দিল্লির নেতার খরচ কোটির ঘরে, বাংলার নিচুতলা টাকাই পাচ্ছে না, ক্ষুব্ধ গেরুয়া কর্মীরা

দিল্লির নেতার খরচ কোটির ঘরে, বাংলার নিচুতলা টাকাই পাচ্ছে না, ক্ষুব্ধ গেরুয়া কর্মীরা
রাজীব ঘোষ
একেই দলের ঝান্ডা ধরার লোক পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলার অধিকাংশ বুথে একজন কর্মী পর্যন্ত নেই। দলের রাজ্য নেতাদের মধ্যে আকচাআকচি লেগেই রয়েছে। দিল্লির নেতারা যতই ধমক দিন না কেন, রাজ্যের বিজেপি নেতাদের মধ্যে পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। আর এবার তার উপরে উপরি সমস্যা হিসেবে বাংলার বিজেপির টাকা পয়সা খরচের ক্ষেত্রে হাত বেঁধে দিল কেন্দ্রীয় নেতারা।
ব্যাপারটা কি রকম? রাজ্যের ৪২ টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে অধিকাংশ জেলাতেই বিজেপির নিজস্ব পার্টি অফিস নেই। বেশ কিছু জেলায় ঘর ভাড়া নিয়ে অফিস চলছে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে যখন গেরুয়া শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করেছিলেন রাজ্য দখল করতে পারবেন, ঠিক সেই সময়ে সমস্ত জেলাতেই বিজেপির অফিস করার জন্য তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। কিন্তু যেই বিধানসভা নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয় ঘটলো, তারপরেই সেই উদ্যোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলায় বিজেপির জেলা সভাপতিদের প্রতি মাসে সাড়ে ১৭ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হয়। এবার সেই ভাতাতেও কোপ বসতে চলেছে। তার কারণ, সারা জেলা ঘুরে দলের জেলা সভাপতিকে যদি রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে হয়, তাহলে ওই টাকার মধ্যে গাড়ির তেলখরচ, আনুষঙ্গিক আরো খরচ মিটিয়ে চলা সম্ভবপর নয়। তার উপরে রয়েছে জেলা পার্টি অফিসের ঘর ভাড়া, ইলেকট্রিক বিল সহ অন্যান্য খরচ। বিজেপির জোন ইনচার্জ, জেলা ইনচার্জরা বর্তমানে গাড়ি ভাড়া, থাকা খাওয়ার খরচ কিছুই পাচ্ছেন না দলের তরফে। কোনো কোনো জেলায় বাধ্য হয়ে দলীয় পদাধিকারীরা নিজের খরচেই রাজনৈতিক কাজ করছেন।
তবে সেটা আর কতদিন সম্ভব? এর উপরে আবার বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটির তরফে বাংলা বিজেপির আর্থিক খরচ সংক্রান্ত বিষয় দেখভাল করার জন্য নজরদারি কমিটি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সেই কমিটিতে আবার দলের অসমের একজন নেতা রয়েছেন। আর এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলার বিজেপির পদাধিকারীরা যথেষ্টই ক্ষুব্ধ। বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটির তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যে সমস্ত সাংগঠনিক জেলায় পার্টি অফিস নেই তার জন্য ৭ থেকে ১০ হাজার বর্গফুটের অফিস তৈরি করতে হবে। প্রায় ৫ থেকে ৭ কাঠা জমির প্রয়োজন। এই নির্দেশ দেওয়া হলেও টাকা পয়সা খরচের ক্ষেত্রে লাগাম পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দলের কর্মীদের বক্তব্য, একেই যে সামান্য টাকা দেওয়া হতো, তাতে তো খরচ মেটানো যায় না। বহু দলীয় নেতারা কর্মসূচি করে টাকা পান না। তার উপরে কেন্দ্রীয় কমিটি যদি এইভাবে খরচের ক্ষেত্রে রাশ বেধেঁ দেয়, তাহলে দল করা সম্ভব নয়। এই প্রসঙ্গে বিজেপি বাঁচাও মঞ্চের তরফে বলা হয়েছে, কিছুদিন আগেই রাজারহাটের বৈদিক ভিলেজে বিজেপির পক্ষ থেকে রাজনৈতিক শিবির করা হয়েছিল। সেখানকার বৈভব একেবারে চোখে পড়ার মতো। প্রায় দু কোটি টাকা খরচ করা হয়। আর দলের জোন ইনচার্জ, জেলা ইনচার্জরা গাড়ি ভাড়া, থাকা খাওয়া খরচ, দলীয় কাজকর্মের জন্য কোনো পয়সাই পাচ্ছেন না। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দলের অন্দরের এই পরিস্থিতি বিজেপিকে যথেষ্ট ব্যাকফুটে দিতে পারে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।


