বঙ্গভঙ্গ, রবীন্দ্রনাথ ও রাখি বন্ধন উৎসব

বঙ্গভঙ্গ, রবীন্দ্রনাথ ও রাখি বন্ধন উৎসব
আনফোল্ড বাংলা প্রতিবেদনঃ বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতায় রবীন্দ্রনাথের রাখি বন্ধনে ছিল সম্প্রীতির বার্তা! আজও প্রাসঙ্গিক সেই ঐক্যের উৎসব। শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে ভাইয়ের হাতে বোনেরা রাখি বেঁধে দেন। মূলত ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় এই রীতি চলে আসছে। অবাঙালিদের কাছে এই রাখি বন্ধন রক্ষা বন্ধন নামেও পরিচিত। তবে বাঙালিদের কাছে রাখি শুধুই ভাই বোনের মধ্যে আবদ্ধ নয়। ধর্মীয় ও সামাজিক গণ্ডি পেরিয়ে রাখিকে রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও জায়গা দিয়েছে বাঙালিই। বাঙালির এই রাখি বন্ধনের প্রসঙ্গে উঠে আসবেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম।
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করতে রাখিকে এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সে বছর ২০ জুলাই ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গের কথা ঘোষণা করে। জানানো হয় যে, এই আইন ১৯০৫-এরই ১৬ অক্টোবর কার্যকর হবে, বাংলায় ৩০ আশ্বিন। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সেদিন বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতায় সকল মানুষ মিলিত হয়। ঠিক হয় যে, ওই দিন বাংলার মানুষ পরস্পরের হাতে বেঁধে দেবেন হলুদ সূতো। এই দিনটিকে মিলন দিবস হিসেবে পালন করা হয়। কবিগুরু এই দিনটিকে রাখি বন্ধন উৎসব পালন করার ডাক দেন। বাংলায় হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌভ্রাতৃত্বকে ফুটিয়ে তুলতেই এই উদ্যোগ নেন তিনি।
তবে সেই রাখি বন্ধন উৎসব শ্রাবণ মাসে বা পূর্ণিমা, কোনওটাতেই হয়নি। শুধু বোনেরা ভাইদের নয়, এই দিন প্রত্যেক মানুষের ভেতর একতাই ছিল রাখি বন্ধনের মূল বিষয়। এই রাখিবন্ধন উৎসবে সম্প্রীতি সেদিন যেভাবে জায়গা করে নিয়েছিল, তা আজকের দিনেও প্রাসঙ্গিক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাখি বন্ধন উৎসব নিয়েই গান লিখেছিলেন, 'বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল। পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, হে ভগবান'।
আজও কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় ৩০ আশ্বিন রাখি বন্ধন উৎসব পালিত হয়। তবে এই রাখির সঙ্গে শ্রাবণ মাসের রাখি পূর্ণিমার কোনও সম্পর্ক নেই। এই রাখি বন্ধনের মূল উদ্দেশ্যই ছিল মানবিকতা রক্ষা করা, ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও একতা বজায় রাখা।


