রাজনীতির রসায়নেও বাজিমাত রসায়নের শিক্ষক রফিকুল মাস্টারের  

রাজনীতির রসায়নেও বাজিমাত রসায়নের শিক্ষক রফিকুল মাস্টারের   
21 Nov 2023, 07:00 PM

রাজনীতির রসায়নেও বাজিমাত রসায়নের শিক্ষক রফিকুল মাস্টারের

 

আনফোল্ড বাংলা প্রতিবেদন, মালদহ: রসায়ন বিদ্যার শিক্ষক। সহজেই যেভাবে রসায়নের অনেক জটিল সমীকরণ সমাধান করে দেন। সেভাবে রাজনীতির রসায়নেও একের পর এক বাজিমাত করে চলেছেন। মালদা জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি এটিএম রফিকুল হোসেন। ছোট থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন তিনি।বাবা মহম্মদ সামসুজ্জহা মিয়া (মৃত) ছিলেন পেশায় শিক্ষক।বাবার ছত্রছায়াতেই রফিকুল বাবুর ছাত্রজীবন। ছোট থেকেই ইচ্ছা ছিল শিক্ষক হওয়ার। বিজ্ঞানচর্চার প্রতি ছিল উৎসাহ। তবে রাজনীতিতে আসবেন এমনটা কখনোই ভাবেননি।রতুয়ার পরানপুর হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেন।বিজ্ঞান চর্চার প্রতি ঝোক থাকায় একাদশ শ্রেণীতে সিউড়ি রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন।সেখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর সিউড়ি কলেজ থেকে রসায়নবিদ্যায় স্নাতক এবং কানপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স।কলেজ জীবনেও রাজনীতির সঙ্গে যোগ ছিল না রফিকুল হোসেনের। তবে মানুষের প্রয়োজনে বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কাজ কর্মে নিজেকে নিয়োজিত করতে থাকেন। সাথে লক্ষ্য ছিল শিক্ষক হওয়ার। ২০০৬ সালে সেই লক্ষ্য পূরণ হয় রফিকুল বাবুর। উনার নিজেরই গ্রাম মালতিপুরের গঙ্গা দেবী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুরু হয় উনার শিক্ষকতা জীবন। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেশি দিন শিক্ষকতা করেননি। দুই মাস পরেই চাঁচল সিদ্ধেশ্বরি ইনস্টিটিউশনে রসায়ন বিদ্যার শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তারপর থেকে চাঁচল জুড়ে রফিকুল মাস্টারের পরিচিতি। চাঁচলে রসায়ন বিদ্যার বহু ছাত্রছাত্রী উনার হাতে তৈরি। মিষ্টভাসি সদাহাস্য রফিকুল বাবু ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে খুব প্রিয় ছিলেন। শিক্ষকতা জীবন শুরু হওয়ার পরেই রাজনীতির সংস্পর্শে আসতে শুরু করেন রফিকুল হোসেন। তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠন থেকে রাজনৈতিক জীবন শুরু।

     তবে সক্রিয় রাজনীতিতে পদার্পণ ২০১৪ সাল থেকে। অল্প সময়ের মধ্যে ২০১৬ সালে মালদা জেলা তৃণমূল সংখ্যালঘু সেলের সহকারী সভাপতির দায়িত্ব পান। তারপরে ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদের টিকিট পান।যে আসন থেকে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি সেই আসন থেকে জেতাটা ছিল যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের। কারণ তৎকালীন মালদা জেলা পরিষদের ১৬ নং আসনের অন্তর্গত অঞ্চল গুলিতে বিরোধীদের ব্যাপক প্রভাব ছিল। একটি অঞ্চলে বিজেপির এবং অন্য তিনটি অঞ্চলে কংগ্রেসের। তারপরও প্রথমবারই ৫০০০ ভোটের ব্যবধানে জিতে রাজ্য নেতৃত্বের নজরে আসেন রফিকুল হোসেন। তৃণমূল পরিচালিত মালদা জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষের দায়িত্ব পান। মাঝে চাঁচল-১ নং ব্লক তৃণমূল সভাপতির দায়িত্ব ও সামলান। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে মালদা জেলা পরিষদের টালমাটাল অবস্থাতেও দলের সঙ্গে থেকেছেন। যখন তৎকালীন সভাধিপতির সঙ্গে একাধিক সদস্য দলত্যাগ করেছেন। তখন তিনি বাকিদের সাথে নিয়ে জেলা পরিষদের বোর্ড বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টা করে গেছেন। তার পুরস্কারও পেয়েছেন দলের কাছ থেকে। দলত্যাগী গৌড়চন্দ্র মন্ডলের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবনা হলে ২০২২ সালে মালদা জেলা পরিষদের নতুন সভাধিপতি হন এটিএম রফিকুল হোসেন।প্রায় দেড় বছর সামলালেন সভাধিপতির দায়িত্ব।

     ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের পক্ষ থেকে অন্য আসনে টিকিট দেওয়া হয় রফিকুল বাবুকে। তবে সেখানে এসেও বাজিমাত করেন। সভাধিপতি পদটি সংরক্ষিত হওয়ার কারণে এই বছর সভাধিপতি হওয়া সম্ভব ছিল না রফিকুল বাবুর। তবে সহ-সভাধিপতির দায়িত্ব পেয়েছেন। দৌড়ে একাধিক হেভিওয়েট থাকলেও এ ক্ষেত্রেও বাজিমাত করেছেন।আর তার এই সাফল্যে গর্বিত তার পরিবারের লোক থেকে শুরু করে ছাত্র-ছাত্রী এবং একসময়ের সহকর্মীরা।

 

    সিদ্ধেশরী ইনস্টিটিউশনের পদার্থবিদ্যার শিক্ষক পার্থ সরকার বলেন," রাজনৈতিক দিক থেকে আমরা ভিন্ন মতের। কিন্তু ও আমাকে দাদার মতো ভালবাসে।ওর এই সাফল্যে আমরা খুশি।অনেক আশা রয়েছে ওর কাছে। যেহেতু এবার চাঁচল থেকে জিতেছে। চাইব চাঁচলের পুরসভা, নিকাশি সহ সকল সমস্যার সমাধান করবে।"

 

   রমজান আলী জানান," আমরা স্যারের কাছে পড়েছি। শিক্ষক হিসেবে উনি খুব ভালো ছিলেন। মানুষ হিসেবেও। স্যারের রাজনীতিতে এই সাফল্য দেখে আমাদের খুব আনন্দ হয়।এরকম শিক্ষিত মানুষদেরই রাজনীতিতে প্রয়োজন।"

রফিকুল বাবুর সহ-ধর্মিনী আফসানা পারভীনও পেশায় শিক্ষক। তিনি বলেন," রাজনীতিতে আসার পর ব্যস্ততার কারণে পরিবারের জন্য তেমন সময় দিতে পারেন না। তাতে হয়তো একটু রাগ হয়। তবে উনার এই সাফল্যে পরিবারের সকলে আমরা গর্বিত। উনি মানুষের জন্য যাতে কাজ করতে পারেন এটাই চাইবো।"

আর এটিএম রফিকুল হোসেনের লক্ষ্য সভাধিপতি থাকাকালীন অপূর্ণ প্রত্যেকটা কাজকে পূরণ করা। তিনি বলেন," খুব বেশি সময় আমি সভাধিপতি থাকতে পারিনি। অনেক কাজ হয়েছে আবার অনেক কিছু বাকি রয়েছে। সেইগুলি আবার পূরণ করতে হবে। সাথে এবার আমাদের লক্ষ্য জেলায় কর্মসংস্থান, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের পরিকাঠামের উপর জোর দেওয়া। চাঁচলের জন্যও অনেক কিছু করার রয়েছে।"

Mailing List