বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো, বাবরি রায় নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ

বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো, বাবরি রায় নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ
বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো। একটি শিশু ভূমিষ্ট হওয়ার পর হাঁটি হাঁটি পা পা করতে করতে পূর্ণবয়সী যুবায় পরিণত হওয়ার লম্বা রাস্তা পেরলো। ২৮ বছর ধরে মামলা চলার পর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের রায় বেরলো। কিন্তু এই রায় কোথাও যেন ১৩০ কোটি ভারতবাসীকে একটা বড়সড় প্রশ্নচিহ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
ভারতবর্ষ সর্বধর্ম সমন্বয়ের পুন্যভূমি। কিন্তু সেই ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোতে কী কোথাও আঘাত। ২০১৭ সালে বলা হয়েছিল 'Calculated act'। কিন্তু কারা এর মূল্যায়ণ করলেন? বাবরি ধ্বংস কি করে হল লম্বা সময় অতিক্রান্তকারী ঐ যুবা জানতেও পারলেন না। বাবরি ধ্বংসের প্রকৃত সত্যটা কালের গহ্বরে কোথায় হারিয়ে গেল! অভিযুক্তরা বেকসুর খালাস। ৩২জনই মুক্ত। আদালতের পর্যবেক্ষণ, বাবরি ধ্বংসের ভিডিও বিকৃত করা হয়েছে। কোনও যড়যন্ত্র ছিল না। আচমকা ঘটেছিল বাবরি ধ্বংস। যে ছবি তোলা হয়েছিল সেগুলোর নেগেটিভ সিবিআইয়ের কাছে নেই। বাবরি ধ্বংসের ঘটনা নেতারা আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন। বাবরি ভেঙ্গেছিল উন্মত্ত জনতা। এ ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত ছিল না। রায়ের পর আদালতের বাইরে শোনা যায় জয় শ্রীরাম ধ্বনি। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর তথাকথিত অজ্ঞাত পরিচয় করসেবকদের হাতে ধ্বংস হয়েছিল ঐ স্থাপত্য। আর তারপর সারা ভারতের ৩৬০টি শহর অশান্তির স্ফুলিঙ্গে অশান্ত হয়ে উঠেছিল। তাই একে সত্যিই কী ন্যায়ের জয় বলে? এ প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। যদিও যোগী আদিত্যনাথ বলছেন নায়ের জয়। গেরুয়া শিবিরে চলছে অভিনন্দনের বন্যা। মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড এই রায়ে রীতিমতো অখুশি। তারা উচ্চ আদালতে এই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন জানাতে চলেছে। হ্যাঁ, একে ঘিরে বিতর্কের ঝড় উঠবে। রাজনীতি হবে। কিন্তু মানব সভ্যতার আকাশ থেকে কী একটা তারা খসে গেল না। ধর্ম-অধর্মের লুকোচুরিকে বাদ দিয়েই বলতে হয়, ১৫২৮ সালের এক স্থাপত্য। এর ৪২১ বছর পর হঠাৎই নতুন কিছু আবিষ্কৃত হল। জন্ম নিল নতুন বিতর্কের। সংঘর্ষ, দাঙ্গা, নিত্যনতুন গল্প, নিত্যনতুন গল্প, মামলা চলতে থাকল বছরের পর বছর ধরে। একটু পিছনে তাকালে বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরোর বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। বাবরি ধ্বংসের পর দুটো এফআইআরের একটিতে এল কে আদবানি, বিনয় কাটিয়ার, কল্যাণ সিং, উমা ভারতী, মূরলী মনোহর যোশীদের বিরুদ্ধে হয়েছিল। ২০০৩ সালে অভিযুক্তদের তালিকা থেকে রায়বেরেলির এক আদালত আদবানিকে মুক্তি দেয়। ২০০৫-এ ঐ নির্দেশ খারিজ। ২০১৫-এ সিবিআই-এর আবেদনে আদবানি, কল্যাণ সিং, মূরলী মনোহর যোশী, উমা ভারতীদের সুপ্রিম কোর্টের নোটিশ দেওয়া হয়। দু'বছর পর আদবানি-সহ ২১ জনকে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ মামলায় সুপ্রিম কোর্ট যুক্ত করার নির্দেশ দেয়। তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেকটা জল গড়িয়ে গেল। অবশেষে এঁরা সহ ৩২ জনই বেকসুর খালাস। যাঁরা এই মুক্তির স্বাদ পেলেন তাঁরা এখন আনন্দ করছেন। আদালতের বিচারের ওপর কারও কিছু বলার থাকে না। তাই এখন বিচার পেতে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা জানিয়েছে মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড।


