ভোরের আলো / গল্প

ভোরের আলো / গল্প
সুদীপ সরকার
রাত তিনটের সময় নামতে হবে শুনেই চিত্রার টেনশন বেড়ে গেছে। রেলের সমস্ত সাইট ঘাঁটাঘাঁটি করেও তিন্নি এর থেকে ভালো অপশন পায়নি। এতে অবশ্য ওর দোষ নেই; পুরো ব্যপারটার জন্য দায়ী বিমান সংস্থার সিদ্ধান্ত। দেবরাজ আর চিত্রার ফ্লাইট ছিল বিকেল ৫টা নাগাদ। দুদিন আগে হঠাৎ করে সংস্থার মেসেজে জানা গেছে, অনিবার্য কারণ বশত ফ্লাইটের সময় এগিয়ে আনা হয়েছে, বিকেল পাঁচটার পরিবর্তে ডিপারচার টাইম বেলা ১১টা। প্রায় ছয় ঘণ্টা এগিয়ে আসার জন্য সব পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে বসেছিল। ফ্লাইটের সময় এদিক ওদিক হওয়ার অভিজ্ঞতা আগেও হয়েছে চিত্রা দেবরাজের, কিন্তু ছ-ঘণ্টা এদিক ওদিক কখনো হয়নি। আচমকা ডিপারচারের সময় এগিয়ে আনার জন্য যে সমস্যা হল সেটা শুধু ওরাই জানে, আর জানে তিন্নি।
বেঙ্গালুরুতে বসেই তিন্নি অনলাইনে টিকিট কেটেছিল বাবা মায়ের জন্য। দেবরাজ অফিসের কাজে কাটিহার এসেছে সপ্তাহ খানেক আগে। অফিসিয়াল ট্রিপটা ঠিক হওয়ার সময়েই চিত্রার মাথায় আসে প্ল্যানটা। “তিন্নি গেছে তাও তো মাস দুয়েক হোল, চলো না ঘুরে আসি কটা দিন।“ দেবরাজ নিজেও ভিতরে ভিতরে ছটফট করছিল, মেয়েটা যাওয়ার পর থেকে সবকিছু ফাঁকা ফাঁকা লাগে, দু -মাস যেন দুবছর মনে হয়। এত ভালো রেসাল্ট, মোটা টাকার চাকরি, বিরাট ভবিষ্যৎ, এসব ছেড়ে তো আর মেয়ে ঘরে বসে থাকবে না, তবু বাপের মন যেন মাঝে মাঝে চাতকের মত তৃষ্ণার্ত হয়ে ওঠে, সব কিছু শূন্য লাগে। চিত্রার প্রস্তাবে তাই না বলার কোন অবকাশই ছিল না। সঙ্গে সঙ্গে একটা পরিকল্পনা করে ফেলল দেবরাজ। কাটিহার থেকে এক্সপ্রেস ট্রেনে পাটনা ঘণ্টা সাতেক; তারপর পাটনা থেকে বেঙ্গালুরুর ফ্লাইট। এদিকে শেষ মুহূর্তে ফ্লাইটের সময় পরিবর্তনের কারণে আগে থেকে কেটে রাখা ট্রেনের টিকিট ক্যান্সেল করতে হোল, পরিবর্তিত সময়ের হিসেবে পাটনার টিকিট কাটতে গিয়ে মাথায় হাত পড়ল তিন্নির। দুদিন আগে টিকিট পাওয়া খুব সহজ হোল না, রেলের সাইট ঘাটাঘাটি করে শেষ পর্যন্ত স্লিপার ক্লাসে দুটো টিকিট পাওয়া গেল।
“সিকিম মহানন্দা এক্সপ্রেস ছাড়া আর কোন ট্রেনেই টিকিট পেলাম না, একটু কষ্ট করেই পাটনা পর্যন্ত যেতে হবে;“ চিত্রাকে জানালো তিন্নি, “আরও একটা সমস্যা হোল, পাটনায় শিডিউলড টাইম রাত তিনটে দশ, ঘুমিয়ে পড়লে কিন্তু ষ্টেশন পেড়িয়ে যাবে, তাহলেই ফ্লাইট মিস।“ চিত্রা কিছুটা ঘাবড়ে গেছে দেখে আশ্বস্ত করেছে দেবরাজ, “পাটনায় নেমে কোন গেস্ট হাউসে উঠতে হবে, খানিকটা ঘুমিয়ে নিয়ে, একটু ফ্রেশ হয়ে সময় মত বেড়িয়ে পড়ব, নটার ভিতর এয়ারপোর্টে ঢুকতে পারলেই হোল; আমাদের কোম্পানির গেস্ট হাউস আছে পাটনাতে, স্টেশনের আশেপাশেই হবে, আজকেই বুক করে নিচ্ছি একটা ঘর।“ অফিসের যাবতীয় ইন্সপেক্সানের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করে রাত সারে আটটা নাগাদ সিকিম মহানন্দা এক্সপ্রেসে উঠে বসল চিত্রা আর দেবরাজ।
চিত্রার সমস্ত ধারনা পাল্টে দিয়ে একদম নির্দিষ্ট সময়ে পাটনা পৌঁছল ট্রেন। দুরপাল্লার ট্রেন সাধারণত দু-এক ঘণ্টা লেটে চলবে এটাই দস্তুর; কিন্তু এই ট্রেনটি যে একেবারে হুড়মুড়িয়ে কাঁটায় কাঁটায় রাত তিনতে পনেরোতে পাটনায় ঢুঁকে পরবে, তার জন্য চিত্রা একেবারেই প্রস্তুত ছিল না। ও ভেবেছিল রাতের ট্রেন, হেলে দুলে ঘণ্টা দের দুই লেট করে ভোরের দিকে এসে পৌছবে। এক্ষেত্রে এতটা নিয়মানুবর্তিতা, ঘড়ির কাটা ধরে রেল কোম্পানির চলাফেরার ব্যাপারটা মোটেও স্বস্তি দায়ক লাগল না চিত্রার। দুটো লাগেজ ব্যাগ নিয়ে স্টেশনের ওয়েটিং রুমের দিকে পা বাড়াল দেবরাজ। সাধারণ স্লিপার ক্লাসের টিকিট থাকায় ভি আই পি লাউঞ্জে ঢোকার কোন সুযোগ নেই, এদিকে সাধারণ ওয়েটিং রুমের হাল চাল দেখে চিত্রা ভিতরে ঢুকতে চাইল না। মাঝ রাতের ষ্টেশন চত্বর প্রায় শুনশান। কিছু স্টল খোলা থাকলেও ক্রেতা নেই। প্ল্যটফরমের আনাচে কানাচে ঘুমে আচ্ছন্ন কিছু মানুষের নির্বাক উপস্থিতি। বসার জায়গা গুলোতে মাল পত্র ঠেস দিয়ে কিছু লোক ঘুমিয়ে আছে, ভোরের দিকে ট্রেন ধরার প্যাসেঞ্জার হবে। সিকিম মহানন্দা এক্সপ্রেস থেকে খুব সামান্যই কিছু লোক নামল বোধহয়, তারাও যে যার মত উধাও হয়ে গেছে।
“প্ল্যটফর্মে কোথাও বসে থাকার চাইতে বেরিয়ে পরাই ভালো, সাড়ে তিনটে বাজতে চলল, রাজধানি শহরের মূল ষ্টেশন, বাইরে কোন না কোন গাড়ি পেয়ে যাব। এখানে সময় নষ্ট করে লাভ নেই।“ দেবরাজের পিছন পিছন পা ফেলল চিত্রা, ফাঁকা প্ল্যটফর্ম, লাউঞ্জ, ঝাপ ফেলা হুইলারের স্টল আর শুনশান টিকিট কাউন্টার পেরিয়ে স্টেশনের বাইরে বেরিয়ে এলো দেবরাজ আর চিত্রা। প্রিপেড ট্যাক্সির কাউন্টার বন্ধ দেখে আশেপাশে ভালো করে জরিপ করার চেষ্টা করল দেবরাজ, কিন্তু ভাড়া করার মত কোন গাড়ি চোখে পড়ল না। ষ্টেশন চত্বরে কিছু পাওয়া যাবে না বুঝে কিছুটা এগিয়ে বাইরের দিকে একটা অটো স্ট্যান্ডের কাছে উকিঝুকি মারতেই একজন মাঝ বয়েসি লোক একটি অটোর ভিতর থেকে মুখ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, “কাহা জানা হ্যায়?“
চিত্রা এমনিতেই খুব অস্বস্তি বোধ করছিল, এত রাতে একদম অচেনা জায়াগায় এইভাবে দুমদাম রাস্তায় বেরিয়ে আসাটা আদৌ ঠিক হোল কিনা সেটা নিয়েই বিস্তর সংশয় রয়েছে, তার ওপর কোন গাড়িঘোড়া না পেলে একেবারে যা তা পরিস্থিতি। চিত্রা আগেই আপত্তি করেছিল, “ঘণ্টা দেড় দুই প্ল্যটফর্মে কোনভাবে কাটিয়ে দিলেই ভালো হত।“
দেবরাজের সেই অভয় বানী, “এত ভয়ের কি আছে? এটা কি বেগুনকোদোর? এটা পাটনা, রাজধানী শহর, এই সব শহরে রাত হয় না কখনো!“ অটো ওয়ালার সাড়া পেয়ে চিত্রার ধরে প্রাণ এলো।
দেবরাজ বলল, “ভাইয়া ওহ গলি নম্বর দো মে, সেন্ট মার্ক্স একাডেমি কে নাজদিক এক গেস্ট হাউস হ্যায়, ওহ হি জানা হ্যায়। শুনা হ্যায় কি ইহাসে জাদা দূর নেহি।“
অটো ওয়ালা কিছু ভাবল, তারপর বলল, “ওহ ইলাকা থোড়া দূর হ্যায় লেকিন চলে জায়েঙ্গে, উঠিয়ে।“ দেবরাজকে কিছু বলার সুযোগ দিল না চিত্রা, নিজেই ব্যাগ দুটো চটপট তুলে নিয়ে উঠে বসল। দেবরাজ ভাড়া জিজ্ঞেস করার কথা ভেবেও আর জিজ্ঞেস করতে সাহস করল না। এত রাতে কিছু একটা পাওয়া গেছে এই ঢের, আগে গেস্ট হাউসে পৌছতে পারলে তারপর দরদাম যা হোক করা যাবে। ফুরফুরে হাওয়ায় রাতের পাটনা শহরে ঘোরার অভিজ্ঞতা টুকুই যা বাকি ছিল। একে একে নিউ মার্কেট ষ্টেশন রোড, ডাইনে বায়ে বেশ কিছু অভিজাত হোটেল পেরিয়ে অটো এগিয়ে চলল। রাতের কোলকাতা দেবরাজের চেনা, অফুরন্ত জীবন আর কোলাহল মুখরতা তিলোত্তমা কোলকাতার দিন রাতের বিভাজন ঘুচিয়ে দিয়েছে। দুটোই রাজধানী শহর কিন্তু কত তফাৎ, আজন্মকাল কোলকাতায় বেড়ে ওঠা দেবরাজের চোখে এই শহর কোলকাতার থেকে অনেকই আলাদা মনে হোল। ধীরে ধীরে দাস মার্কেট, মহাবীর মার্কেট পেড়িয়ে অলি গলি ঘুরে এগিয়ে চলা। আধ ঘণ্টা রাস্তায় রাস্তায় ঘোরার পর দেবরাজ জিজ্ঞেস করল, “রাস্তা মালুম হ্যায় না? ইতনা দূর হোগা কেয়া? “
অটো ওয়ালা বলল, “হা জি, থোড়া গড়বড় তো হ্যায়, লেকিন পহচ জায়েঙ্গে।“ চিত্রা আবার প্রমাদ গুনল। দেবরাজের ওপর রাগ করেও লাভ নেই, বেচারা কি বা করত! আরও মিনিট চল্লিশেক এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করে অটো ওয়ালা হঠাৎ রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ল, পিছনে ঘুরে বলল, “লাগতা হ্যায়, ব্যাটারি খতম হো গায়া, অউর নেহি জায়েগা।“ দেবরাজের মাথায় আগুন জ্বলে উঠল, ব্যাটা ইচ্ছে করেই বোধহয় এদিক সেদিক ঘুরিয়ে মোটা টাকা চাইবে ঠিক করেছে। কিন্তু অচেনা জায়গায় এখন কি করবে ঠিক করতে পারল না, শান্ত ভাবে বলল, “তো ফির? হাম কেয়া করে? ইতনি রাত কো কাহা যায়? আপ কো আনা নেহি চাহিয়ে থা।“
অটো ওয়ালা গাড়ি থেকে নেমে বলল, “দেখিয়ে, মেরা তবিয়ৎ আচ্ছা নেহি হ্যায়, চেস্ট মে পেন হো রাহা হ্যায়, আগার কুছ হো গিয়া তো আপ কো প্রবলেম হো জায়গা। জো দেনা হ্যায় দে কে ছোড় দিজিয়ে।“ এইরকম পরিস্থিতিতে জীবনে কোনদিন পড়েনি দেবরাজ। কি করা উচিৎ সেটা ভাবার মত সময় টুকুও নেই যেন, সত্যি যদি কিছু একটা হয়ে যায় তো সে আর এক কেলেঙ্কারি। তার থেকে কিছু দিয়ে বিদেয় করা ভালো। ঘড়িতে প্রায় চারটে, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আলো ফুটবে, ভয়ের কিছু নেই, এর মধ্যে অন্য কোন ব্যাবস্থা হয়ে যাবে ঠিক। নিশ্চই গেস্ট হাউসের কাছাকাছি চলেই এসেছে এতক্ষণে। দেবরাজ দুটো একশো টাকার নোট এগিয়ে দিল। সেটা পকেটে পুরে অটো ওয়ালা বেরিয়ে গেল হুশ করে। রাস্তার এক পাশে লাগেজ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না। রাস্তার দুধারে দোকান পাট দেখে মনে হোল এটা কোন মার্কেট প্লেস হবে। একটি বড় দোকানের সামনে একটা বাধানো জায়গার ওপর জুবুথুবু হয়ে বসল চিত্রা। কিংকর্তব্যবিমুঢ় দেবরাজ চিত্রার পাশে কোনক্রমে কোমরটা ঠেকিয়ে ধপ করে বসে পড়ল, ষ্টেশন থেকে চটজলদি বেরিয়ে এই পরিণতি হবে সেটা ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি ও। আশেপাশে কোনও মানুষের দেখা নেই যে কোন সাহায্য চাওয়া যাবে। মিনিট কয়েক পর, একটা মটর সাইকেল আসার শব্দ শুনে দেবরাজ উঠে দাঁড়াল, রাস্তার কাছে এসে দাঁড়াতেই দেখল চারটে ছেলে মোটর সাইকেল নিয়ে আসছে। দেবরাজকে দেখে চারজন দাঁড়িয়ে পড়ল রাস্তার মাঝ বরাবর। চিত্রা প্রমাদ গুনল; মুহূর্তে মাথার ভিতর ধাক্কা দিল শব্দ গুলো, নির্ভয়া, হাথরস আরও কত কি। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ঠাণ্ডা না থাকলেও চিত্রা গায়ে একটা হাল্কা চাদর রেখেছিল, সেটাকেই আরও একটু ভালো করে জড়িয়ে নিল শরীরে। আটচল্লিশ বসন্ত পেড়িয়ে এসেও চিত্রার স্লিম চেহারার আনাচে কানাচে যৌবনের হাতছানি স্পষ্ট; চিত্রা জানে, টানটান নির্মেদ শরীর এখনো ছেলে ছোকরাদের চোখ টানে। মানুষের পাশবিক দিক গুলো যে কখন প্রকট হয়ে ওঠে! দেবরাজের ওপর ভরসা না করে, চিত্রা নিজেও উঠে এলো, ছেলে গুলোর বয়েস তিন্নির মতোই হবে, জড়তা কাটিয়ে জিজ্ঞেস করল, “ক্যান ইউ হেল্প আস? “
একটি ছেলে মোটর সাইকেল থেকে নেমে এসে বলল, “কেয়া হুয়া আন্টি? ইতনি রাত কো আপ ইয়াহা ক্যায়সে? কাহা জানা হ্যায়?” চিত্রা ভাঙা হিন্দিতে বলার চেষ্টা করল, কি ভাবে গেস্ট হাউস যাওয়ার সময় অটো থেকে নেমে পড়তে হয়েছে এখানে। সব শুনে একজন বলল, “আঙ্কেল জি, আপ আইয়ে মেরে সাথ, আপকা গেস্ট হাউস ইয়াহা নাজদিক ই হোগা, বাকি লোক আন্টিকে পাস রহেগা, কোই ডর নেহি।“ দেবরাজ কোন উপায়ন্তর না দেখে ছেলেটির বাইকে উঠে বসল। চিত্রা এমনিতেই ভীত ছিল, এবার সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল, কিন্তু স্বাভাবিক আচরণ করার তাগিদ থেকে বলল, “আমার মেয়ে ঠিক তোমাদেরই বয়েসের, এখন বেঙ্গালুরুতে চাকরি করছে। কিন্তু তোমরা এত রাতে কোথা থেকে ফিরছ? কোথায় থাকো তোমরা?”
বাইক থেকে নেমে আসা ছেলেটা বলল, “আন্টি আমরা চারজন কাছেই একটা মেসে থাকি, আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ি, আর যে আঙ্কেল কে নিয়ে গেল, সেও, বাকি দুজন পাটনা কলেজে। কাল রাতে আমাদের এক বন্ধু এক্সিডেন্ট করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, আমরা রাতে সেখানেই ছিলাম, আপাতত বিপদ কেটেছে, তাই মেসে ফিরছি। চিত্রার মাথা থেকে এতক্ষণে সমস্ত দুশ্চিন্তা উধাও, প্রত্যয় নিয়ে বলল, “ভাগ্যিস তোমাদের সাথে দেখা হোল, জানো আমার মেয়ে বলে আজকালকার ছেলেরা অনেক বেশি সেন্সিবেল, কেয়ারিং, ভাবতে পারবে না আমার ছেলে বন্ধুরা কত ভালো। তোমাদের সঙ্গে আলাপ না হলে সত্যিই জানতে পারতাম না ওর কথা গুলো কতটা ঠিক।“ খানিক পরেই দেবরাজ ফিরল গেস্ট হাউসের হদিস নিয়ে। চিত্রা আর দেবরাজকে মোটর সাইকেলে বসিয়ে ওরা গেস্ট হাউস পর্যন্ত পৌঁছে দিল। ঘড়ির কাটায় তখন প্রায় পৌনে পাঁচটা। আকাশের পূব কোনে তখন হাল্কা আলোর রেখা, সেদিকে তাকিয়ে চিত্রার মন আলোর ছটায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠল; মনে হোল, মানুষ যেদিন মানুষকে বিশ্বাস করা ছেড়ে দেবে, সেদিনই হয়ত মনুষতত্ত্বের মৃত্যু ঘটবে। ভেসে আসা মেঘের মত কোন অজানা আবেগে দুচোখের পাতা ভিজে উঠল। চিত্রাকে অন্যমনস্ক দেখে দেবরাজ গলা খাঁকারি দিল, “চলো, কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়ে নি“।


