মারিট্যাল রেপের বিরুদ্ধে কী বার্তা দিল পরিচালক সায়ন্তন ঘোষালের নতুন ওয়েব সিরিজ 'সম্পূর্ণা'?

মারিট্যাল রেপের বিরুদ্ধে কী বার্তা দিল পরিচালক সায়ন্তন ঘোষালের নতুন ওয়েব সিরিজ 'সম্পূর্ণা'?
আনফোল্ড বাংলা প্রতিবেদন: সম্পর্কে 'কনসেন্ট' কথার অর্থ ও গুরুত্ব বোঝে না এমন মানুষই চারপাশে বেশি দেখতে পাওয়া যায়। সম্পর্কে গেলে প্রেমিকার সঙ্গে যখন যা খুশি করার যেন একটা অদৃশ্য ছাড়পত্র থাকে। এহেন কাঠামোয় ম্যারিটাল রেপ বিষয়টি যেন কিছু মানুষের কাছে সোনার পাথরবাটির মতো। বিয়ের পরে তো স্ত্রীর শরীরের মালিকানা স্বামীর কাছেই! স্বামী কি কখনও স্ত্রীকে ধর্ষণ করতে পারে নাকি? সমাজের এই গতে বাঁধা প্রশ্নগুলিকেই উত্তর দিতে পরিচালক সায়ন্তন ঘোষাল মারিট্যাল রেপ'কে কেন্দ্র করে বাংলা ভাষায় ওয়েব সিরিজ বানিয়ে ফেলেছেন। সিরিজের নাম 'সম্পূর্ণা'।
পরিবারে ছোট ছেলে রুকু তথা রক্তিমের বিয়ে নিয়ে তোড়জোড়। 'মেয়ে দেখা' পর্ব মোটামুটি সারা। রুকুর পছন্দ নন্দিনীকে। তবে সেখানে বাধ সেধেছে ঠিকুজি কুষ্টি। এই সমস্যার সমাধান করতে হাজির বাড়ির বড় বউ সম্পূর্ণা। এক সময়ে সমাজকর্মী হিসেবে কাজ করলেও, এখন পরিবারকেই আঁকড়ে ধরে বাঁচা তার। তবে সম্পূর্ণা সেটা নিজের ইচ্ছেয় বেছে নিয়েছে। পরিবারের চাবি তার হাতেই। তাই দেওরের সঙ্গে নন্দিনীর বিয়ের দায়িত্ব নেয় সে।
মোটা অঙ্কের বেতন পাওয়া রুকু, বাড়ির ছোট ছেলে, ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভাল। এমন ছেলের আবার মেয়ের অভাব হয় নাকি। এমন সুপাত্রর সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিতে পেরে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে পাত্রীর মা বাবাও। সেভাবে চেনা জানা না থাকলেও, ইচ্ছে অনিচ্ছের কথা না ভেবেই পাত্র পাত্রী পৌঁছে যায় ফুল শয্যার রাতে। এমনটাই হয়ে এসেছে। কারণ সমাজ বলে দিয়েছে, এমনই করতে হয়। সেই নিয়ম মেনেই, ফুলশয্যার বিছানায় অপেক্ষারত লাজুক নন্দিনীর কাছে পৌঁছয় রুকু। নন্দিনীর মালিকানা এবার তার। চোয়াল শক্ত হয় রুকুর। পৌরুষ প্রকাশ করার সময় তার। নন্দিনী কী চাইছে তা জানার প্রয়োজনই মনে করে না সে। প্রথম রাতেই ম্যারিটাল রেপ-এর শিকার নন্দিনী।
কর্পোরেট সংস্থায় কর্মরত ভদ্র নম্র রুকুর ভিতরের শয়তানকে দেখে ফেলে নন্দিনী। তারপর ক্রমশ এগোয় গল্প। ৬ এপিসোডের এই ওয়েব সিরিজে ঘটনার ঘনঘটা নেই। ক্লাইম্যাক্সের জন্য টানটান অপেক্ষা নেই। শেষটাও হয়তো সামান্য প্রেডিক্টেবল। কিন্তু তবুও এই ওয়েব সিরিজ শেষ পর্যন্ত দেখতে ইচ্ছে করবে। এমন সাহসী ও জরুরি বিষয় নিয়ে সিরিজ করার জন্য কুর্ণিশ জানাতে হয় পরিচালক সায়ন্তন ঘোষালকে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সুখী দম্পতির ছবি, রং আলোয় ভরা বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানের পিছনে যে আরও অনেক কিছু লুকিয়ে আছে তা রয়েছে এই সিরিজে। সম্পূর্ণা চরিত্রটি যেন এমন দমবন্ধ করা গল্পে ভোরবেলার বাতাস। নিজের কেরিয়ার ছেড়ে সংসারে মন দিয়েছে। কিন্তু নিজের ইচ্ছেতেই। ভালবাসায় বাঁধতে জানে সম্পূর্ণা। কিন্তু ভুল দেখলে সেই ভালবাসার মানুষকে শাস্তি দিতেও তার হাত কাঁপে না।
অভিনয়ের কথা বলতে গেলে প্রথমেই সম্পূর্ণার চরিত্রে সোহিনী সরকারের কথা বলতে হয়। তিনি যে কতটা দক্ষ অভিনেত্রী, তা আরও একবার প্রমাণ করেছেন। নন্দিনীর চরিত্রে রাজনন্দিনী পালও যথাযথ। তাঁকে চরিত্রটি ভাল মানিয়ে গিয়েছে। বাকি অভিনেতারাও নিজেদের চরিত্রে মানানসই। এই সিরিজে খুব চমক খুঁজতে গেলে আপনি হতাশ হবেন। ট্যুইস্ট খুঁজেও লাভ নেই। কারণ রং চড়ানো গল্প নিয়ে এই সিরিজ নয়। খুব বড় বাস্তব নিয়ে কথা বলেছে 'সম্পূর্ণা', যা নিয়ে বরাবরই চুপ থাকতেই ভালবাসে সমাজ।


