বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপধ্যায় ও হাওড়া কালেক্টরেট, ফিরে দেখলেন ড. সমরেন্দ্র নাথ খাঁড়া

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপধ্যায় ও হাওড়া কালেক্টরেট, ফিরে দেখলেন ড. সমরেন্দ্র নাথ খাঁড়া
19 Nov 2023, 01:00 PM

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপধ্যায় ও হাওড়া কালেক্টরেট, ফিরে দেখলেন ড. সমরেন্দ্র নাথ খাঁড়া

                       

ড. সমরেন্দ্র নাথ খাঁড়া

 

বঙ্কিচন্দ্রের জন্ম ১৮৩৮ সালের ২৬শে জুন, (১৩ আষাঢ় ১২৪৫ বঙ্গাব্দ),কাঁঠালপাড়া গ্রাম, নৈহাটি, তৎকালীন ২৪ পরগনা।বঙ্কিমচন্দ্র একজন খ্যাতিমান ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক হলেও,তিনি পরিণত বয়স পর্যন্ত কবিতা লিখেছিলেন।কিন্তু তিনি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হিসাবে বিভিন্ন জেলায় কর্মরত ছিলেন।

   হাওড়া জেলায় বঙ্কিমচন্দ্র প্রথম দফায় ১৪ ফেব্রুয়ারী ১৮৮১ সালে বর্ধমান জেলার কমিশনারের পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হিসাবে কাজে যোগ দেন।বঙ্কিমচন্দ্র জীবনীকার

অমিত্রসুদন ভট্টাচার্য এর মতে বঙ্কিমচন্দ্র হুগলি জেলা থেকে বদলি হয়ে হাওড়ায় আসেন এবং অল্প সময়ের জন্য ৩ সেপ্টেম্বর ১৮৮১ সাল পর্যন্ত ছিলেন।ওনার অফিস ছিল পুরাতন কালেক্টরেট বিল্ডিংয়ের পুরাতন ট্রেজারী বিল্ডিংয়ের প্রথমতলায়। প্রথমে পুরাতন কালেক্টরেট বিল্ডিং যেটা সেখানে লোয়ার অর্ফান স্কুল ছিল। ১৮৪৩ সালে হাওড়া জেলা তৈরী হলে জেলা প্রশাসনিক ও বিচার ব্যবস্থার দপ্তর এখানে ওঠে আসে।

   বঙ্কিমচন্দ্র প্রথম দুমাস কলকাতা থেকেই যাতায়াত করতেন।পরে পঞ্চাননতলা রোডের ২১৮ নম্বরের বাড়িতে ভাড়া নিয়ে উঠে আসেন।এই বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এসেছিলেন।দ্বিতীয় দফায় বঙ্কিমচন্দ্র ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হিসাবে ১৪ ফেব্রুয়ারী ১৮৮৩ সালে আসেন।তার দ্বিতীয় পোস্টিং একটু বেশী ছিল,প্রমোশন পেয়ে তিনি প্রথম শ্রেণীর ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হন।

    তৃতীয় ও শেষবার তিনি ওড়িশার জাজপুর (কটক) থেকে বদলি হয়ে প্রথম শ্রেণীর ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হয়ে ১০ জুলাই ১৮৮৬ সালে হাওড়ায় আসেন।তখনও পঞ্চাননতলা রোডের ওই একই বাড়িতে ওঠেন।এই সময় শ্রীমদ্ভাগবত গীতার বাংলা টীকা লেখা আরম্ভ করেন।সেখানে বসেই তিনি লিখেছিলেন ‘মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত’।

    বহু ঘটনার স্মৃতি কথা হাওড়া জেলা অফিসের সাথে জুড়ে আছে। উল্লেখ করার মতো হলো কালেক্টরেটের অন্য অফিসারদের সাথে দুপুরের খাবার ভাগ করে খাওয়া। মুকুন্দদেব মুখোপাধ্যায়, যিনি নোয়াখালী থেকে হাওড়া কালেক্টরেটে কাজে যোগ দেন; তার মতে বঙ্কিমচন্দ্র ঠিক দুপুর ২ টার সময় তার বাড়িতে বানানো দুপুরের খাবার,সাথে ভীম নাগের সন্দেশ এবং মালদার আম সহকর্মীদের সাথে ভাগ করে খেতেন।মুকুন্দদেব ট্রেজারী বিল্ডিংয়ের নীচের তলার ঘর খুলে দিতেন, যেখানে সবাই মিলে দুপুরের খাবার খেতেন।

              হাওড়া পুরাতন কালেক্টরেট ভবনের সঙ্গে সাহিত্য সম্রাট ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক সম্পর্কের স্মরণে যে ঘরে অফিস করতেন,সেখানে ফলক স্থাপন করা হয় ৯ ই নভেম্বর ২০১৪। উদ্বোধক ছিলেন হাওড়ার সাংসদ প্রসূন ব্যানার্জী, প্রধান অতিথি ছিলেন হাওড়ার জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাশ।

   স্মৃতির সরণিতে কালেক্টরেটের সামনের রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চ্যাটার্জী রোড।

 পড়াশোনা শেষ করার পর তিনি যশোর শহরে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টরের পদে ১৮৫৮ সালের ৭ আগস্ট চাকরি পান।যশোরে কয়েক বছর কাজ করার পর ১৮৬০ সালে ৯ ফেব্রুয়ারি তিনি মেদিনীপুরের নেগুয়ায় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হিসাবে যোগদান করেন।তারপর খুলনাতে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হিসাবে ১৮৬০ সালের, ৯ নভেম্বর যোগদান করেন।বারুইপুর,তৎকালীন ২৪ পরগনায় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর  হিসাবে যোগদান করেন  ১৮৬৪ সালের,৫ মার্চ।তিনি মুর্শিদাবাদ জেলায় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর উচ্চতর কার্যভার গ্রহণ করেন ১৮৬৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর।১৮৭১ সালে ১০ জুন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টরের পদ থেকে প্রমোশন পেয়ে তিনি মুর্শিদাবাদের কালেক্টর হন।১৮৭৪ খ্রীষ্টাব্দে বঙ্কিমচন্দ্র বারাসাত বদলি হন ও তারপর মালদহে বদলি হন। ৪ মে,১৮৭৪ সাল থেকে ২৫ অক্টোবর ,১৮৭৪ মালদার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর ছিলেন।১৮৭৫ খ্রীষ্টাব্দে তিনি হুগলীতে বদলি হন। কলিকাতায় বেঙ্গল গভর্নমেন্টের অ্যাসিটেন্ট সেক্রেটারি হন।আলিপুরে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হন ১৮৮২ সালের,২৬ জানুয়ারি।ওড়িশার জাজপুরে (কটক) ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হন ১৮৮৩ সালের,৮ আগস্ট। এখান থেকে হাওড়ায় দ্বিতীয়বারের জন্য ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হন ১৮৮৩ সালের, ১৪ ফেব্রুয়ারি।১৮৮৪ খ্রীষ্টাব্দে যশোরের শিলাইদহতে বদলি হন।ঝিনাইদহে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হন ১৮৮৫ সালের,১জুলাই।

   সুদীর্ঘ তেইশ বছর বিভিন্ন সরকারী পদে অধিষ্ঠিত থেকে ১৪ ই সেপ্টেম্বর ১৮৯১ সালে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় চাকরি জীবন থেকে অবসরগ্রহণ করেন।

     হাওড়ার পঞ্চাননতলা রোডে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি হেরিটেজ ঘোষণায় হাওড়া পৌরসভার উদ্যোগ প্রশংসনীয়।

                     

তথ্য সূত্র:

১)The Telegraph Online:Published 27.06.14,- Anupam Mukherjee

২) বঙ্কিমচন্দ্রজীবনী - অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য।

২)মৃত্যুঘণ্টা শোনার অপেক্ষায় আরও এক হেরিটেজ: দেবাশিস দাশ

৩)সাহিত্য সম্রাটের অজানা গল্প :তাপতী বসু

৪)বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর কর্মজীবন

‘কিছু টুকরো ঘটনায় বঙ্কিমচন্দ্র’

৫) বাঙালির গ্রন্থাগার।

৬)বঙ্কিমচন্দ্র, সুনির্মল বসু, আনন্দ পাবলিশার্স (১৯৯৬)।

 

                          --------------------

Mailing List