সফল বাম-ব্রিগেডেও থেকে গেল ছোট্ট কাঁটা

সফল বাম-ব্রিগেডেও থেকে গেল ছোট্ট একটা কাঁটা
সুমন ঘোষ
আগামী দু'মাস বিধানসভা নির্বাচন আর আবহাওয়া কার্যত: একে অপরকে টক্কর দেবে। কার উত্তাপ বেশি? আবহাওয়া না নির্বাচনের? প্রচার থেকে রেজাল্ট, টানটান উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকবে আগামী দু’মাসের এই হাইপ্রোফাইল লড়াইয়ে।
মোদি বনাম মমতা। এমনটাই প্রচারের হাজার ওয়াটের আলোয় নির্ধারিত হয়ে চলেছে। ভোটের দিন ঘোষণার আগেই রাজ্যে পৌঁছে গিয়েছিল আধা সেনা। এবার সেই সংখ্যা বাড়ছে। জোট বেঁধেছে বাম-কংগ্রেস। এর আগে গণতন্ত্রের উৎসবের এই চেহারা দেখেনি বাংলা। একেবারে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই হবে, থুড়ি 'খেলা' হবে। ২০১১ বা ২০১৬, তৃণমূলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে তেমন কোনও চ্যালেঞ্জ ছিল না। ২০১১-তে খাতা খুলতে না পারলেও ২০১৬ সালে গেরুয়া শিবিরের বিধায়ক সংখ্যা ছিলেন ৩ জন। কিন্তু এবার গেরুয়া বাহিনী ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে শাসক তৃণমূলের।
২০১৯ -এর লোকসভা ভোটে বিজেপি বাংলা থেকে জিতে নেয় ১৮টি আসন। ভোট শতাংশ বেড়ে পৌঁছে যায় ৪০.৬৪ শতাংশে। অন্যদিকে ক্রমাগত রক্তক্ষরণ হতে থাকা বাম-কংগ্রেস জোট রবিবাসরীয় ব্রিগেড থেকে কিছুটা হলেও অক্সিজেন পেলো কী? এর উত্তর পেতে হলে ২মে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু বাম-কংগ্রেস ও ইণ্ডিয়ান সেক্যূলার ফ্রন্টের মিলিজুলি জোটের সভা অন্ততঃ দৌড়ে টিকে রইল বলা যেতেই পারে। রাজ্য রাজনীতির এমন এক সন্ধিক্ষণে আব্বাসের হাত ধরা ‘ঐতিহাসিক অপরাধ’। বিতর্ক এভাবেই দানা বাঁধছে। সংস্কারপন্থীদের ব্যাখ্যা, আইএফএস ‘সাম্প্রদায়িক’ তাস খেলতে ‘অভ্যস্ত’। তাই এমন দলের সঙ্গে হাত মেলানোর অর্থ বামেদের গায়েও ‘সাম্প্রদায়িকতা’র তকমা লাগার সম্ভাবনা। সেক্যুলার ফ্রন্টের আব্বাস সিদ্দিকি কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে সমান্তরালভাবে সুর চড়িয়েছেন। একইসঙ্গে রবিবারের সমাবেশে দেশ থেকে বিজেপিকে উৎখাতের আহ্বানও জানিয়েছেন আব্বাস। আইএসএফ-এর ওই নেতা যখন মঞ্চ থেকে একের পর এক ঝাঁঝালো মন্তব্য করছেন তখন রীতিমতো গর্জন শুরু করেছে ব্রিগেডের জনতা। যার কিছুটা ঝলক পাওয়া গিয়েছে সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম, সিপিএম নেত্রী দেবলীনা হেমব্রমের বক্তব্যে। সবমিলিয়ে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আঁচ আগামীদিনে যে গনগনে হয়ে উঠতে চলেছে তার ইঙ্গিত টের পাওয়া যাচ্ছে।
ক্ষমতা থেকে যাওয়ার দীর্ঘদিন পর বামফ্রন্ট একটা ব্রিগেড সফল করেছে। এত মানুষের সমাবেশে বামফ্রন্ট নেতৃত্ব যে খুশি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু বামফ্রন্ট নেতৃত্ব কেন, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী থেকে জোটে নতুন যোগ দেওয়া আব্বাসও খুশি। এত আনন্দের মধ্যেও সুর কাটল। আব্বাস সিদ্দিকীর বক্তব্যেই। অধীরবাবু তা ম্যানেজ করার চেষ্টা করলেও, কতটা হয়েছে তা বলা কঠিন। শুধু এটুকুর জন্যই হয়তো তৃণমূল-বিজেপি – দুই প্রধান প্রতিপক্ষের আওয়াজের কাছে সফল বাম ব্রিগেড কিছুটা হয়তো ম্লান হল।


