন বিভাগ কেও আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তাঁদের সহযোগিতা ছাড়া এই আবিস্কার সম্ভব হতো না।
উল্লেখ্য, অনুপ কুমার ভুঁইয়া সবং এই মাদুর কাঠি নিয়েই তার পি এই ডি গবেষণা পত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা করেছেন তাঁর পি এইচ ডি ডিগ্রির জন্য। তার মধ্যেই এতো বড় সাফল্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তথা বিভাগের নাম পৃথিবীতে বিজ্ঞান জগতে একটা স্থান করে দেবে। আমাদের ভারতবর্ষে প্রকৃতিক ফাইবার মিশন চলছে। সারা ভারতবর্ষে যতো ধরনের প্রাকৃতিক ফাইবার উৎপন্নকারী যে ধরনের উদ্ভিদ রয়েছে তাঁদের উদ্ভিদ বিজ্ঞানে চিহ্নিতকরণ করা এবং তাদের মধ্যে যে গুনাগুন রয়েছে সেই গুলোকে সনাক্ত করণ করে পেটেন্ট নেওয়া প্রয়োজন। আর এই ধরনের প্রাকৃতিক ফাইবার কিন্তু পরিবেশ বান্ধবও বটে। যা কিনা কৃত্রিম ফাইবারের সঙ্গে সব দিক থেকে টেক্কা দেবে। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন, অধ্যাপক অমল কুমার মণ্ডল ২০১৮ সালে আগামী পাঁচ বছরের জন্য এই প্রকৃতিক ফাইবারের উপর ইউজিসি স্পেশাল এসিট্যান্স পোগ্রাম-২ এ প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন। তিনি এই প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর ছিলেন, সঙ্গে ডিজিট্যাল হারবেরিয়াম। এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিল জঙ্গল মহলের প্রাকৃতিক রঙ উৎপন্নকারী, হেমিপ্যারাসাইট উদ্ভিদ, প্রাকৃতিক মৃত্রিকা ধরে রাখা উদ্ভিদ।
গবেষকগণঃ
অনুপ কুমার ভুঁইয়া, গবেষক, বিদ্যাসাগর বিশবিদ্যালয়, উদ্ভিদ ও বন বিদ্যা বিভাগ, টেক্সোনমি, বায়োসিস্টেমেটিক্স এবং মলিকিউলার ট্যাক্সোনমি গবেষণাগার।
ধীমান মণ্ডল, গবেষক, বিদ্যাসাগর বিশবিদ্যালয়, উদ্ভিদ ও বনবিদ্যা বিভাগ, টেক্সোনমি, বায়োসিস্টেমেটিক্স এবং মলিকিউলার ট্যাক্সোনমি গবেষণাগার।
অধ্যাপিকা ডঃ সংযুক্তা মণ্ডল পারুই, লেডি ব্রেবর্ণ কলেজ, কলকাতা, বিভাগীয় প্রধান, জীববিদ্যা বিভাগ, জৈব রসায়ণ গবেষণাগার
অধ্যাপক ডঃ অমল কুমার মণ্ডল, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় মেদিনীপুর, প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান, উদ্ভিদ ও বনবিদ্যা বিভাগ, টেক্সোনমি, বায়োসিস্টেমেটিক্স এবং মলিকিউলার ট্যাক্সোনমি গবেষণাগার।
........


