এক সময় মহিষ বলিও হত, পরে বন্ধ করা হয় বলি প্রথা, গোবরডাঙ্গা রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয় এখনও প্রচীন ঐতিহ্যের গরিমা  অটুট

এক সময় মহিষ বলিও হত, পরে বন্ধ করা হয় বলি প্রথা, গোবরডাঙ্গা রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয় এখনও প্রচীন ঐতিহ্যের গরিমা  অটুট
14 Sep 2022, 01:40 PM

এক সময় মহিষ বলিও হত, পরে বন্ধ করা হয় বলি প্রথা, গোবরডাঙ্গা রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয় এখনও প্রচীন ঐতিহ্যের গরিমা  অটুট

 

আনফোল্ড বাংলা প্রতিবেদন, বারাসাতঃ কথিত আছে টাকির জমিদারদের লাঠি, আর গোবরডাঙার জমিদারদের হাতি একদা ঐতিহ্য বহন করতো। অবিভক্ত উত্তর ২৪ পরগনা জেলার এই দুই জমিদারই ছিল খুবই বিত্তশালী ও প্রজাবৎসল। তবে তাদের অত্যাচারের কাহিনীও কিছু শোনা যায়। একদা প্রাচীন ঐতিহ্যে সেই গোবরডাঙ্গা জমিদার বাড়ির জৌলুষ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমলেও প্রাচীন গরিমায় প্রথা ও আচার মেনেই আজও পূজিত হয় ডাকের সাজের এক চালার মহামায়া। জমিদার বাড়ির উত্তরসূরীদের দাবি, এবছরই তাদের এখানকার দূর্গাপূজা তিনশো বছরে পড়লো। তবে মূল পরিবারের প্রাচীন ইতিহাস ও অন্যান্য জায়গার হিসেব ধরলে পরিবারের দুর্গাপূজা ৬০০ বছরের পুরনো হবে বলে দাবি পরিবারের।

 

বর্তমান উত্তরসূরী দুই ভাই স্বপনপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় ও অঞ্জন মুখোপাধ্যায় জানান, তারা ছিলেন মূলত উত্তর প্রদেশের লখনৌ এর কন্নৌড় এলাকার বাসিন্দা। সেখান থেকে নানা জায়গা ঘুরে তারা আস্তানা গাড়েন অধুনা বাংলাদেশের যশোরের সতসা সাগরদাড়িতে। সেখানে কয়েকশো বছর তারা বসবাস করেন। সেখান থেকেই শুরু হয় তাদের পারিবারিক দুর্গাপূজা। পরবর্তী সময়ে তাদের এক বংশধর গঙ্গাস্নানে এসে ইছাপুরের চৌধুরী পরিবারের সঙ্গে বৈবাহিক সুত্রে আবদ্ধ হয়ে গোবরডাঙ্গার একটি অংশ জমিদারি সুত্রে পান। তাঁর সময়ের শেষদিকে তারই উত্তরসূরী খেলারাম মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে শুরু হয় গোবরডাঙ্গার জমিদার বাড়িতে মহামায়ার আরাধনা। সেই থেকেই বংশপরম্পরায় পূজা হয়ে আসছে এখানে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আজ আর নেই সেই জমিদারী, নেই বিলাসিতা, নেই সেই জৌলুষও। কিন্তু এই জমিদার বাড়ির প্রত্যেকটি ইঁটে এখনো লেগে আছে প্রাচীন জমিদারী ও ঐতিহ্যবাহী পূজার গন্ধ। প্রথমদিকে শাক্তমতে শুরু হয়েছিল দুর্গাপূজা। সেসময়ে মহিষ বলি হত। পরে বৈদিক মতে পুজা শুরু হয়। তখন পাঁঠা, ভেড়া, আখ, চালকুমড়ো বলি দেওয়া হত। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সাল থেকে একেবারেই বন্ধ করে দেওয়া হয় বলি প্রথা। তবে অন্যান্য আচার ও প্রথা মেনে আজও দশভুজার আরাধনা করা হয়।

জন্মাষ্টমীর দিন কাঠামো পূজা দিয়ে শুরু হয় মহামায়ার আরাধনা। মহালয়ার দিন প্রতিমায় খড়ি মাটির প্রলেপ পড়ে। পঞ্চমীর দিন বেদিতে প্রতিমা প্রতিষ্ঠিত করা হয়।প্রতিপাদ থেকেই ঠাকুর দালানে ঘট বসিয়ে পূজা শুরু হয়। পূজা ঘিরে আগের মতো জৌলুশ এখন এখানে না থাকলেও আনন্দের এতটুকুও ভাঁটা পড়েনি পূজার দিনগুলিতে। ইতিহাস বিজারিত এই জনিদারবাড়ির পূজা দেখতে পূজার কটাদিনে হাজির হন দূরদূরান্ত থেকে বহু মানুষ। যেন পুজোর এই কটা দিনের অপেক্ষায় একটি বছরের অপেক্ষায় থাকে গোবরডাঙ্গা জমিদার বাড়ির প্রতিটি ইট, কাঠ, দেওয়াল সহ প্রাচীন দূর্গাদালান।

Mailing List