সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর নজরে জেলার দুর্নীতি, কেন?

সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর নজরে জেলার দুর্নীতি, কেন?
ঘটনাটি অদ্ভূত লাগতেই পারে। কিন্তু সত্য।
রাজ্যের এতগুলি জেলার দুর্নীতি এবার সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর নজরে। শুধু নজরে বললে ভুল হবে। তিনি প্রকাশ্যে তা জানাচ্ছেন। যে কথা তুলে ধরছে সংবাদমাধ্যম।
সহজেই সস্তা সমালোচনা করা যায়। করছেনও অনেকে। তাঁদের মতে, মুখ্যমন্ত্রী জানেন না, এমন কিছু হয় নাকি?
তাঁদের সম্বন্ধে একটা ছোট্ট কথা বলেই শুরু করা যেতে পারে। তাঁদের বেশিরভাগই একান্নবর্তী পরিবার কী তা হয়তো চোখে দেখেননি। গল্পও কতটা শুনেছেন তা জানা নেই। বাবা-মা, স্ত্রী পুত্র নিয়ে সংসার করতেই হিমশিম। তবু মা কখনও কখনও বলেন, জানিস বৌমা না এটা বলছিল, ওটা বলছিল।
তাঁরা কিন্তু সহজেই অবাক দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলেন, সেকি? তাই নাকি?
আর তাঁর স্ত্রী যখন এমন কথা বলেন তাঁর মাকে নিয়ে, তখনও কিন্তু স্ত্রীকেও হয়তো ওই উত্তর দিয়ে থাকেন। কিম্বা মায়ের নামে দোষারোপও করতে পারেন। যাই হোক, সেই বিতর্কে কাজ নেই।
মুখ্যমন্ত্রীর কত কাজ থাকে? তা ক’জন জানেন, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকেই। তার সঙ্গে সব চেয়ে বড় প্রশ্নটা হল, যদি একজনের পক্ষে সব দেখা সম্ভব হত, তাহলে এত জেলার প্রয়োজন ছিল না। বড় জেলাকে ছোট করারই বা দরকার কী ছিল? এর দফতর, এত মন্ত্রী- কী প্রয়োজন। এবার আসি পঞ্চায়েত সিস্টেম নিয়ে। ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতই বা কী দরকার ছিল? যদি মুখ্যমন্ত্রীই সব দেখবেন, জানবেন। প্রতিনিয়ত খেয়াল রাখবেন।
প্রশ্ন উঠতেই পারে, ওই সব পদেই তো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। নিশ্চয়, এটা একশো শতাংশ ঠিক। কিন্তু প্রতিটি স্তরেই যে সরকারি আধিকারিক রয়েছেন। যাঁদের সব কিছু দেখার কথা। তাঁরা কী করছেন? তাঁরা যদি দুর্নীতি ধরেন, তাঁদের চাকরি যাবে না। বড় জোর সরকারের কুনজরে পড়লে বদলি হবেন। বা সাধারণ কোনও পদ, যে পদের গরিমা কম বলে তাঁরা মনে করেন, সেখানে থাকতে হবে। কিন্তু মাইনে কমবে না। সেই সমস্ত পদেও তো কাউকে না কাউকে থাকতে হবে। তাঁরাও তো একইভাবে মেধাবি ছাত্র বা ছাত্রী ছিলেন। নাহলে ওই পদে বসতেন না। তাহলে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে কে বা কারা?
এটাও তো সত্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে স্বীকার করলেন, কিছু ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে। যে খবর তাঁর জেলাশাসকের কাছ থেকে পাওয়ার কথা তা তিনি পাননি। অন্য সূত্র থেকে পেতে হয়েছে! তাই প্রতিটি সরকারি আধিকারিকে জানিয়ে দিলেন, সারপ্রাইজ ভিজিট করতে। যত বড় নেতা হোক না কেন, যে কোনও দলের নেতা হোক না কেন, দুর্নীতি করলেই ব্যবস্থা নিতে। তারপর আরও পরিষ্কার করলেন, ‘‘আমি বলছি মানে, আর কেউ তা নিয়ে বলতে পারবে না।’’ অর্থাৎ দুর্নীতি করলেই ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। তা জেলা পরিষদ হোক, পঞ্চায়েত সমিতি হোক বা গ্রাম পঞ্চায়েত।
কেউ চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা তুলুক বা নারী নির্যাতন করুক, পদক্ষেপ করা যাবে। এই কথাটা প্রকাশ্যে একজন মুখ্যমন্ত্রীর বলাটা কিন্তু কম বড় কথা নয়।
আবারও অনেকে প্রশ্ন তুলতেই পারেন, তাতে কী লাভ। এটা নাকি আই ওয়াশ।
শুধু কী মুখ্যমন্ত্রীর দিকে আঙুল তুললেই সব মিটে যায়। বিরোধী দলের সঠিক বা উপযুক্ত বিরোধীতার দরকার নেই? সচেতন নাগরিকের কী উপযুক্ত পদ্ধতিতে অভিযোগ জানানোর রাস্তা নেই? প্রশাসনিক আধিকারিকরা কী সত্যিই এভাবে স্থানীয় স্তরের নেতাদের কথা শুনছেন একেবারেই অকারণে? নাকি তার পিছনেও কিছু কারণ রয়েছে। তাই তো প্রকাশ্যেই মুখ্যমন্ত্রী গড়বেতার গাছ কাটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। জেলাশাসককে সাফ জানিয়েছেন, কেন দ্রুত পদক্ষেপ করা হয়নি। বালি, পাথর থেকে শুরু করে সব ধরণের বিষয়ই উল্লেখ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথা থেকে আর একটি বিষয়ও পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে, যা পরোক্ষে তি্নি বোঝাতে চেয়েছেন। সেটি হল, নিচু তলায় একটা করে অংশ জোট বেঁধেছে। আর সেই জোটের কারণেই দুর্নীতি হচ্ছে। অভিযোগ করেও সাধারণ মানুষ সুরাহা পাচ্ছেন না। এটাও ঠিক, সাধারণ মানুষের পক্ষে সব সময় মুখ্যমন্ত্রীর কাছ পর্যন্ত পৌঁছানোও সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে নিচু তলায় তাঁকে বিপদের মুখে পড়তে হবে। সেই সূযোগটাকেই কাজে লাগাচ্ছে নিচু তলা। তাই হয়তো এমনটা ঘটছে।
কোনও ব্যক্তি, কোনও পদাধিকারির দিকে তো সহজেই আঙুল তোলা যায়। মুখ্যমন্ত্রী এবার যেভাবে দুর্নীতি বন্ধে সবাইকে দিক নির্দেশ করলেন, একবার সে পথে হাঁটলেই বা দোষ কী? দেখা যাক না, সঠিক পদ্ধতিতে তা মেনে চলে লাভ হয় কিনা। তারপর না হয় প্রশ্ন তোলা যাবে। এখন দুর্নীতির বিরুদ্ধেই সকলের এককাট্টা হওয়া উচিত। মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ মেনেই। তাহলেই হয়তো দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা মুখ লুকিয়ে পালাবে। তাতে আখেরে লাভ হবে সকলের।
তবে হ্যাঁ, এটাও সত্য যে, মুখ্যমন্ত্রী এবার যেভাবে নিচু তলার দুর্নীতি বন্ধে সরব হয়েছেন, তাতে যদি প্রকৃত দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন তাহলে বাকিরা ভয় পাবে। সাধারণ মানুষও আস্থা ফিরে পাবে। এখন দেখার, সেই প্রক্রিয়াটি কতটা এগোয়।


