রাজগির ভ্রমণ: মগধের অধিপতি বিম্বিসারকেও শেষ জীবনে কাটাতে হয়েছিল কারাগারে, ফিরে দেখা রাজগিরে / চতুর্থ পর্ব

রাজগির ভ্রমণ: মগধের অধিপতি বিম্বিসারকেও শেষ জীবনে কাটাতে হয়েছিল কারাগারে, ফিরে দেখা রাজগিরে / চতুর্থ পর্ব
সুমন ঘোষ
পাহাড়ের কোলে শহর। তার পাহাড়ের বুক চিরেই তৈরি হয়েছে ঝাঁ চকচকে রাস্তা। আর সে পথে চলতে গিয়ে হঠাৎ যদি দেখেন আকিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার বোর্ড। এবং তাতে লেখা বিম্বিসরের জেল! অবাক তো হতেই হবে, তাই না!
প্রাচীন ইতিহাসে বিম্বিসারের স্থান তো ছোটখাটো নয়। তিনি ছিলেন মগধের অধিপতি। একটি ছোট্ট গ্রাম থেকে শুরু করেন মগধের ভিত্তি। যা পরে পাটলিপুত্র নগরীতে পরিণত হয়। ঐতিহাসিকদের মতে, বিম্বিসার রাজত্ব করেছিলেন ৫৪৫ থেকে ৪৯৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত। তিনি গৌতম বুদ্ধের একজন কট্টর শিষ্য ছিলেন। যিনি তাঁর পুত্র অজাতশত্রু দ্বারা বন্দীও হয়েছিলেন। কথিত আছে যে তাঁর ছেলে তাঁকে তার কারাবাসের জন্য একটি বিকল্প বেছে নিতে বলেছিলেন। এবং তিনি এমন একটি জায়গা বেছে নিয়েছিল যেখান থেকে ভগবান বুদ্ধকে দেখতে পাবেন। আর তাঁর তৈরি রাজগির (আগে নাম ছিল রাজগৃহ) শহরেই তিনি বন্দি জীবন কাটান। এই রাজগির বর্তমান বিহারে অবস্থিত। আর সেখানেই রয়েছে এই বিখ্যাত রাজা বিম্বিসারের জেল।
জনশ্রুতি রয়েছে যে, ক্ষমতা ও সম্পত্তি লোভের আশাতেই পুত্র অজাতশত্রু বন্দি করেছিলেন পিতাকে। যদিও শেষ পর্যন্ত অজাতশত্রু সেই ধনসম্পদ পাননি। কারণ, এই ঘটনায় ক্ষিপ্ত হন তাঁর স্ত্রী কোসালা দেবী (Kosala Devi)। তিনি সমস্ত ধন সম্পদ লুকিয়ে রেখে দেন একটি পাহাড়ে। সেখানে তখন এক জৈন তীর্থঙ্কর ছিলেন। পাহাড়ের কোলে তৈরি করা গুহাতে জৈন তীর্থঙ্করের কাছে লুকিয়ে রাখেন তিনি। যেটি সোন ভান্ডার কেভ নামে পরিচিত। সেটিও রয়েছে রাজগির পাহাড়ের কোলেই। সোন ভান্ডার গুহার কথা আগেই বিস্তারিত বলা হয়েছে। তাই এখানে আর বললাম না।
এবার আসা যাক বিম্বিসারের জেলের কথায়। যেটি একেবারে পাকা রাস্তার ধারেই। রাজগির শহরেই। তবে এখন আর জেলখানাটি দেখা যায় না। তবে কারাগারটি যে স্থানে অবস্থিত সেটিকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘিরে রেখেছে পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগ। যে স্থানটি সহজেই দেখা যায়। যার চারদিকে পাহাড় আর জঙ্গল। প্রাকৃতিক শোভা অফুরন্ত। তার কোলেই থেকে গিয়েছে হরিয়ঙ্ক রাজবংশের তথা মগধের অধিপতি বিম্বিসারের দুঃখের কাহিনী। যিনি রাজগির শহর তৈরি করেছিলেন, পাটলিপুত্রকে রাজধানী বানিয়েছিলেন, জৈন তীর্থঙ্কর মহাবীরের একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন, তাঁর সেই দুর্দশার কাহিনী সত্যিই নাড়া দেবে।
একদিকে পাহাড়ি শোভা, অন্যদিকে বর্তমানে দাঁড়িয়ে প্রাচীন এক সাম্রাজ্যকে চাক্ষুস করা নিতান্ত কম কথা নয়। এ ভ্রমণ সত্যিই মনে রাখার। রাজগির এখন ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের কাছে একটি বড় আকর্ষণ বললে অত্যুক্তি হয় না। ফলে এখন আর কোনও মরশুম নেই। যে কোনও সময়েই মানুষ ছুটে যাচ্ছেন। একাধিক হোটেলও তৈরি হয়েছে পর্যটকদের থাকার জন্য। ঘুরে বেড়ানোর প্রতিটি স্থানকে আকর্ষনীয় করতেও সরকারি উদ্যোগ নজরে পড়ে। পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগও প্রতিটি স্থানকে সংরক্ষিত হিসেবে ঘিরে রেখেছে। লেখা রয়েছে সংক্ষিপ্ত ইতিহাসও। যা ছোট থেকে বড়- সকলেরই মন কাড়ে।


