দেগঙ্গার প্রতিমার গয়না শিল্পীদের খুশির মাঝেও বাধ সাজছে অর্থ সংকট, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্থিক সাহায্যের আর্জি

দেগঙ্গার প্রতিমার গয়না শিল্পীদের খুশির মাঝেও বাধ সাজছে অর্থ সংকট, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্থিক সাহায্যের আর্জি
21 Sep 2022, 01:30 PM

দেগঙ্গার প্রতিমার গয়না শিল্পীদের খুশির মাঝেও বাধ সাজছে অর্থ সংকট, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্থিক সাহায্যের আর্জি

 

আনফোল্ড বাংলা প্রতিবেদন, দেগঙ্গাঃ বিগত দুই বছর করোনা কাটায় আটকে ছিল জীবন জীবিকা। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতেই হাসি ফুটেছে ঠাকুরের গয়না তৈরি শিল্পীদের মুখে। কিন্তু করোনার কারনে পুঁজির ঘাটতিতে চওড়া হাসিতে ছেদ পড়ছে শিল্পীদের। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আর্জি, তাদের জন্যও আর্থিক প্যাকেজের ব্যবস্থা করলে তাঁরা আবার পুরনো ছন্দে ফিরতে পারবে।

 

করোনা কালে সকলেরই ভাতে থাবা বসিয়েছিল করোনা। লাগাতার লকডাউনে জেরবার হয়েছে মানুষ। কর্মহীন হয়ে পড়েছিল বহু মানুষ। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ এবং জামানো টাকায় চালাতে হয়েছিল পেট। তার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও লাগাতার মূল্যবৃদ্ধির কারনে সাধারণ মানুষ দিশাহারা। সেই পরিস্থিতি মধ্যেই এবারের শবরোৎসব। 

দেগঙ্গার বিশ্বনাথপুর পালপাড়ায় প্রায় ঘরে ঘরে গড়ে উঠেছে প্রতিমার গয়না তৈরির মত কুটির শিল্প। এখানকার তৈরি ঠাকুরের গয়না চলে যায় কলকাতার পাইকারি বাজারে। সেখান থেকেই ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায়। সারা বছর ধরে শিল্পীরা তাকিয়ে থাকে দুর্গা পুজোর দিকে। ওই সময়ে ঠাকুরের গয়নার চাহিদা থাকে তুঙ্গে। এজন্য আগে থেকেই গয়না তৈরি করে রাখেন শিল্পীরা। তাই প্রায় সারা বছর ধরেই কাজ করতে হয় তাদের। এজন্য বহু শ্রমিক যুক্ত থাকে গয়না তৈরির কাজে।

কিন্তু গত দু'বছর করোনা আতঙ্ক থাবা বসিয়েছিল গয়না শিল্পীদের সংসারে। করোনা আতঙ্কে পুজো না হওয়ায় প্রতিমা বায়না দেয়নি অনেক ক্লাব কর্তারা। প্রতিমা বায়না না পড়ায় স্বাভাবিকভাবেই গয়নার কোন চাহিদা ছিল না। এবছর অবশ্য পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে। করোনার প্রকোপ সেভাবে নেই। রাজ্য সরকার ক্লাবগুলোর জন্য পুজোর অনুদান বাড়িয়ে ৬০০০০ টাকা করেছে। তাই জোর কদমে আনন্দের সাথেই রাজ্য জুড়ে পূজো হচ্ছে। পুজোর আনন্দে মেতে উঠেছে সবাই। কিন্তু সেই আনন্দে পুরোপুরি শামিল হতে পারছেন না দেগঙ্গার গয়না শিল্পীরা। গয়না শিল্পী সৌমেন পাল বলেন, গত দু বছরের তুলনায় এ বছর ব্যবসার অবস্থা ভালো। কিন্তু পুঁজির অভাবে ব্যবসা করতে পারছি না। গত দু বছরে সেভাবে পুজো না হওয়ায় ভারারে কিছুই আসেনি। প্রশান্ত পাল বলেন সরকার পুজোর আয়োজকদের কথা ভাবলেও যারা মূলত প্রতিমা সাজায় সেই সব শিল্পীদের কথা কেউ ভাবছেন না। একে দুবছর কাজ না হওয়াতে ভাঁড়ে মা ভবানী। তার উপর অত্যাধিক দাম জিনিসের। ফলে উভয় সঙ্কটে আমরা। তাদের দাবি এই পরিস্থিতিতে যেভাবে ইমাম, পুরোহিত এবং ক্লাব কর্তাদের সহযোগিতা করছে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর তেমন ভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানো হোক। তা না হলে হয়তো অকালেই বিসর্জন হয়ে যাবে এই শিল্প ও পরিবার। তারা সাহায্য পেলেই পূর্বের অবস্থায় ফিরতে পারবে।

 

দেগঙ্গার বিশ্বনাথপুর পালপাড়ার প্রতিমা গয়না শিল্পী সুশান্ত পাল, সৌমেন পাল বলেন গত দু'বছর পুজো না হওয়ায় প্রতিমার গয়নার কোন অর্ডার ছিল না। অনেকদিন ধরে বন্ধ রেখেছিলাম কারখানা। কোন গয়না তৈরি হয়নি। এবছর ক্লাবগুলোকে ৬০ হাজার করে টাকা দেয়ার ঘোষণা করেছে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে। তাই কিছুটা হলেও এখন আশার আলো দেখছেন দেগঙ্গার বিশ্বনাথপুর পাল পাড়ার গয়না শিল্পীরা। সুশান্ত পাল সৌমেন পালরা বলেন এবছর জোর কদমে পুজো হওয়ার আশা জাগায় কমবেশি কিছু অর্ডার আসছে। তবে যেসব গয়নাগুলো লাভের ভাগ বেশি সেই বড় ঠাকুরের কোন গয়নার বায়না সেভাবে পাচ্ছি না। তার উপর লকডাউনের পেট্রোপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির ফলে কাঁচামালের দাম বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। ফলে গয়না তৈরির খরচ বেড়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় গয়নার দাম পাচ্ছিনা। ব্যবসাটাকে টিকিয়ে রাখার জন্য অনেক সময় উৎপাদন খরচেই বিক্রি করতে হচ্ছে গয়না। ফলে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাদের। এখন কিভাবে সংসার চালাবো বুঝতে পারছি না। তাদের দাবি যেভাবে ইমাম পুরোহিত এবং ক্লাব তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর। সেভাবেই আমাদের পাশে দাঁড়ান সরকার।।

Mailing List