কেশপুরে বিজেপি এগিয়ে ছিল সাত গ্রাম পঞ্চায়েতে! তাই কী অভিষেকের সভা? নতুন পরিকল্পনা কী?

কেশপুরে বিজেপি এগিয়ে ছিল সাত গ্রাম পঞ্চায়েতে! তাই কী অভিষেকের সভা? নতুন পরিকল্পনা কী?
03 Feb 2023, 10:15 PM

কেশপুরে বিজেপি এগিয়ে ছিল সাত গ্রাম পঞ্চায়েতে! তাই কী অভিষেকের সভা? নতুন পরিকল্পনা কী?

 

আনফোল্ড বাংলা প্রতিবেদন: শনিবার কেশপুরে সভা করতে আসছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার সেই সভায় রেকর্ড জনসমাবেশ করতে তৎপর তৃণমূল। কিন্তু প্রশ্ন হল, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা অনেক বড়। কিন্তু হঠাৎ কেশপুরকেই কেন বেছে নিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

এক্ষেত্রে তৃণমূল নেতৃত্ব প্রকাশ্যে যে যুক্তি দিচ্ছেন তা হল, এটি সাংগঠনিক দিক দিয়ে সীমান্তে। একদিকে ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা ও অন্যদিকে মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা। তাই দুই সাংগছনিক জেলার মানুষ যাতে সহজে পৌঁছতে পারেন সে জন্যই কেশপুরে সভা করা হচ্ছে।

যদিও ভেতরে উঁকি দিলে তার কারণ কিন্তু একেবারেই আলাদা বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। প্রকাশ্যে তা স্বীকার না করেও ভেতরে তা মেনেও নিচ্ছেন দলীয় নেতৃত্ব। কী সেই কারণ? কেশপুর কিন্তু এখনও সাংগঠনিক দিক দিয়ে তৃণমূলের একশোভাগ দখলে রয়েছে তা বলা যায় না। অথচ, কেশপুরের মাটিতে দাঁড়িয়েই বাম জমানায় তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, কেশপুরই হবে তৃণমূলের শেষপুর। বামফ্রন্ট তো ২০১১ সালেই ক্ষমতা থেকে চলে গিয়েছে। ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। কিন্তু কেশপুরে কী একাধিপত্য কায়েম করতে পেরেছে তৃণমূল? এই প্রশ্নটা কিন্তু বারেবারেই ফিরে এসেছে।

গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যজুড়ে অনেক বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। কেশপুরেও অবশ্য তৃণমূল প্রার্থী শিউলি সাহা জয়ী হয়েছেন। কিন্তু ভোটের ফল কী? কেশপুর ব্লকে কিন্তু ১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। তার মধ্যে সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েতেই পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। এমনকী, সেই সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতে নোটাতেও ভোট পড়ার সংখ্যা কম নয়। এক ঝলক দেখে নেওয়া যাক গত বিধানসভা নির্বাচনে কোন কোন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কত ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। কোন অঞ্চলে কোন দল কত ভোট পেয়েছে? সেগুলি হল-

 

অঞ্চল বিজেপি সিপিএম তৃণমূল নোটা

১ নং ৭২৮০   ৫৮৭  ৬৪৩১   ২৪২

২ নং ৭৭৮৮  ১২৫৯  ৬২৩৫  ১৯৭

৩ নং ৬৫২০  ৭৮৩  ৫৫৮৬  ১৪৫

৬ নং ৮৫০৮  ১১৪৭ ৮৪৭৩  ৩১৬

৭ নং ৮০৫৯  ৫০৩২ ৪২২৭  ১৭৩

১৪ নং ৭৪৬৩  ৫৮০  ৫৭৬৩  ২৪০

১৫ নং ৯২৭৬ ৫৩৬  ৫৮৯২ ২৫৬

যা থেকে পরিষ্কার যে বিজেপি একটা ভালো জায়গা করেছে। আর তার পরিবর্তন ঘটাতে হলে, স্বাভাবিকভাবেই এই পরিস্থিতিতে অনেক বেশি সংগঠনকে চাঙ্গা করতে হবে। কিন্তু গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তো থামে না। কখনও কোনও এলাকায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে নিজেদের মধ্যে তীব্র মারামারি হচ্ছে তো কখনও মারামারি হচ্ছে কলেজে। ব্লক সভাপতি থেকে যুব সভাপতি – বারেবারে বদল ঘটিয়েও সুফল মেলেনি। তাই সকলের অনুমান, এবার নিশ্চয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু কড়া পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করবেন। গোষ্ঠীকোন্দলের বিষয়টিকে মেটানোর জন্য সব ধরণের পদক্ষেপ করবেন।

সেটা যে অতি জরুরি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ, কেশপুরের চরিত্র কিন্তু অন্য যে কোনও এলাকার থেকে আলাদা। এই এলাকা সব সময় শাসক দলের সঙ্গে থেকে এসেছে। তাই পালা বদল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এখানে বদল ঘটেনি। অর্থাৎ রাজ্যে যখন বামফ্রন্ট ক্ষমতা দখল করলো তখনও কেশপুরে জয়ী হয়েছিল কংগ্রেস। আবার রাজ্যে যখন তৃণমূল ক্ষমতায় এলো তখনও কেশপুরে কিন্তু জয়ী হয়েছিল সিপিএম। তবে ফল ঘোষণার পরেই অবশ্য সব সময় বদলে গিয়েছে। আর তারপরই জয়ের নিরিখে রেকর্ড তৈরি থেকে বেশি ভোটে জেতার রেকর্ডের পাশাপাশি থেকেছে। তাহলে এবার কেন আগে থেকে কিছুটা বদল? সেটাও কিন্তু দুশ্চি‌ন্তার কারণ তৃণমূলের। নতুবা পঞ্চায়েত ভোটে সামান্য কিছু অদলবদল হলেও রাজ্য রাজনীতিতে তার বড় প্রভাব পড়বে বলেই সকলের অনুমান। তাই অভিষেকের কেশপুরে আগমন বলেই মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল।

Mailing List