দলের রাশ হাতে নেওয়ার পরীক্ষায় পাশ করলেন কী অভিষেক, কত নম্বর দিল কেশপুর?

দলের রাশ হাতে নেওয়ার পরীক্ষায় পাশ করলেন কী অভিষেক, কত নম্বর দিল কেশপুর?
06 Feb 2023, 10:45 AM

দলের রাশ হাতে নেওয়ার পরীক্ষায় পাশ করলেন কী অভিষেক, কত নম্বর দিল কেশপুর?

 

আনফোল্ড বাংলা প্রতিবেদন: বঙ্গ রাজনীতির ইতিহাসে একটি বহু চর্চিত নাম কেশপুর। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এই কেশপুর যার দখলে থাকবে, রাজ্যের ক্ষমতা দখলের ক্ষেত্রে সেই দলই নাকি এগিয়ে থাকবে। এমন কথা শোনা যায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতেই।

তার কারণ কী? কারণ, এই কেশপুরকে কব্জায় আনা কঠিক কাজ। যে দলকে ক্ষমতায় আনে কেশপুরের মানুষ, সেই দলের ছত্রছায়াতেই তাঁরা থাকতে চান। সহজে বিরোধীদের প্রবেশ কিছুতেই মানতে পারেন না। গুলি, বোমা, বন্দুক, বাড়ি পোড়ানো – বহু ঘটনার সাক্ষী থেকেছে কেশপুর। আর সে সবই হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। ক্ষমতা দখলের কারণে। ১৯৯৮ সাল থেকে যখন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী নেত্রী, তখন থেকে বারেবারে গিয়েছেন কেশপুরে। সভা করেছেন। কিন্তু সে সভায় বারেবারে আঘাত এসেছে। সভায় যাওয়া বাসে ভাঙচুর হয়েছে, এলাকার দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়েছে, যাতে মানুষ খাবার তো দূরের কথা জলও না পান। তাই জল, খাবার বয়ে নিয়ে যেত হত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায়।

পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ফের সেই কেশপুর নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। কারণ, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। আর সেই সূযোগে বিজেপি ঢুকে পড়া কেশপুরের অলিগলিতে। তারই জেরে গত বিধানসভা নির্বাচনেও কেশপুরের ১৫টি অঞ্চলের মধ্যে সাতটিতে জয়লাভ করেছিল বিজেপি। তা যে রীতিমতো তৃণমূলের কাছে দুশ্চিন্তার কারণ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটাতে কী করা হয়েছে? বারেবারে ব্লক সভাপতি থেকে যুব সভাপতি পরিবর্তন করা হয়েছে। কিছু অঞ্চলে অঞ্চল সভাপতি ছাড়াই চলছে দল। কিন্তু বারবার নেতা পরিবর্তন করে কী হয়েছে? দলের নেতাদের কথাতেই তা বলা যাক। তা হল, যত নেতা পরিবর্তন করা হয়েছে ততই বেড়েছে নতুন গোষ্ঠীর সংখ্যা।

পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণার হওয়ার আগেই সেই কেশপুরে এলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর আসার কথা ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই দলের অন্দরে একটা স্রোত বইছিল। সবাই একে অপরের দিকে মুখ চাওয়া চওয়া করা শুরু করেছিল। আর মনে মনে ভাবছিল, আবার কাকে পরিবর্তন করে। কাকে নতুন করে পদে নিয়ে আসে। একথা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কানেও পৌঁছয়নি, তা নয়। তাই তিনিও প্রকাশ্য মঞ্চেই বলেন, অনেকে ভেবেছিলেন অভিষেক আসছে। কার আবার চাকরি যাবে, কী হবে?

কিন্তু অভিষেক সে পথেই হাঁটলেন না। তিনি যে পথে হাঁটলেন, তা পাকা রাজনীতির চাল বললে অত্যুক্তি হয় না। যা শুধু জেলার রাজনৈতিক নেতা কেন, রাজ্য রাজনীতির কারবারীদেরও বোঝার বাইরে। তিনি কারও নাম করলেন না। প্রকাশ্যে কোন পদ ধরে বকা দিলেন না। শুধু বললেন, রেষারেষি করে দলের মাথা নত করার চেষ্টা হলে এমন ওষুধ দেব যে, ওষুধ কাজ করার পর বুঝতে পারবেন। তার আগেই শুধরে যান।

শোধরাতে হলে কেমন হতে হবে? তা আর মুখে বললেন না। মঞ্চে তুললে‌ন দুই সম্প্রদায়ের দুইজনকে। একজন রাজনীতি না করা উঁচাহারের বাসিন্দা। আর একজন পঞ্চায়েত সদস্যা এবং তাঁর স্বামী দলের বুথ সভাপতি। তাঁদের বাড়ির ছবি দেখিয়ে বোঝালেন, তাঁরা কতটা সৎ।

সভা থেকে নেমেও প্রতিটি মানুষের সঙ্গে কথা বললেন। সভায় বক্তব্য রাখার সময় শুধু বড় নেতা-মন্ত্রীদের নাম বলেই ছেড়ে দেননি, সমস্ত স্তরের নেতাদের নামই ধরেছেন। এমনকী, এক সময়ের কেশপুরের বিখ্যাত নেতা মহম্মদ রফিককেও গুরুত্ব দিলেন অন্যভাবে। সভামঞ্চ থেকে নামার পর অভিষেকের কাছে গিয়ে রফিক বললেন, বয়স হলেও লড়ে যাচ্ছি। মাথায় হাতটা রাখুন। প্রত্যুত্তরে অভিষেক কী বললেন? রফিকের কথায়, ‘‘উনি প্রথমেই বললেন, অনেকদিন পর আপনার সঙ্গে দেখা। কেমন আছেন? শরীর ভালো তো?শরীর ঠিক রাখুন। ভালো থাকুন। লড়াই এখনও শেষ হয়নি।’’

আর অভিষেকের সভা শনিবার শেষ হওয়ার পর থেকে এখনও তার রেস বইছে কেশপুরে। চা দোকান, পান দোকান থেকে পাড়ার মোড়- সর্বত্রই এক আলোচনা। সবার মুখে এক কথা, এবার করে খাওয়া নেতাদের দিন শেষ। অভিষেক নিজে নজর রাখছেন। নিজেই বলেছেন, উন্নয়ন দিয়ে মানুষের ঋণ ফেরাবেন। সেটা হলে আর চিন্তা থাকবে না। সেদিক দিয়ে কিন্তু কেশপুরের মানুষের দেওয়া নম্বরে বেশি নম্বর পেয়েই পাশ করে গিয়েছেন অভিষেক। আর যিনি কেশপুরের মতো জায়গায় পাশ করেন, তাঁর কাছে অন্য আর পাঁচটা জায়গা কিন্তু অনেক সহজ।

Mailing List