এও এক জীবন/ ধারাবাহিক (চার)

এও এক জীবন/ ধারাবাহিক (চার)
সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সকাল বেলায় এই সময়টাতে বেশ ফাঁকাই থাকে বাস। বসতে জায়গা পাওয়া যায়; কিন্তু, আজ একটু অন্যরকম হলো... দেরী করে আসার জন্য তুলনামূলক বেশি ভিড় আজ। তবে অসুবিধা হলো না, একদম পেছনের দিকে জানালার ধারে বসার জায়গা পেয়ে গেলাম।
যে লোকদুটো আমাকে ঠেস দিয়ে কথা বলছিল, তারা যথারীতি লেডিস সিটেই গিয়ে বসল। এক শ্রেণীর পুরুষমানুষ আছে, যারা মহিলাদের আদ্যপ্রান্ত দোষ-ত্রুটি ধরবে, কিন্তু বাসে উঠে তারাই একচেটিয়া ওই মহিলাদের সাথেই অসভ্যতা করে যাবে; তাদের সখ বা হবি হল মহিলাদের দাঁড়ানোর জায়গায় গিয়ে দাঁড়ানো। গায়ে গা দিয়ে "একটুকু ছোঁয়া লাগে" টাইপের আচরণ করা।
এই তো ওই তথাকথিত পুরুষের চরিত্র--- এরাই হয়তো আবার রাতের অন্ধকারে কানাগলির মহিলাদের কাছে গিয়ে ভালোবাসার ভাগ বসাতে যায়।
একটা কথা ওরা জানে না--- তারা যখন পতিতালয়ে গিয়ে অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত হচ্ছে, তখন কিন্তু সেই পুরুষ তার পূণ্যসঞ্চয় ক্ষয় করে পাপের ভাগিদার হয়ে উঠছে। সে ওই গণিকাগৃহ থেকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসে পাপ; এইভাবেই তৎকালীন পণ্ডিতদের চিন্তা-ভাবনা অনুযায়ী বহুপুরুষের পূণ্য-সঞ্চয় যা হয়ে থাকে বেশ্যালয়ের দ্বার প্রান্তে--- সেই দ্বারের মাটিই দরকার হয় মা দূর্গার প্রতিমা তৈরী করতে।
শাস্ত্র বলছেন, দেবী দূর্গার স্নান করানোর সময়েও এই বেশ্বাদ্বারমৃত্তিকা ছাড়াও আরো এগারোটি প্রকার মাটি প্রয়োজন হয়। সেগুলি যথাক্রমে: রাজবাড়ির সদর দরজার মাটি, চৌমাথার মোড়ের মাটি, গঙ্গা মাটি, ষাঁড়ের শিঙ দ্বারা তোলা মাটি, নদীর দুই কূলের মাটি, সর্বতীর্থের মাটি, উইঢিপির মাটি, সাগরের মাটি, বুনো শুয়োরের দাঁতে লেগে থাকা মাটি, গোষ্ঠের ( যেখানে গরু চরে) মাটি এবং দেবালয়ের প্রবেশ-দ্বারের মাটি।
তবে, একটা কথা না বললেই নয়, নারী কিন্তু কখনও অপবিত্র হয় না। পুরুষই উল্টে বিপথগামী হয়ে পদস্খলন করে পাপের ভাগিদার হয়। শখ করে কোনো নারীই গণিকাবৃত্তি বেছে নেন না--- পুরুষই বা সমাজ-ই বাধ্য করে তাকে গণিকার জীবিকা বেছে নিতে।
জগতে যতই সমস্যা হয়েছে, নারীর ওপরেই যখন আঘাত এসেছে, তখন জীবনের টানে, পেটের টানে বোধহয় পুরুষদের বিনোদনের সস্তা সঙ্গী হয়ে অর্থের বিনিময়ে জীবন-ধারনের আর কোনো সহজলভ্য পেশা বোধহয় হয় না বলেই আজকের দিনেও এই বেশ্যাবৃত্তি নির্দ্বিধায় চলে আসছে...
আর তাই দেবী দূর্গাও ওই অসহায় নারী জাতির স্পর্শের মাটি দিয়েই নিজের মৃন্ময়ী মূর্তি গড়ে তোলেন।
---"টিকিট..." বাস কন্ডাক্টর সামনে হাজির।
বাস্তবের মাটিতে নেমে আসি; পকেটে হাত দিয়ে নির্দিষ্ট পয়সা দিয়ে ভাড়া কেটে নিই।
(ক্রমশঃ)


