ধ্রুপদী তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে অর্থনীতিতে নোবেল ত্রয়ীর, অর্থনীতিবিদ অ্যালেন ক্রুগারের নামও জুড়তে পারত, কিন্তু হল না কেন?

ধ্রুপদী তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে অর্থনীতিতে নোবেল ত্রয়ীর, অর্থনীতিবিদ অ্যালেন ক্রুগারের নামও জুড়তে পারত, কিন্তু হল না কেন?
ড. গৌতম সরকার
মজুরি বাড়লে বাড়ে না ছাঁটাই, কিংবা এক বছরের প্রথাগত শিক্ষা না এক বছরের কাজের অভিজ্ঞতা, কোনটি একজন শ্রমিকের শ্রম বাজারে পদোন্নতির জন্য বেশি জরুরী, শরণার্থীর আধিক্য কি কোনো দেশের অধিবাসীদের আয়ের হ্রাস ঘটায়, এরকম বেশ কিছু সনাতনী তত্ত্ববিরোধী তথ্য এবং অনুত্তর প্রশ্নের উত্তর সন্ধান করে ২০২১ সালের অর্থনীতি বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার জিতে নিলেন তিন মার্কিনী অর্থনীতিবিদ- ডেভিড কার্ড, জোশুয়া ডি অ্যাংগ্রিস্ট এবং গুইডো ডব্লিউ ইমবেন্স। শ্রম অর্থনীতিতে বিশেষ অবদানের জন্য ডেভিড কার্ড এবং বাস্তব জীবনে কার্য-কারণ সম্পর্কের প্রকৌশল রুপায়ন ও সঠিক প্রয়োগ ঘটিয়ে পুরস্কার পেলেন অ্যাংগ্রিস্ট এবং ইমবেন্স। রয়্যাল সুইডিশ আ্যাকাডেমি জানাচ্ছে, মোট পুরস্কার অর্থের অর্ধেক পাবেন বার্কলের 'ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়'-এর পঁয়ষট্টি বছরের অধ্যাপক ডেভিড কার্ড। বাকি অর্ধেক অর্থ ভাগ হয়ে যাবে, একষট্টি বছর বয়সী 'ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি'-এর ফোর্ড অধ্যাপক জোশুয়া অ্যাংগ্রিস্ট এবং আঠান্ন বছর বয়সী 'স্ট্যানফোর্ড গ্রাজুয়েট স্কুল অব বিজনেস'-এর অধ্যাপক গুইডো ইমবেন্সের মধ্যে। বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে নোবেল অ্যাকাডেমির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, 'শ্রমবাজারে ন্যূনতম মজুরি, অভিবাসন এবং শিক্ষার প্রভাব নিয়ে সুচিন্তিত বিশ্লেষণের জন্য বিজয়ী নির্বাচিত হয়েছেন ডেভিড কার্ড, অন্যদিকে প্রাকৃতিক পরীক্ষার কারণ ও প্রভাব থেকে কতটা সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব সেই বিষয়টির উপর সফল গবেষণা করে পুরস্কার পাচ্ছেন অ্যাংগ্রিস্ট এবং ইমবেন্স'৷
২০২০ সালের প্রথমভাগ থেকে বিশ্বব্যাপী লকডাউনের কারণে বেকারত্ম সাংঘাতিক ভাবে বেড়ে গেছে। এর ফলে কোপ পড়েছে বেতনে। এছাড়া অভিবাসী মানুষেরা দেশের কাজের বাজার কেড়ে নিচ্ছে এই দাবিতে আমেরিকার মত দেশে অভিবাসন আইনে কড়াকড়ি করা হয়েছে। এই মন্দা পরিস্থিতিতে বিশ্বের অনেক দেশে 'ন্যূনতম মজুরি আইন' নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে, এইরকম এক সংকট পরিস্থিতিতে ন্যূনতম মজুরি, অভিবাসন আইন, আয়ের উপর শিক্ষার প্রভাব ইত্যাদি নিয়ে চিরাচরিত ভ্রান্ত ধারণা দূর করেছে ডেভিড কার্ডের গবেষণালব্ধ ফল। অন্যদিকে যে সব সমস্যার বিজ্ঞান দিতে পারে না, সেক্ষেত্রে কার্য-কারণ সম্পর্কের সঠিক ব্যবহারে মুশকিল আসান করেছেন জোশুয়া অ্যাংগ্রিস্ট এবং গুইডো ইমবেন্স। রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি জানিয়েছে, 'অর্থনীতিতে বড়সড় বদল এনেছেন এই তিন অর্থনীতিবিদ। এঁদের গবেষণা আমাদের অনেক সাধারণ প্রশ্নের উত্তর জুগিয়েছে, যার ফলে উপকৃত হয়েছে মানব সমাজ।'
অর্থনীতিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিন্যাস ও যোগাযোগ কার্যকারণ সম্পর্ক ঘিরে আবর্তিত হয়। সমস্যা হচ্ছে, যেহেতু সেগুলোকে সরাসরি মাপার কোনো মানদন্ড নেই, তাই প্রশ্নগুলো অনুত্তরই থেকে গিয়েছিল। এবারের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদরা তাঁদের গবেষণায় দেখিয়েছেন, অভিজ্ঞতা ভিত্তিক পরীক্ষা নিরীক্ষার সাহায্যে এইসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব। তাঁরা সেইজন্য দেখতে চেয়েছেন অনভিপ্রেত কোনো ঘটনা বা নীতিগত পরিবর্তন সমাজের বিভিন্ন মানুষকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করছে কিনা, এবং সেই পর্যবেক্ষণ বিশ্লেষণ করে কাম্য সমাধানে পৌঁছতে চেয়েছেন।
ডেভিড কার্ডের গবেষণা ও ফল:
ডেভিড কার্ড তাঁর গবেষণাটি আরেক বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ অ্যালেন ক্রুগারের সাথে ১৯৯০ সাল থেকে করছিলেন, কিন্তু ২০১৯ সালে ক্রুগারের অকাল প্রয়াণ ঘটে। নোবেলের নিয়ম অনুযায়ী মরণোত্তর পুরস্কার হয় না, বেঁচে থাকলে হয়তো ক্রুগারও যুগ্মভাবে এই পুরস্কার পেতেন। তাদের কাজটি বুঝতে গেলে কতকগুলি সামাজিক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। যেমন, অভিবাসন ঠিক কতটা শ্রম এবং মজুরির ওপর প্রভাব বিস্তার করে, বা শিক্ষার প্রসার কিভাবে ভবিষ্যৎ আয়কে প্রভাবিত করে, কোনো অর্থনীতিতে যদি শ্রমিকের ন্যূনতম আয়ের বৃদ্ধি ঘটে, তাহলে কি বেকারত্ম বৃদ্ধি পায়, ইত্যাদি। কোনো প্রশ্নটারই মুখে মুখে উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়, এর জন্য দরকার কার্যকারণ ব্যাখ্যা, অর্থাৎ যখন বাস্তব অর্থনীতিতে প্রয়োজনীয় ডেটা পাওয়া যাচ্ছেনা, তখন একটা কিছু না থাকলে বা থাকলে বিপরীতে কি হতে পারতো সেই সংক্রান্ত বিশ্বাসযোগ্য তথ্য ও পদ্ধতি। এই জায়গাতেই ডেভিড কার্ড এবং তাঁর সহযোগীরা আশাজনক ফল করেছেন। আপাত সম্পর্কহীন চলকের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনে সক্ষম হয়েছেন, যে আবিষ্কার আগামী দিনে আরও বহু জটিল অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান এবং নতুন নতুন সম্পর্ক রূপায়ণে নয়াদিগন্ত উন্মোচন করবে, এরকমই বিশ্বাস 'ইকনোমিক সায়েন্সে’স প্রাইজ কমিটি'-র চেয়ারম্যান পিটার ফ্রেডরিকসনের।
ধ্রুপদী অর্থনৈতিক তত্ত্ব অনুযায়ী, শ্রমের বাজারে ন্যূনতম মজুরির পরিমান বাড়লে ছাঁটাই বাড়ে। সেই তত্ত্বের ওপর ডেভিড কার্ড ১৯৯০ সাল থেকে গবেষণা শুরু করেন। তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন নিউ জার্সির একাধিক রেস্তোরাঁ। সহ গবেষক অ্যালান ক্রুগারের সাথে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করে সিদ্ধান্তে পৌঁছন, ঘন্টাভিত্তিক মজুরি কোনওভাবেই কর্মসংস্থানকে প্রভাবিত করে না। নিউ জার্সির কর্মীদের ন্যূনতম মজুরি ঘন্টা পিছু ৪.২৫ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৫.০৫ করার পর কর্মক্ষেত্রে তার প্রভাব খতিয়ে দেখতে শুরু করেন। তাঁদের গবেষণার ফল অর্থনীতির পূর্বতন ব্যাখ্যাকে চ্যালেঞ্জ করে জানায়, ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি কম কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করে না। বলা বাহুল্য, তাঁদের এই তত্ত্বগত ব্যাখ্যা অনেকেরই পছন্দ হয়নি, তদুপরি তাঁদের যুক্তিনিষ্ঠ এবং পদ্ধতিগত বিশ্লেষণ একটি বড় শ্রেণীর অর্থনীতিবিদকে সন্তুষ্ট করে এবং নোবেল পুরস্কার জিততে সাহায্য করে।
কার্ডদের গবেষণায় দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা একটি অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তার অবকাশ ঘটল। শ্রমের বাজারে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব যৎসামান্য। মজুরি বাড়লে মালিকের যে অতিরিক্ত খরচ হয় সেটি সহজেই ক্রেতা বা উপভোক্তার কাছ থেকে আদায় করে নিতে সক্ষম হয়। ফলে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি কর্মী নিয়োগে তেমন কোনো প্রভাব ফেলেনা। কার্ড এবং ক্রুগারের মতে, বরং ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির ধনাত্মক প্রভাব অর্থনীতিতে পরিলক্ষিত হয়। যেহেতু মজুরি বৃদ্ধি শ্রম বাজারে প্রতিযোগীর সংখ্যা বাড়িয়ে দেয় (বর্ধিত মজুরিতে আরও যোগ্যতাসম্পন্ন এবং শিক্ষিত শ্রমিকের যোগদান বাড়বে), কর্মীদের মধ্যে যোগ্যতা প্রমাণের তাগিদ বাড়ে। এই আবিষ্কারের পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে বাইডেন প্রশাসনে আমেরিকায় ন্যূনতম মজুরি বেড়ে হয়েছে ঘন্টা পিছু ১৫ ডলার। এছাড়া কার্ড বলেছেন, অভিবাসী শ্রমিকদের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটলে দেশীয় কর্মীদের অসুবিধা হওয়ার কথা নয় কারণ অভিবাসী কর্মীদের চাপে দেশীয় কর্মীদের বেতন বৃদ্ধির সম্ভাবনা থেকে যায়। এই বিষয়ে গবেষণায় তিনি ১৯৮০ সালে কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রোর একটি আর্থ-রাজনৈতিক পলিসি বিশ্লেষণ করেন। ওই সময় ফিদেল কাস্ত্রো যে সমস্ত মানুষ দেশ ছেড়ে চলে যেতে চাইছিলেন তাঁদের পূর্ন স্বাধীনতা দিয়েছিলেন, ফলত প্রচুর মানুষ কিউবা ছেড়ে মিয়ামিতে পাড়ি দিয়েছিলেন। ডেভিড কার্ট তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন এই বিপুল অভিবাসনের পরও মিয়ামির শ্রমিকদের মজুরিতে বা কর্মসংস্থানে কোনো ঋণাত্মক প্রভাব পড়েনি। ভবিষ্যত মজুরির উপর শিক্ষার প্রভাব আলোচনায় তিনি দেখিয়েছেন, এক বছরের অতিরিক্ত প্রথাগত শিক্ষা একজন শ্রমিককে শ্রমের বাজারে অনেক বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন করে তোলে।
অ্যাংগ্রিস্ট ও ইমবেনসের কাজ:
জোশুয়া অ্যাংগ্রিস্ট এবং গুইডো ইমবেন্স ডেভিড কার্ডের গবেষণাকে পরিপূর্ণ করে তুলেছেন। তাঁরা তাঁদের গবেষণায় দেখিয়েছেন যেখানে বিজ্ঞানের মডেল কাজ করেনা, সেখানে সঠিক কার্য-কারণ সম্পর্কের খোঁজ পেলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে। যেমন, এক বছরের প্রথাগত শিক্ষা না এক বছরের কাজের অভিজ্ঞতা, চাকরিতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোনটি বেশি উপযোগী হবে, এই বিতর্কের সমাধান বিজ্ঞান দিয়ে হবে না, কার্য-কারণ সম্পর্কই এই জটিল ধাঁধার সমাধান সূত্র দিতে পারে। প্রাকৃতিক গবেষণা থেকে উঠে আসা ফলাফলগুলো নিয়ে কোনো সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া খুব অসুবিধার। যেমন, একবছর অতিরিক্ত শিক্ষা কোনো ব্যক্তির ভবিষ্যত আয় কতটা বাড়তে পারে সেটি সঠিক অনুধাবনের জন্য একজন ব্যক্তিকে শিক্ষার সুযোগ দিতে হবে আর অন্য ব্যক্তিকে জোর করে শিক্ষার্জন থেকে বঞ্চিত করতে হবে। বাস্তবক্ষেত্রে এটা সম্ভব নয়। এই পদ্ধতি অচল হয়ে পড়ায়, কার্য-কারণ সম্পর্কের সঠিক প্রয়োগ ঘটিয়ে এই সমস্যা সমাধানের পথ দেখিয়েছে অ্যাংগ্রিস্ট আর ইমবেন্সের গবেষণা। তাঁদের মতে, অর্থনীতি শাস্ত্রকে আরও বেশি বিজ্ঞানসম্মত এবং বাস্তবমুখী করে তুলতে হবে। প্রতিমুহূর্তে বদলে যাওয়া অর্থনীতিতে এমন সমস্ত বিষয়সমূহ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে যেগুলোর হদিশ অতীতে ছিলনা বা থাকলেও প্রচ্ছন্ন ছিল। ফলে তাদের প্রকৃতি, প্রভাব এবং পরিণতির হালহকিকত পুরাতনপন্থীরা দিতে পারছেন না। আধুনিক অর্থনীতিবিদরা সেই সমস্ত সম্পর্কের উন্মোচন ঘটিয়ে দেশের সরকারকে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণে সাহায্য করতে পারে যেটি কোনো দেশের সার্বিক উন্নয়নের গতি নির্দেশ করবে।
এই ত্রয়ী অর্থনীতিবিদের গৃহীত নীতি, গবেষনা এবং ফলাফলের একটি সুদূরপ্রসারী প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নব্বইয়ের দশক থেকে তাঁদের গবেষণা তথাকথিত উন্নয়নশীল দেশের গবেষণাকে প্রভাবিত করেছে, ভারতবর্ষ এর ব্যতিক্রম নয়। ভারতের মত উন্নয়নশীল গুলিতে এতকালের বিশ্বাস ছিল, ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি কর্মসংস্থানে বিরূপ প্রভাব ফেলে। গতবছর করোনাকালে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বেশ কিছু শ্রম আইন (যার মধ্যে ন্যূনতম মজুরি আইনও আছে) সাসপেন্ড করা হয়েছে। সরকারি তরফে বলা হয়েছে, এসব কিছুই কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। বিখ্যাত শ্রম অর্থনীতিবিদ এবং ইনস্টিটিউট অব হিউমান স্টাডিস-এর সেন্টার অব এমপ্লয়মেন্ট স্টাডি-র ডিরেক্টর প্রফেসর রবি শ্রীবাস্তব এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব রিসার্চ অন ইন্টারন্যাশনাল ইকনোমিক রিলেশন-এর ফেলো রাধিকা কাপুর এই শ্রম আইন সাসপেনসনের তীব্র বিরোধিতা করেছেন।
শ্রীবাস্তব বলেছেন, আমেরিকার অর্থনীতির পরিপ্রেক্ষিতে ন্যূনতম মজুরির নয়া তত্ত্ব ভারতের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশেও প্রযোজ্য হবে বলে তিনি মনে করছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের কাম্য ন্যূনতম মজুরি কত হওয়া উচিত সেই ব্যপারে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। তিনি এটাও জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই এই তত্ত্বটি ওনার অন্যান্য গবেষণা কার্যে প্রয়োগ করতে শুরু করে দিয়েছেন। মিসেস কাপুর জানিয়েছেন, মিস্টার কার্ডের আবিষ্কার থেকে যেটি শিক্ষণীয় সেটি হল ভারতবর্ষেও শ্রমের বাজারে কোনোরকম বিরুদ্ধ প্রভাব সৃষ্টি না করে ন্যূনতম মজুরির বৃদ্ধি ঘটানো সম্ভব। এটি আরও জরুরি কারণ আমাদের দেশে ন্যূনতম মজুরির পরিমান উল্লেখযোগ্যভাবে কম, ঘন্টা পিছু মাত্র ১৮০ টাকা। তাঁর মতে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি সংক্রান্ত আইন যদি অসংগঠিত ক্ষেত্রের জন্যও প্রযোজ্য করা যায় তাহলে বহু মানুষের আয় বৃদ্ধি ঘটবে এবং ভারতের তথাকথিত চাহিদা সংকটের দুষ্টচক্রের হাত থেকে অর্থনীতিকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
শুধু ভারতবর্ষ নয়, ২০২১ সালের নোবেলজয়ী তিন অর্থনীতিবিদ অর্থনৈতিক পরিসরে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন, যার সুবিধা উন্নত এবং অনুন্নত সমস্ত দেশই নিতে চাইলে নিতে পারবে। তাঁদের গবেষণা একদিকে কিছু ধ্রুপদী অর্থনৈতিক তত্ত্বের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, অন্যদিকে অভিজ্ঞতা ভিত্তিক পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে অনেক সমস্যা সমাধানের দিকনির্দেশ করেছে যেগুলো প্রথাসিদ্ধ অর্থনৈতিক তত্ত্বের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। তাঁদের আবিষ্কার আগামী দিনে ফিসক্যাল পদ্ধতির প্রকৌশল এবং প্রয়োগ আরও সহজ এবং সুপ্রযুক্ত করবে বলে অর্থনৈতিক বিজ্ঞানীদের ধারণা।
………xxxxx………
লেখক: অর্থনীতির সহযোগী অধ্যাপক


