রজনীগন্ধা ফুলের চাষ অত্যন্ত লাভজনক, কিন্তু প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য জানা জরুরি

রজনীগন্ধা ফুলের চাষ অত্যন্ত লাভজনক, কিন্তু প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য জানা জরুরি
21 Feb 2022, 11:30 PM

রজনীগন্ধা ফুলের চাষ অত্যন্ত লাভজনক, কিন্তু প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য জানা জরুরি

 

 

আনফোল্ড বাংলা প্রতিবেদন: এক গোছা রজনীগন্ধা। আর তাতেই বাজিমাত। কারণ, রজনীগন্ধার সুবাস মনে প্রশান্তি আনে। বিশেষ করে রাতের বেলা এর আবেদন যেন অনন্য। তাই সন্ধেয় বাড়ি ফেরার সময় প্রিয়জনের জন্য এক গোছা রজনীগন্ধা নিয়ে যান অনেকেই। এছাড়াও বিয়ের শুভ অনুষ্ঠান থেকে মৃত্যু – সব ক্ষেত্রেই এই ফুল কাজে লাগে। স্বাভাবিক কারণেই এই ফুলের চাহিদাও বেশি। তাই এই পুল চাষে লাভও ভালো। এর জন্য যে বিশেষ খরচ হয় তেমনও নয়।

 

এবার জেনে নেওয়া যাক, এই ফুল চাষের পদ্ধতি।

 

এই ফুলের জন্য কেমন আবহাওয়া দরকার

 

এই ফুলের জন্য আর্দ্র আবহাওয়া ভালো। গড় তাপমাত্রা ২০থেকে ৩০সে. হওয়া দরকার। পর্যাপ্ত সূর্যোলোকসহ উপকূলীয় এলাকা ও বর্ষাকাল উৎপাদনের উপযুক্ত সময়। শীতকালে রজনীগন্ধা ফুলের উৎপাদন কিছুটা কমে যায়।

 

কোন ধরণের মাটি উপযোগী?

 

দো-আঁশ মাটি ভীষণ উপযোগী। উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি হলে ভালো। কারণ, হঠাৎ বৃষ্টি হলে সহজেই জল বের করে দেওয়া যায়। নাহলে জল জমে থাকলে গোড়া পচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। জলের জন্য প্রয়োজন সেচ ব্যবস্থা।  পিএইচের মান ৬.৫ থেকে ৭.৫ হলে খুব ভালো।

কোন সময় কন্দ লাগাবেন

 

রবি মরশুম আশ্বিন থেকে কার্ত্তিকের মাসে শেষ অর্থাৎ অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বর।

আর খরিফ মরশুমে চৈত্র থেকে বৈশাখের মাঝামাঝি অর্থাৎ মধ্য মার্চ থেকে এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত। প্রতি একর জমিতে ১২০০০ কন্দ লাগাতে হবে।

 

তবে দেখে নিতে হবে কন্দ যেনভালো জাতের হয়। কারণ, ভালো জাত হলে সহজে গাছ হেলে পড়ে না। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে। পরিবেশের কিছুটা তারতম্য হলেও বিশেষ ক্ষতি হয় না। তাছাড়াও এর কন্দ থেকেই পুণরায় নতুন গাছও লাগানো যায়। তখন ভালো ফল মেলে।

 

রোপনের পদ্ধতি

 

৫ ফুট বেড তৈরি করতে হবে। বেড তৈরির ৭ থেকে ১০ দিন পর কন্দ রোপণ করা উচিত। ০.৬ থেকে ১.১৮ ইঞ্চি ব্যাসের কন্দ লাগালে ভালো। দেখে নিতে হবে একটি সারির থেকে সারির দূরত্ব যেন ১২ ইঞ্চি থাকে। আর কন্দ হতে কন্দের দূরত্ব অবশ্যই ৮ ইঞ্চি রাখতে হবে। কন্দকে ৬ ইঞ্চি গভীরে লাগাতে হবে। কন্দ রোপণের আগে কন্দের সুপ্তাবস্থা (যে সময়টুকুতে বীজ গজাবে না তাকেই সুপ্তাবস্থা বলে) কাটানোর জন্য কন্দ গুলোকে ৪ শতাংশ থায়ো ইউরিয়া জলীয় দ্রবনে প্রায় ৩০ মিনিট চুবিয়ে রাখতে হবে।

 

জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ

 

প্রথম চাষ করলে প্রতি বিঘা জমিতে ৩ টন জৈবসার মেশাতে হবে। ৪-৫ বার গভীরভাবে চাষ করতে হবে। যাতে জমি অগাছামুক্ত হয়। এবং মাটি ঝুরঝুরে হয়। শেষ চাষের আগে প্রতি বিঘাতে ১৪:২৮:২৮ ইউরিয়া, টিএসপি,এমপি সার মূল সার হিসাবে দিতে হবে। এঁটেল মাটিতে ১০% সার কম দিলেও চলে। ২ মাস পর থেকে প্রতি ২ মাস ছাড়া ৭ কেজি ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। চারা লাগানোর ১৫দিন আগে জমি তৈরীর কাজ শেষ করতে হবে। টবে চাষের ক্ষেত্রে ২ ভাগ মাটি, ১ ভাগ পাতা পচা সার, ১ ভাগ পচা গোবর সার মিশিয়ে টব ভৈরে করতে হবে। একটি টবে ২টি কন্দ লাগানো যায়।

 

পরিচর্যা

রজনীগন্ধার মাটিতে সবসময় রস থাকা উচিত। গ্রীষ্মকালে ৭ দিন ছাড়া এবং শীতকালে ১০ দিন ছাড়া সেচ দেওয়া উচিত।

 

ঘাস বা অন্য ধরণের আগাছা থাকলে তা দ্রুত দমন করতে হবে। প্রয়োজনে আগাছানাশক স্প্রে করা যায়।

 

রোগপোকা

 

ধ্বসা রোগের আক্রমণ যেন না ঘটে। তাহলে গাছের শিকড়ে পচন ধরে। গাছের পাতা খসে যায়। ফুলও কম হবে।  

 

প্রয়োজনে আক্রান্ত গাছগুলো তুলে ধ্বংস করতে হবে। গাছের গোড়ার মাটি প্রতি লিটার জলতে ৪ গ্রাম কুপ্রাভিট/বেনডাজিম/ ব্যাভিস্টিন/ সেভিন মিশিয়ে সেই মিশ্রণ দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে। রোগাক্রান্ত গাছে ১৫ দিন পরপর ২ থেকে ৩ বার প্রতি লিটার জলতে ৪ গ্রাম হারে কুপ্রাভিট/বেনডাজিম/ব্যাভিস্টিন/সেভিন মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।

 

গিঁট রোগ হলংএ কৃমি গাছের শিকড়ে গুটি তৈরি করে। এ রোগে আক্রান্ত গাছের শিকড়ের মাঝে মাঝে ফুলের গিঁটের মত হয়ে যায়। ফলে গাছ বাড়ে না, ফুল আসেনা। দুর্বল হয়ে শেষে গাছ মরে যায়।

 

 

একই জমিতে পরপর দু’তিন বছর এক নাগাড়ে রজনীগন্ধা ও বেগুন জাতীয় ফসর চাষ না করা ভাল। দু’সারি রজনীগন্ধা গাছের মধ্যে এক সারি গাঁদা গাছ লাগিয়ে গাঁদা-রজনীগন্ধার মিশ্র চাষ করলে শিকড়ে গিঁট কৃমির উপদ্রব কম হয়। জমিতে নিম খৈল ছিটানো যেতে পারে। কন্দ রোপণের সময় সারির মাটিতে নিম খৈল ও নিউফরান ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। তারপর সেখানে কন্দ রোপণ করলে এ রোগের আক্রমণ অনেক কম হয়। প্রাথমিকভাবে অল্প গাছ আক্রান্ত হলে সেসব গাছ তুলে জমি থেকে দূরে ফেলতে হবে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আক্রান্ত স্থানের মাটি কিছুটা গর্ত করে খড় জ্বালিয়ে মাটি পুড়াতে হবে।

 

ফুল কখন পাবেন

 

কন্দ লাগানোর ৭০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে গাছে স্টিক আসতে শুরু করে। স্টিক কাটার সময় ধারালো ছুরি ব্যবহার করতে হবে। রজনীগন্ধার স্টিকের প্রথম ফুল ফুটলেই ডাঁটিসহ ফুল কাটতে হবে। ভোরের ঠান্ডা আবহাওয়ায় অথবা পড়ন্ত বিকেলে ফুল কাটতে হবে। স্টিক কাটার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন এটি মাটি থেকে ১.৫ থেকে ২.৫ ইঞ্চি উপরে থাকে। কাটার সাথে সাথে স্টিক গুলির নীচের কাটা অংশ জলতে চুবিয়ে ছায়ায় রাখতে হবে, যেন ফুল ও স্টিকের সতেজভাব বজায় থাকে।

প্রতি একর জমিতে রজনীগন্ধার স্টিক উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ১৫০০০০ থেকে ২০০০০০টি।

 

কিভাবে ফুল সতেজ রাখবেন

 

রজনীগন্ধা ফুল ও পাতা থেকে জল বের হয়ে গিয়ে ফুল ও পাতা শুকিয়ে যেতে পারে। এজন্য দ্রুত অপ্রয়োজনীয় পাতা কেটে ফেলতে হবে। এর পর বান্ডিল তৈরি করে প্রথমে ভেজা নিউজপ্রিন্ট কাগজে স্টিক গুলো মুড়ে ও পরে কালো পলিথিনে জড়িয়ে ঠান্ডা পরিবেশে প্রায় ৪ ঘন্টা গোড়ার কাটা অংশ জলে চুবিয়ে রাখতে হবে। এ প্রক্রিয়ায় ফুলের সতেজতা র্দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকে।

 

Mailing List